শুভময় মণ্ডল, বারাকপুর: দল বদলে বড়সড় ইনাম মিললেও, লক্ষ্যভেদটা বোধহয় হল না৷ পরীক্ষার দিন জয়ের অঙ্ক কঠিন বুঝতে পেরে আত্মবিশ্বাসে চিড় ধরল৷ আরও নার্ভাস হয়ে, উপস্থিত বুদ্ধি হারিয়ে দিনভর ছুটোছুটি করে শক্তিক্ষয় করলেন হেভিওয়েট প্রার্থী৷ কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হল না৷ এবারের ভোট পরীক্ষার ভিতটাই যে কাঁচা৷ তাই বিজয়রথের চাকা বসে যাচ্ছে বারবার৷ সোমবার, বারাকপুর কেন্দ্রের ভোটে বিজেপির হেভিওয়েট প্রার্থী অর্জুন সিংয়ের দিনলিপি অন্তত তেমনই ইঙ্গিত দিচ্ছে৷
নিজের হাতে তৈরি সংগঠনের শক্তপোক্ত ছাদ ছেড়ে চলে গিয়েছেন অপেক্ষাকৃত দুর্বল স্থানে৷ ভাটপাড়ার দীর্ঘদিনের বিধায়ক শুধুমাত্র বারাকপুর কেন্দ্র থেকে লোকসভা নির্বাচনে লড়াই করবেন বলে দলবদল করেছিলেন৷ ভোটের ঠিক আগে তৃণমূল ছেড়ে যোগ দিয়েছিলেন বিজেপিতে৷ সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন ভাটপাড়া পুরসভার জনাকয়েক কাউন্সিলরকেও৷ মনে করা হচ্ছিল, এলাকার তৃণমূল সংগঠনে বড়সড় ভাঙন ধরবে৷ ভোট মরশুমে সবটা চলবে অর্জুনের অঙ্গুলিহেলনে৷ কিন্তু না, সেইমতো কাজ এতটা সহজ হল না৷ সোমবার, ভোটের দিনই বোঝা গেল সংগঠন গুছিয়ে নেওয়ার কোনও সুযোগই সে অর্থে পাননি অর্জুন সিং৷ তাই ভোটের দিন নিজেই নামলেন রণাঙ্গনে৷ আর বারবার পড়েলেন বিরোধিতার মুখে৷
কথায় বলে, মর্নিং শো’জ দ্য ডে৷ সকালেই মোহনপুর এলাকার চককাঠালিয়ায় বুথ পরিদর্শনে যান অর্জুন সিং৷ সঙ্গে ছিলেন হাতে গোনা কয়েকজন অনুগামী৷ ভোটারদের ঠিকমতো ভোট দিতে দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগে সরব হন৷ অভিযোগ, রাজ্য পুলিশের ইন্ধনে তৃণমূল আশ্রিতরা তাঁর উপর হামলা চালায়৷ ঠোঁট ফেটে রক্ত বেরোতে শুরু করে৷ তখনকার মতো পরিস্থিতি সামলে নেন অর্জুন সিং৷ বেলা বাড়তেই তিনি পৌঁছে যান নৈহাটির বিজয়নগর গার্লস হাই স্কুল৷ বহিরাগতদের নিয়ে এসে এলাকায় ভোট করানো হচ্ছে বলে অভিযোগ তোলেন প্রার্থী৷ সেখানেও একই পরিস্থিতি৷ জনরোষের মুখে পড়েন তিনি৷ ‘গো ব্যাক’, ‘গদ্দার’-সহ একাধিক স্লোগান শুনতে হয় তাঁকে৷ জগদ্দলের মনসা কলোনিতেও এক ছবি৷ বারবার তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের উপর হামলার অভিযোগ করতে থাকেন অর্জুন৷ কিন্তু ছবিতে স্পষ্ট, রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব নয়, একেবারে এলাকার জনসাধারণই রুখে দাঁড়াচ্ছেন একসময়কার দোর্দণ্ডপ্রতাপ তৃণমূল বিধায়কের বিরুদ্ধে৷ তাঁকে আর কোনওভাবে ভাল নজরে দেখছেন না ভোটাররা৷দলবদলের সঙ্গে সঙ্গে যে সংগঠনও একেবারেই তৈরি করে উঠতে পারেননি অর্জুন সিং৷ তাই ভোটের দিন তাঁকে নিজেকেই নামতে হল ময়দানে৷ ঠিক যেমন আসানসোলে বাবুল সুপ্রিয়কেও করতে হয়েছিল৷
অন্যদিকে বারাকপুরের তৃণমূল শিবিরের ছবিটা একেবারে উলটো৷ দু’বারের সাংসদ দীনেশ ত্রিবেদীকে দেখা গেল ফুরফুরে মেজাজে৷ তিনিও বুথে বুথে ঘুরলেন, সকলের সঙ্গে কথা বললেন৷ অর্জুন সিংয়ের পরিস্থিতি সম্পর্কেও ওয়াকিবহাল হলেন৷ তাঁর তোলা সমস্ত অভিযোগ যুক্তি দিয়ে খণ্ডন করে বুঝিয়ে দিলেন, ভোটযুদ্ধে তিনিই এগিয়ে৷
শেষবেলায় পরিস্থিতি পরিদর্শনে গিয়ে তো খুদেদের সঙ্গে খেলায় মেতে উঠলেন৷ পড়ন্ত রোদে ব্যাটিং, বোলিংয়ে ছোটদেরও মন কাড়লেন৷
দেখুন ভিডিও:
আর এসবের নেপথ্যে যাঁর সবচেয়ে বেশি অবদান, তিনি নৈহাটির বিধায়ক পার্থ ভৌমিক৷ অলিখিতভাবে ৭টি বিধানসভা কেন্দ্রের দায়িত্ব নিয়ে ভোট করালেন তিনি৷ পঞ্চম দফা ভোটের দিন অন্যতম নজর ছিল বারাকপুরের দিকে৷ বিশেষভাবে যা চোখে পড়ল, সেটা হল এবারই প্রথম গুলি,বোমা,রক্তপাতহীন নির্বাচনের সাক্ষী রইল বারাকপুর শিল্পাঞ্চল৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.