Advertisement
Advertisement

বাঁদরের নামে থানায় দায়ের এফআইআর! চক্ষু ছানাবড়া পুলিশের

ডুয়ার্সে বেনজির ঘটনা৷

FIR against monkey in Dooars
Published by: Kumaresh Halder
  • Posted:November 23, 2018 11:39 am
  • Updated:November 23, 2018 11:39 am  

শান্তনু কর, জলপাইগুড়ি: মোটুরাম, গব্বর, ছোটা হাতি। এলাকার তিন দুষ্কৃতী। তাদের দৌরাত্ম্যে নাজেহাল দশা বাসিন্দাদের। শেষমেশ তাদের হাত থেকে রেহাই পেতে পুলিশের দ্বারস্থ হলেন বাসিন্দারা। কিন্তু তাতেও বিশেষ সুরাহা হল না৷ কারণ আইনও তেমন কোনও সাহায্য করতে পারল না। অবস্থা আরও জট পাকল৷ কিছুদিন আগেই ডুয়ার্সের গরুমারা অভয়ারণ্য সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দারা পুলিশের কাছে গিয়ে হাজির হন। ওই তিন দুষ্কৃতীর বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে। জানান, অবিলম্বে তাদের গ্রেপ্তার করার জন্য। কারণ তাদের ‘দৌরাত্ম্যে আর পারা যাচ্ছে না।’ কথাটা শুনে একেবারে ‘থ’ হয়ে যান ক্রান্তি ফাঁড়ির পুলিশ অফিসার। কারণ এই নামে তো কোনও দুষ্কৃতীর নামই তিনি শোনেননি এতদিন!

[সৌদি আরবে মৃত্যু, ১৩ দিন পর শ্রমিকের দেহ ফিরল নদিয়ার বাড়িতে]

তার উপর একেবারে নাম ধরে অ্যারেস্ট করতে বলছেন এক সাধারণ কৃষক! শুধু অ্যারেস্ট নয়, একেবারে চরম শাস্তিরও দাবি করছেন! এফআইআর করতে গিয়ে জানতে চাইলেন ‘ডিটেইলস’। যা শুনলেন, তাতে চোখ ছানাবড়া অবস্থা তাবড় পুলিশ অফিসারদের। এই মোটুরাম,গব্বররা আসলে বাঁদর। একটা সময় মায়ায় পড়ে এদের প্রশ্রয় দিয়েছিলেন ডুয়ার্সের গরুমারা জাতীয় উদ্যান সংলগ্ন পুর্ব লাটাগুড়ির স্টেশন পাড়ার বাসিন্দারা। কিন্তু সেই আদরে যে তাদের বাঁদরামি এতটা বেড়ে যাবে ভাবেননি কেউই। এখন বাঁদরামিতে অতিষ্ঠ হয়ে থানায় গিয়ে রীতিমতো লিখিত অভিযোগ দায়ের করলেন এক ব্যক্তি। সেই ধীরেন ওরাওঁ এর দাবি, “ধরে বেঁধে চরম শাস্তি দিতে হবে মোটুরাম, গব্বর, ছোটা হাতিদের।”

Advertisement

কিন্তু সত্যিই কি তেমন কিছু করা যায়? গ্রেপ্তার কি করা যায় এই প্রাণীদের? ভারতীয় দণ্ডবিধি বা আইপিসি-র সমস্ত আইনই কেবলমাত্র মানুষের উপর প্রযোজ্য। মানুষ ছাড়া অন্যান্য প্রাণীদের জন্য বন্যপ্রাণী আইনে বনকর্মীদের সাহায্যে বিশেষভাবে তাদের আটক করে অভয়ারণ্যে ছেড়ে আসাই বিধেয়। এ ক্ষেত্রে থানার খুব একটা কিছু করার নেই। বাধ্য হয়ে বনদপ্তরের দ্বারস্থ হয়েছেন পুলিশকর্তারা। মোটুরামদের ক্ষেত্রেও তেমনটাই কি হবে? পেশায় দিনমজুর ধীরেনবাবু। ছিটেবেড়ার বাড়ি। দিন আনি দিন খাই অবস্থা। ধীরেনবাবু জানান, “প্রথম প্রথম ভালই লাগত। বাড়ির সামনে রাস্তায় ঘোরাঘুরি করত। গাছ থেকে গাছে লাফিয়ে বেড়াত। মায়াও পড়ে গিয়েছিল। সাধ করে নামও রেখেছিলাম৷” কোনও সমস্যাই ছিল না। সমস্যা তৈরি হয়েছে সম্প্রতি। রাস্তায় ঘুরে বেড়ানো গব্বররা এখন বেড়া ভেঙে ঢুকে পড়ছে ঘরে। থালা-বাটি ছড়িয়ে ছিটিয়ে কেড়েকুড়ে খেয়ে নিচ্ছে খাবার। লাটাগুড়ির বাসিন্দাদের বক্তব্য, গব্বর, ছোটা হাতিরা এখন আর হাতেগোনা কয়েকজন নয়। রীতিমতো দলবল নিয়েই ঢুকছে লাটাগুড়িতে। সংখ্যায় কখনও কখনও এক থেকে দেড়শো জনও হামলা চালাচ্ছে। ফলে প্রবল সঙ্কটে পড়ছেন দিন আনি দিন খাই মানুষগুলি। ধীরেন ওরাওঁ জানান, বনদপ্তরকে বলে কোনও কাজ হয়নি। তাই বাধ্য হয়ে মোটুরাম, গব্বর, ছোটা হাতিদের শায়েস্তা করতে পুলিশের সাহায্য চেয়েছেন তিনি।

[ইলেকট্রিক শক দিয়ে মাছ শিকার, ডুয়ার্সে বিপন্ন নদীর বাস্তুতন্ত্র]

আইন মোতাবেক পুলিশ কখনওই বাঁদরের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ গ্রহণ করতে পারে না। কারণ ভারতীয় দণ্ডবিধিতে তার কোনও সংস্থান নেই। কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দাদের ক্ষোভ প্রশমন করতে সাগরে বালির বাঁধ দিতেই আপাতত এই অভিযোগ গ্রহণ করেছে পুলিশ। তবে ক্রান্তি ফাঁড়ির ওসি খেশাং লামা জানান, বাঁদর যেহেতু বন্যপ্রাণী, তাই অভিযোগ পেয়েই বিষয়টি বনদপ্তরের নজরে এনেছেন তিনি। গরুমারা বন্যপ্রাণী বিভাগের আধিকারিক নিশা গোস্বামী জানান, বিষয়টি নিয়ে তাঁরাও চিন্তিত। এক্ষেত্রে কী পদক্ষেপ করা যায় সে ব্যাপারে ভাবনাচিন্তা করছেন তাঁরা। তবে ফল কবে বা কী মিলবে তা এখনও বিশ বাঁও জলে।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement