স্টাফ রিপোর্টার, শিলিগুড়ি: জলপাইগুড়ি থেকে নেপাল৷ এক মহিলা সাংসদের পরামর্শেই সীমান্ত পেরিয়ে প্রতিবেশী দেশে পালানোর ছক ছিল জুহি চৌধুরির৷ শিশুপাচার কাণ্ডে নাম জড়ানো বিজেপি নেত্রী জুহি জানতেন, একবার নেপালে পালিয়ে গেলে বিদেশমন্ত্রকের অনুমোদন ছাড়া সিআইডি তাঁর নাগাল পাবে না৷ যদি সে দেশে ঢুকে তাঁকে ধরতে হয় তো বিদেশ মন্ত্রকের অনুমোদন চাই৷ সেই অনুমোদন যাতে না মেলে সে বিষয়ে তাঁকে আশ্বাস দিয়েছিলেন ওই মহিলা সাংসদ৷ ভারত-নেপাল সীমান্ত খড়িবাড়ির বাতাসি থেকে গ্রেফতারের পর বিজেপির মহিলা মোর্চার নেত্রী জুহিকে রাতভর জেরা করে এমনটাই জানতে পেরেছে সিআইডি৷ এর পরই প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কি ওই মহিলা সাংসদকেও ডেকে পাঠাবেন তদন্তকারীরা? তিনি যেখানে ছিলেন সেখানে রসদ জোগাত কে বা কারা? কাদের সঙ্গে গত কয়েক দিন যোগাযোগ করে বাঁচতে চেয়েছেন তাও জানার জন্য বুধবারই জলপাইগুড়ি নিয়ে যাওয়া হচ্ছে জুহিকে৷ এদিকে জেরা শুরু হয়েছে হোমের প্রাক্তন কর্মী রুনা চৌধুরিকে৷
পুরনো ১ টাকার নোট আছে? তাহলেই পকেটে আসতে পারে ১ লক্ষ টাকা
তবে বিজেপি এই গ্রেফতারকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা বলে মনে করছে৷ এগুলি তাঁকে ফাঁসানোর জন্য করা হচ্ছে এবং এর জন্য জুহিকে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন রাজ্যসভার সাংসদ রূপা গঙ্গোপাধ্যায়৷
It is all being done to actually frame me; she is being used as a pawn; this will not scare us: Roopa Ganguly BJP MP on Juhi Chowdhury pic.twitter.com/a1SjfUqQXV
— ANI (@ANI_news) March 1, 2017
দলের রাজ্য তথা বিধায়ক দিলীপ ঘোষ বলেন, “বুধবারের বৈঠকে জুহিকে নিয়ে দলীয় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে৷ তবে দলের আইনজীবী সেল তাঁর জামিনের জন্য লড়বে৷ রাজ্য সরকার বিষয়টি নিয়ে রাজনীতি করছে৷” হোমে শিশুপাচার কাণ্ডে ১৮ ফেব্রুয়ারি চন্দনা চক্রবর্তী গ্রেফতারের পর থেকেই পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন জুহি৷ ‘আশ্রয়’-এর খোঁজে দিল্লিতেও গিয়েছিলেন তিনি৷ তবে উত্তর ভারতের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ওই সাংসদের পরামর্শেই নেপালে পালানোর ছক কষতে ফের উত্তরবঙ্গে ফিরে আসেন জুহি৷ এমনটাই জানতে পেরেছেন রাজ্য গোয়েন্দা পুলিশের কর্তারা৷
কন্ডোমের বিজ্ঞাপনে সানির লাস্যে আপত্তি মহিলাদেরই
দু’দিন ধরে বাতাসিতে সম্পর্কে মাসি কৌশল্যা মণ্ডলের বাড়িতে লুকিয়ে ছিলেন ওই বিজেপি নেত্রী৷ চন্দনা গ্রেফতারের পরই জুহি তাঁর মোবাইল ফোন সুইচ অফ করে দেন৷ মঙ্গলবার কয়েক মিনিটের জন্য ফোন অন করে বাড়ির সঙ্গে কথা বলতে গিয়েই জালে পড়ে যান তিনি৷ মোবাইলের টাওয়ার লোকেশন দেখেই হানা দিয়ে তাঁকে পাকড়াও করেন সিআইডি কর্তারা৷ জুহি নেপালে পালাতে পারেন, এমন আশঙ্কায় আগে থেকেই পানিট্যাঙ্কি সীমান্ত এলাকায় নজর রেখেছিল সিআইডি৷ জুহিকে গ্রেফতারের পর মাঝরাতে নিয়ে আসা হয় শিলিগুড়ির মাটিগাড়া থানায়৷ সেখানেই তাঁকে জেরা করা হয়৷ জেরায় চন্দনার হোমের বকেয়া পাওনা পাইয়ে দেওয়ার ব্যাপারে তদ্বির করার কথা তিনি স্বীকার করেছেন বলে দাবি সিআইডি-র৷ একইসঙ্গে চন্দনাকে নিয়ে তিনি যে একাধিকবার দিল্লিতে গিয়েছিলেন, জেরায় জুহি সেটাও স্বীকার করে নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন তদন্তকারীরা৷
ইতিমধ্যেই চন্দনার হেফাজত থেকে জুহির একটি ব্যাগ উদ্ধার করেছে সিআইডি৷ ওই ব্যাগ থেকে সতেরোটি শিশুর ছবি মিলেছে৷ যেগুলির উপর চন্দনার সংস্থা এনডিপিডিসি-র সিলমোহর সাঁটা৷ এমনকী, ওই ব্যাগ থেকে চন্দনা ও জুহির ছবি সহ নর্থ ব্লকে ঢোকার গেট পাসও পাওয়া যায়৷ মেলে বিজেপির বেশ কিছু কাগজপত্র৷ ব্যাগটি বিজেপির ন্যাশনাল কাউন্সিলের বৈঠকে দেওয়া হয়েছিল বলে জানতে পেরেছে সিআইডি৷
প্রতারণার শাস্তি, মেয়ের প্রেমিককে কোপাল বাবা
কার্যত ফিফটি-ফিফটি কমিশনের ভিত্তিতেই যে জুহি তাঁকে কেন্দ্রীয়স্তরের ‘প্রভাবশালী’-দের মাধ্যমে নানা সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন, তা জানিয়ে দিয়েছেন শিশুপাচার কাণ্ডে মূল অভিযুক্ত ধৃত হোমকর্ত্রী চন্দনা চক্রবর্তী৷ কারা সেই প্রভাবশালী, জুহিকে জেরা করেই এবার তা জানতে মরিয়া সিআইডি৷ সেক্ষেত্রে দুপুরে জুহিকে আদালতে তোলার পর আবেদনের ভিত্তিতে হেফাজতে নিয়ে ম্যারাথন জেরা করতে চান গোয়েন্দা পুলিশের কর্তারা৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.