সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: লালগড়ে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারকে পিটিয়ে মারার দুঃসহ স্মৃতি যেন ফিরে না আসে জঙ্গলমহলে। তাই শনিবার বুদ্ধপূণির্মায় অযোধ্যা পাহাড়ের আদিবাসীদের ঐতিহ্য ‘শিকার উৎসব’-এর আগে চলছে সচেতনতা প্রচার৷ নাটকের মাধ্যমে রোড শো করছে বনদপ্তর। অংশ নিয়েছেন যৌথ বন পরিচালন কমিটির আদিবাসী সদস্য-সহ বেশ কয়েকজন কর্মী। নাটকের বার্তা একটাই, ‘কোরো না মোদের বন্দি/ নিও না মোদের প্রাণ/ ব্যবসার জন্য গেও না তুমি পশুহত্যার গান৷’
ফি সপ্তাহে অযোধ্যা পাহাড়ের বাসিন্দাদের একাংশের শিকার অভিযান, প্রতি বছর নিয়ম করে বুদ্ধপূর্ণিমায় শিকার উৎসব – এভাবেই জীবন কাটে আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষজনের৷ হাজার হাজার বছর ধরে শিকার উৎসবের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে তাঁদের আবেগ, ঐতিহ্য৷ সেই আবেগে কুঠারাঘাত করে এই উৎসব বন্ধ করায় সায় নেই বনদপ্তরের। তা সত্বেও শিকার রুখতে এবার যেন জোট বাঁধছে পাহাড়। বেশ কয়েকবছর ধরেই সচেতনতার প্রচার চালিয়ে শিকার বাদ দিয়ে শুধুমাত্র উৎসবে মেতে ওঠার বার্তা দেওয়া হয়। কিন্তু সেভাবে সফল হয় না।
এবার বনদপ্তর শিকার রুখতে আদিবাসী জনজাতির মানুষজনকেই মাঠে নামিয়েছে। পুরুলিয়া জেলা প্রশাসনের নির্দেশে বনদপ্তর, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা, জেলা পুলিশ-সহ পাহাড়ের আদিবাসী মানুষজনই একজোট হয়ে শিকার বন্ধের প্রচারে নেমেছেন। পাহাড়ের আদিবাসীরাই শিকার বন্ধ করতে সরকারি প্রচারপত্র বিলি করছেন।
গত বছর ঝাড়খন্ড থেকে ঝাড়গ্রামের জঙ্গলমহল এলাকা লালগড়ের জঙ্গলে ঢুকে পড়া রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারকে যেভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়, সেই ক্ষত আজও রয়েছে বনমহলে। শিকার উৎসবে সেই ক্ষত আরও বাড়ুক, চায় না অযোধ্যা পাহাড়। তাই পুরুলিয়ার বলরামপুর, বাঘমুন্ডি বনাঞ্চল যেভাবে দু’মাস আগে থেকে প্রচার শুরু করেছে, সেই কাজে এবার শামিল অযোধ্যা পাহাড়ের মানুষজনই। তাই ছৌ পালা, নাটক-সহ নানাভাবে প্রচার করে শিকার রুখতে চান পাহাড়বাসী। পুরুলিয়া বিভাগের ডিএফও রামপ্রসাদ বদানা বলেন, ‘এবার শিকার রুখে দেওয়াটা আমাদের কাছে চ্যালেঞ্জ। তাই পুরুলিয়া জেলা প্রশাসন, পুলিশ ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা-সহ পাহাড়ের মানুষ শিকার রুখতে আমাদের সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়েছেন। আমরা প্রায় দু’মাস আগে থেকে এই কাজ করছি। আসলে আমরা পাহাড়ের মানুষজনের সঙ্গে বন্ধুর মত মিশে গিয়ে বুঝিয়েছি, বন্যপ্রাণ হত্যা করলে পরিবেশের ভারসাম্য বজায় থাকবে না।’
বাঘমুন্ডি বনাঞ্চল বন্যপ্রাণ হত্যা বন্ধে নিশ্চিন্তপুর এলাকার একটি যৌথ বনপরিচালন কমিটির ন’জন সদস্য ও বিট অফিসার সাহেব মাহাতো, ফরেস্ট গার্ড চয়ন আচার্যকে নিয়ে ১১ জনের দল রোড শো–র মাধ্যমে তিনটি নাটক দেখাচ্ছে। নাটক লিখেছেন, বাঘমুন্ডি বনাঞ্চলের আধিকারিক মনোজ কুমার মল্ল নিজে। অযোধ্যা পাহাড় ছুঁয়ে থাকা সাতটি বনাঞ্চল বাঘমুন্ডি, মাঠা,অযোধ্যা পাহাড়, বলরামপুর, আড়শা,ঝালদা, কোটশিলা – এখানকার মানুষজন এবং মাওবাদী দমনে মোতায়েন থাকা নাগা জওয়ানদেরকে নিয়ে একটি বৈঠক হয় এদিন বিকেলে৷ সেখানেও আরেকপ্রস্থ শিকার বিরোধী প্রচার চলে৷কিন্তু এই অভিযানের মাঝেই উদ্ধার হয়েছে বল্লম, জাল। এদিন বনদপ্তরের নজরদারি এড়িয়ে বাঘমুন্ডির কালিমাটি বিট রেঞ্জ দিয়ে শিকারীর দল বনে ঢুকে শিকারের প্রস্তুতি শুরু করে৷ তবে জঙ্গলে টহলরত বনকর্মীদের নজরে পড়ে যাওয়ায় শিকারিদলের পিছনে তাড়া করে উদ্ধার হয় অস্ত্রশস্ত্র৷ শেষ পর্যন্ত অযোধ্যা পাহাড়ে শিকার উৎসবে বন্যপ্রাণ হত্যা রুখতে পারে কি না প্রশাসনের সতর্কবার্তা আর প্রচার, সেটাই এখন দেখার৷
ছবি: অমিত সিং দেও।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.