নব্যেন্দু হাজরা: উৎসবের মরসুম শেষ৷ শীতের সবজি বাজারে ঢুকতে শুরু করেছে৷ কিন্তু তাতেও স্বস্তি নেই মধ্যবিত্তের হেঁশেলে৷ নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহেও আলু, বেগুন থেকে ফুলকপি, বাঁধাকপি-সব সবজির দামই উর্ধ্বমূখী৷ ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, অসময়ের বৃষ্টির কারণে এ বছর শীতের সবজি বাজারে ঢুকতে দিন ১৫ দেরি হবে, জোগান নেই৷ তাই দাম একটু চড়া৷ তবে ঠান্ডা একটু পড়লেই নতুন সবজি ঢোকা শুরু করবে৷ তখন দাম অনেকটাই কমবে৷ তাঁদের কথায়, নভেম্বরের মাঝামাঝি অন্যান্য বার একটু কমই থাকে সবজির দাম৷ কিন্তু এবছর তা হয়নি শীত এখনও পুরোপুরি না পড়ায়৷ তবে দিন দশেকের মধ্যে এই দাম কমবে বলে আশা ব্যবসায়ীদের৷
মঙ্গলবারও মানিকতলা বাজারে ভাল বেগুন বিক্রি হয়েছে ৪০ টাকা কেজিতে৷ ভাল ফুলকপি প্রতি পিস ২০-২৫ টাকা, বাঁধাকপি ৩০-৩৫ টাকা কেজি, গাজর, বিনস, ক্যাপসিকাম, সিম, টমেটোর মতো শীতকালীন সবজির দাম বেশ চড়া৷ তবে সাধারণ মানুষ সবচেয়ে বেশি ছেঁকা খাচ্ছেন আলু কিনতে৷ চন্দ্রমুখী ২৬-২৭ টাকা প্রতি কেজিতে বিক্রি হয়েছে কোথাও কোথাও৷ জ্যোতি আলু বিকোচ্ছে ২০ টাকা প্রতি কেজিতে৷ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আলুর দাম নিয়ন্ত্রণে সবরকম ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলেও কোনওভাবেই তার দাম কমানো যাচ্ছে না৷ কৃষি বিপণন দফতরসূত্রে খবর, হিমঘরে এখনও মজুত ২৭-২৯ শতাংশ আলু৷ দাম নেমেছে পাইকারী বাজারেও৷ কিন্তু তা কমানো যাচ্ছে না খুচরো বাজারে৷ এখনও রাজ্যের হিমঘরগুলিতে ১৬-১৭ লক্ষ মেট্রিক টন আলু মজুত রয়েছে৷ তা খালি করতে হবে নভেম্বরের শেষেই৷ কিন্তু তাতেও কমছে না আলুর দাম৷ একই অবস্থা আদা, রসুনেরও৷ ফলে মুরগির মাংসের দাম কম থাকলেও একটু যে মাংসের ঝোলে রসনাতৃপ্তি মেটাবেন বাঙালি তার উপায় নেই৷ আদা ৮০-১০০ টাকা প্রতি কেজি এবং রসুন ১৪০-১৬০ টাকা প্রতি কেজিতে বিক্রি হচ্ছে৷
মানিকতলা বাজারের সাধারণ সম্পাদক প্রভাত দাস বলেন, “আড়তদার এবং হিমঘর মালিকরা আলুর একটা দাম ঠিক করে দিচ্ছে৷ সঙ্গে থাকছে মিডলম্যান বা ফড়েদের উপদ্রব৷ যে কারণেই আলুর দাম কমানো যাচ্ছে না৷ তবে ঠান্ডা পড়া শুরু করলেই সবজির দাম কমবে৷”
ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, দিন দশেক পর এই দাম কমার সম্ভাবনা৷ শীত এখনও সেভাবে পড়েনি৷ আরও ঠান্ডা পড়লে জোগান বাড়বে৷ কমবে দামও৷ একটু ঠান্ডা পড়লেই বনগাঁর দিক থেকে প্রচুর বেগুন, নদিয়ার মদনপুর থেকে ফুলকপি, বসিরহাট, ভাঙড়ের দিক থেকে বাঁধাকপি আসে৷ যে পিঁয়াজকলিটা এখন বাজারে পাওয়া যাচ্ছে, সেটা রাঁচি এবং বেঙ্গালুরু থেকে আসছে৷ মটরশুঁটি আসছে রাঁচি থেকে৷ দিন পনেরো পরই এখানকার পিঁয়াজকলি বাজারে চলে আসবে৷ তখন দাম অনেকটাই কমবে৷
তবে আলুর দাম কীভাবে নিয়ন্ত্রণে আনা যায়, তা নিয়েই চিন্তায় রাজ্য সরকারের তৈরি টাস্ক ফোর্সের সদস্যরাও৷ সাধারণ মানুষের দাবি, সরকার বলে বাজারে বাজারে নজরদারির কথা৷ কিন্তু আদতে সেই নজরদারির কিছুই হয় না৷ যে কারণে বাজারে হাত পড়ে মধ্যবিত্তের৷ রাজ্যের কৃষি বিপণনমন্ত্রী তপন দাশগুপ্ত বলেন, “নভেম্বরের শেষেই সব হিমঘর ফাঁকা করে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে৷ দাম নিয়ন্ত্রণে সরকার সব রকম ব্যবস্থা নিচ্ছে৷ সবজির দামও আকাশছোঁয়া তেমনটা নয়৷ শীতের সবজি ঢুকলে সেই দাম আরও কমবে৷”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.