সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়,দুর্গাপুর: পানাগড় বাইপাস, বর্ধমানের ঝুলন্ত রেলসেতুর পর এবার দুর্গাপুজো। উদ্বোধন ঘিরে প্রতিযোগিতা চলছেই। কে আগে উদ্বোধন করে কৃতিত্ব নেবে, তা নিয়ে রাজনৈতিক লড়াই জমে উঠেছে এই উৎসবের মরশুমে। দুর্গাপুজোর উদ্বোধনও ছিনিয়ে নিতে পারে তৃণমূল, এই আশঙ্কায় সতর্ক দুর্গাপুরের বিজেপি নেতৃত্ব।তাই প্রকাশ্যে আনতে চাইছে না পুজো উদ্বোধনের তালিকা। বিজেপির এই আশঙ্কা উড়িয়ে অবশ্য তৃণমূলের দাবি, পুজো ঘিরে অযথা রাজনীতির চেষ্টা একেবারেই কাম্য নয়।
পশ্চিম বর্ধমান জেলায় দুটি লোকসভা আসনই এখন বিজেপির দখলে। দলের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বিজেপি শিল্পাঞ্চলের পুজো উদ্বোধনে দাপট দেখানোর জন্য প্রস্তুত ছিল। কিন্তু বিজেপির সেই ভাবনায় এবার জল ঢালতে পারে তৃণমূল। বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, আসানসোলে বিজেপির সাংসদ বাবুল সুপ্রিয় এবারের পুজোয় দেশে থাকছেন না। তাই আসানসোলের বেশ কয়েকটি পুজোতে দলের পক্ষ থেকে রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ, সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায় কিংবা রাজ্যসভার সাংসদ রূপা গঙ্গোপাধ্যায়কে এনে উদ্বোধন করানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। তাঁদের থেকে সময়ও চাওয়া হয়েছে। তবে এখনও চূড়ান্ত কিছু হয়নি বলেই জানা গিয়েছে। লোকসভায় ফল খারাপ হলেও, আসানসোল এলাকায় এখনও যেহেতু তৃণমূলের শক্তি তুলনায় বেশি, তাই বিজেপি নেতারা কোন পুজো উদ্বোধন করবেন, তা নিয়ে চূড়ান্ত গোপনীয়তা রক্ষা করা হচ্ছে। খবর পেয়ে যদি সেই পুজো তৃণমূল ‘হাইজ্যাক’ করে, তাহলে রাজ্য নেতাদের কাছে জেলা নেতৃত্বের নাক-কান কাটা যাবে, এই আশঙ্কাতেই এত গোপনীয়তা।
আবার বর্ধমান-দুর্গাপুরের বিজেপি সাংসদ সুরিন্দর সিং আলুওয়ালিয়াও তাঁর নিজের কেন্দ্রে পঞ্চমী ও ষষ্ঠীর দিন প্রায় আটটি পুজো উদ্বোধন করবেন বলে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। বিজেপির জেলা সভাপতির এলাকা কাঁকসার বামনাবেড়া ও শ্যামপুর এলাকার পুজো উদ্বোধনের কথা দলের পক্ষ থেকে বলা হলেও সেই ‘হাইজ্যাক’-এর আশঙ্কায় বাকিগুলি এখনও চূড়ান্ত হয়নি বলেই জানানো হচ্ছে। উদ্বোধন যে ‘লুঠ’ হতে পারে, তা স্বীকার করছেন বিজেপির জেলা সভাপতি লক্ষণ ঘোড়ই। তাঁর কথায়, “তৃণমূল সব পারে। ওদের কোনও নীতি নেই। কেন্দ্রীয় প্রকল্প নিজেদের নামে চালিয়ে উদ্বোধন করে দিচ্ছে। দুর্গাপুজোতেও তাই করতে পারে। দুর্গাপুজো কমিটিগুলি স্থানীয় স্তরের। তাদের পুলিশ ওপ্রশাসনের ভয় দেখিয়ে বিজেপির প্রবেশ আটকাতে পারে। তবে পুজো কমিটিগুলি চেয়েছে বলেই দলের পক্ষ থেকে উদ্বোধন করা হবে। এরপর মানুষ সব বিচার করবে।”
বিজেপির অভিযোগ উড়িয়ে দিলেও উদ্বোধন ‘হাইজ্যাক’ নিয়ে কিছু বলতে চাননি তৃণমূলের জেলা সভাপতি জিতেন্দ্র তিওয়ারি। তিনি জানান, “আমরা দুর্গাপুজোয় কোনও রাজনীতি করব না। সবাই মায়ের আশীর্বাদ নিতে যায়। মা সবার। তবে যাদের মনে মায়ের আর্শীবাদ পাওয়া নিয়ে আশঙ্কা থাকে, তারাই এইরকম ভাবনা ভাবে।” তবে বিজেপির এত গোপনীয়তার মাঝে কখন তৃণমূল টেক্কা দিয়ে বেরিয়ে যাবে, তা বলা যাচ্ছে না এখনই।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.