Advertisement
Advertisement

Breaking News

Saraswati Puja 2024

পালটে যাচ্ছে নদীচর, সরস্বতী পুজোর আগে বিলুপ্তির পথে খাগের কলম!

খাগ না পেয়ে বাগদেবীর আরাধনায় থার্মোকলের পেনই ভরসা উত্তরবঙ্গে।

Feather pen likely to extinct shortly ahead of Saraswati Puja | Sangbad Pratidin
Published by: Sucheta Sengupta
  • Posted:February 8, 2024 2:10 pm
  • Updated:February 8, 2024 2:34 pm  

বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য, শিলিগুড়ি: নদী চরের বাথান আলু খেত, বসতির দখলে চলে গিয়েছে। নলখাগড়ার জঙ্গল উধাও। তাই সরস্বতী পুজো (Saraswati Puja) খাগের কলমও বিরল হতে বসেছে উত্তরে। বিকল্প হিসেবে বাজারে এসেছে থার্মোকলের কলম। বাগদেবীর মণ্ডপে বসে খাগের কলম কাঁচা দুধ অথবা কালিতে ডুবিয়ে কিছু লেখার অভিজ্ঞতার প্রসঙ্গ উঠতে অনেকেই ছেলেবেলায় ফিরে যান। নস্টালজিয়ায় ভোগেন। খাগের কলমে লিখতে কেমন লাগে? আজকের ছোট ছেলেমেয়েদের সেই প্রশ্ন করতেই উদাস চোখে তাকিয়ে থাকে। ইংরেজি মাধ্যম স্কুল নয়। বাংলা মাধ্যম স্কুলের কচিকাঁচারাই খাগের কলম দেখতে কেমন বলতে পারছে না!

শিলিগুড়ির (Siliguri) ভারত নগরের চতুর্থ শ্রেণির পড়ুয়া মিষ্টু দে অথবা ফুলবাড়ির অর্পণ সরকার। ওরা উলটে জানতে চায়, “খাগ কী?” অথচ সরস্বতী পুজো আয়োজন মানেই খাগের কাঁচা দুধ অথবা কলম কালিতে ডুবিয়ে কিছু লেখা। কেন এমন পরিবর্তন? রায়গঞ্জ (Raiganj) বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য দীপক রায় অবশ্য মনে করেন এটাই স্বাভাবিক। তিনি বলেন, “একসময় তিস্তা, তোর্সা-সহ বিভিন্ন নদীচরে নলখাগড়ার জঙ্গল দেখা যেত। সেখানে রাখালরা গরু, মোষ চড়াত। বাথান থাকত। সেই নদী চরগুলোতে এখন নলখাগড়া কেন হোগলা খুঁজে পাওয়া যায় না। বাথান হারিয়ে যেতে খাগ, হোগলা রীতিমতো বিরল হয়েছে। তাই নতুন প্রজন্ম জানবে কেমন করে লেখনির ইতিহাস।” হক কথাই বটে। শিলিগুড়ির নকশালবাড়ির প্রাথমিক শিক্ষক ভবেশচন্দ্র সরকার বলেন, “বছরে একটি দিন খাগের কলমে কিছু শব্দ লিখে কে কতটা দিগগজ পণ্ডিত হয়েছেন বলা মুশকিল। তবে এটা ঠিক খাগের কলম দুধ অথবা কালিতে ডুবিয়ে কিছু লিখে আমরা লেখনীর ইতিহাস ছুয়ে দেখার সুযোগ পেতাম।”

Advertisement

[আরও পড়ুন: দেবের বিরুদ্ধে চক্রান্ত! ভাইরাল অডিও ক্লিপ নিয়ে প্রবল ক্ষুব্ধ তারকা সাংসদ]

কেনই এমনটা বলবেন না প্রবীণরা? সভ্যতার শুরু থেকে মানুষ নিজস্ব ভাবনা ভবিষ্যতের জন্য রেখে যেতে লেখনীর ব্যবহার করেছে। গুহাচিত্র থেকে সেই যাত্রা থেমেছে প্রায় পাঁচ হাজার বছর আগে কালি ও কলম আবিষ্কারের পর। এর পরের ইতিহাস কলমের রূপ বদল। ফাউন্টেন পেন (Fountain pen) থেকে বল পেন। সেটাও এখন আধুনিকতার ধাক্কায় উধাও হয়েছে। পকেটে কলম রাখার অভ্যেস পালটেছে অফিসে, বাড়িতেও। অথচ প্রত্যেকে প্রতিদিন কিছু না কিছু লিখছেন। তারা মনের ভাব প্রকাশ করছেন আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোন, কম্পিউটার অথবা ট্যাবে। লোকসংস্কৃতির গবেষক তথা অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক দীনেশচন্দ্র রায় বলেন, “আট থেকে আশি প্রত্যেকের হাতে এখন মোবাইল ফোন। লিখতেও হয় না। মুখে বললে যন্ত্র লেখা তৈরি করে দিচ্ছে। এই প্রজন্ম খাগের কলম থাকলো নাকি হারিয়ে গেল ভাববে কেন?”

উত্তরের প্রবীণদের কয়েকজন জানান, একসময় এখানেও কলম তৈরি হত বাঁশের সরু কঞ্চি দিয়ে। এছাড়া খাগের কলম তো ছিলই। পালকের কলম ‘কুইল’ কিছু জোতদার পরিবারে দেখা যেত। সেটা বাইরে থেকে আসত। তবে ওয়াটারম্যানের ফাউন্টেন পেন আবিষ্কারের পর উত্তরের ছবিও পালটেছে। বাকদেবী বন্দনায় বইপত্রের সঙ্গে মণ্ডপে জায়গা করে নিয়েছে পাইলট, পার্কার, শেফার্ড, ওয়াটারম্যান, সোয়ানের মতো রকমারি ফাউন্টেন পেন।

তবে খাগের কলম গুরুত্ব হারায়নি অনেকদিন। অনেকে পুজোর পরদিন সেটা কালিতে চুবিয়ে ১০৮ বার ‘ওম সরস্বতৈঃ নমঃ’ লিখতেন। অবসরপ্রাপ্ত প্রবীণ শিক্ষক গান্ধী গবেষক আলিপুরদুয়ার শহরের বাসিন্দা পরিমল দে বলেন, “পয়ষট্টি বছর আগের কথা মনে আছে। সরস্বতী পুজোর সময় আমরা অধীর আগ্রহে বসে থাকতাম কখন পুরোহিত মশাই খাগের কলম হাতে তুলে দেন। সেটা পেলে কাচা দুধে ডুবিয়ে ওম সরস্বতৈঃ নমঃ লিখতাম।” প্রবীণদের সূত্রে জানা গিয়েছে, এক সময় পুজো মণ্ডপে যাওয়ার আগে বাড়ি থেকে খাগের কলম তৈরি করে আনতেন পুরোহিতরা।

[আরও পড়ুন: সরস্বতী পুজোর পরই বঙ্গে শীত বিদায়? জেনে নিন কী বলছে হাওয়া অফিস]

এখন পুজো আয়োজকদের কিনে আনতে বলেন। কেন? বঙ্গীয় পুরোহিত ও যজমান সংঘের সভাপতি জয়ন্ত চক্রবর্তী প্রশ্ন শুনে হাসেন। তিনি বলেন, “খাগ পাব কোথায় যে কলম বানাব? আগে নদীপাড়ে গেলেই নলখাগড়ার জঙ্গল দেখা যেত। ওখান থেকে কেটে এনে পাঁচ-ছয় ইঞ্চি লম্বা মাপের কলম বানাতাম। এখন বাজারেও খুব একটা মেলে না। খাগ না পেয়ে অনেকে তাই থার্মোকলের কলম দিচ্ছে।” এ যেন দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানোর দশা। ডুয়ার্সের ময়নাগুড়ি বাজারের পুজোর সামগ্রী বিক্রেতা বিশ্বনাথ দত্ত জানান, বছর পাঁচেক আগেও সরস্বতী পুজোর আগে বাজারে পর্যাপ্ত পরিমান খাগ পৌঁছে যেত। এখন খুবই সামান্য আসছে জঙ্গল সংলগ্ন এলাকা থেকে। সেখানে গণ্ডার-হাতির ভয় থাকায় বেশি নিয়ে আসা সম্ভব হচ্ছে না। ওই কারণে তিন বছর থেকে থার্মোকলের তৈরি কলম আসছে। সেটাই খাগের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার চলছে।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement