অর্ণব আইচ: এনআরসি আর CAA’র ভয়। তাই আর এদেশে গা-ঢাকা না দিয়ে সোজা বিদেশে পাড়ি দিচ্ছে রোহিঙ্গারা। এখন তাদের টার্গেট নেপাল, তাইল্যান্ড বা ইন্দোনেশিয়ার মতো দেশ। তারা পা বাড়াচ্ছে মধ্য প্রাচ্যের কয়েকটি দেশেও।
তাতেও আপত্তি নেই কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের। কিন্তু সমস্যা দাঁড়িয়েছে অন্য জায়গায়। রোহিঙ্গাদের (Rohingya people) বিদেশে পালানোর পিছনে রয়েছে এই রাজ্যেরই কিছু দালালের হাত, যারা তৈরি করছে রোহিঙ্গাদের ভুয়ো নথিপত্র। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের পাঠানো রিপোর্টে উঠে এসেছে এই তথ্য। তারই ভিত্তিতে রাজ্য পুলিশের সহযোগিতা নিয়ে এবার দালালচক্রের উপর নজরদারি চালাতে শুরু করেছেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। ইতিমধ্যেই কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দাদের হাতে ধরা পড়েছে উত্তর ২৪ পরগনা জেলার একাধিক দালালচক্র। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই ধরা পড়েছে শিয়ালদহ থেকে।
জানা গিয়েছে, ১৪ থেকে ২১ হাজার টাকার প্যাকেজের বিনিময়ে অনুপ্রবেশকারীদের আধার কার্ড, ভোটার কার্ডের মতো ভারতীয় পরিচয়পত্র বানিয়ে দিয়ে তাদের বেঙ্গালুরু, হায়দরাবাদের মতো শহরে পাঠিয়ে চাকরির ব্যবস্থাও করে দিয়েছে এই দালালরা। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের কাছে আসা খবর অনুযায়ী, এবার সীমান্তবর্তী এলাকার দালালদের ‘টার্গের্ট’ হয়েছে রোহিঙ্গারা। বাংলাদেশের চট্টগ্রামের ক্যাম্প থেকে আসা রোহিঙ্গারা ছোট দলে যে সীমান্ত পেরিয়ে এই রাজ্যে ফের আসতে শুরু করেছে, সেই প্রমাণ পেয়েছেন গোয়েন্দারা।
কিছুদিন আগেও ৩০ জনের একটি দল ঘোজাডাঙা সীমান্ত দিয়ে উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় অনুপ্রবেশ করেছে বলে গোয়েন্দাদের কাছে খবর। এর আগে তার চেয়েও কম সংখ্যক রোহিঙ্গা দল বেঁধে মূলত উত্তর ২৪ পরগনা জেলার কয়েকটি জায়গা দিয়ে অনুপ্রবেশ করছে। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের দাবি, এই অনুপ্রবেশের পিছনে রয়েছে বাংলাদেশ ও এই রাজ্যের দালাল সিন্ডিকেট। বাংলাদেশের সিন্ডিকেট মোটা টাকার বিনিময়ে রোহিঙ্গাদের সীমান্ত পার করিয়ে দিচ্ছে। এই রাজ্যের দালাল সিন্ডিকেটের হাতে তুলে দেয় তারা।এই দালালরাই রোহিঙ্গাদের প্রাথমিক আশ্রয়ের ব্যবস্থা করে। তাদের নাম পালটে দেয়। তৈরি করে দেয় ভুয়া আধার কার্ড, ভোটার কার্ড, প্যান কার্ডের মতো পরিচয়পত্র। ওই পরিচয়পত্রের ভিত্তিতে এই দালালরাই রোহিঙ্গাদের ভারতীয় পরিচয় দিয়ে তাদের পাসপোর্ট তৈরি করার ব্যবস্থা করে।
কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের সূত্র জানিয়েছে, আগে এই রাজ্যে অনুপ্রবেশ করলেও জম্মু, দিল্লি, হায়দরাবাদ, মুম্বইয়ের মতো শহরে গিয়ে বেনামে গা-ঢাকা দিত রোহিঙ্গারা। আবার তাদের কাজে লাগিয়ে সন্ত্রাসেরও চেষ্টা করেছে বিভিন্ন গোষ্ঠীর জঙ্গিরা। কিন্তু CAA হওয়ার পর থেকে জাল পরিচয়পত্র নিয়ে এই দেশের কোনও শহরেই থাকার ভরসা পাচ্ছে না রোহিঙ্গারা। ভবিষ্যতে ধরা পড়লে ফের দেশছাড়া হতে পারে তারা। তাই নেপাল, ইন্দোনেশিয়া, তাইল্যান্ড, মধ্য প্রাচ্যে পালিয়ে গিয়ে সেখানেই কাজ খুঁজে নিচ্ছে। ইতিমধ্যেই নেপালের বেশ কিছু জায়গায় রোহিঙ্গারা আশ্রয় নিয়েছে, এমন খবরও পেয়েছেন গোয়েন্দারা। এবার রোহিঙ্গাদের জাল পরিচয়পত্র বানানো রুখতে দালাল সিন্ডিকেটের উপর শুরু হয়েছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের নজরদারি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.