ক্ষীরোদ ভট্টাচার্য: চলে গেলেন ওআরএসের (ORS) জনক প্রফেসর দিলীপ মহলানবিশ। বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর। বয়সজনিত অসুখে দীর্ঘদিন ধরে ভুগছিলেন তিনি। শনিবার রাতে দক্ষিণ কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে মৃত্যু হয় এই প্রচার বিমুখ চিকিৎসক-বিজ্ঞানীর। ডিহাইড্রেশন বা শরীর থেকে জল কমলে মৃত্য অনিবার্য। এই ধারণা থেকেই নুন-চিনি মেশানো জল খাইয়ে আফ্রিকার বহু মানুষের বিশেষ করে শিশুদের প্রাণ বাঁচান তিনি। মুক্তিযুদ্ধের সময়ও অসংখ্য মানুষের প্রাণ বাঁচিয়েছিলেন। দীর্ঘদিন কাজ করেছেন বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে। করেছেন অধ্যাপনাও। যে ঘরে বসে এই আবিষ্কার সেটি পূর্ণ মর্যাদায় সংরক্ষিত।
কৃতী এই চিকিৎসকের জন্ম ১৯৩৪ সালে। গত শতাব্দীর ছয়ের দশক থেকেই মূলত প্র্যাকটিস শুরু করেন দিলীপ। ১৯৬৪ সাল থেকে শুরু করেন ওআরএস সংক্রান্ত গবেষণার কাজ। পরে ১৯৭৩ সালে জন হপকিনস মেডিক্যাল জার্নালে প্রকাশিত হয় তাঁর গবেষণাপত্র। পাশাপাশি ল্যানসেট পত্রিকাও তাঁর গবেষণাকে স্বীকৃতি দেয়।
তবে এরও আগে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় বহু মানুষকে প্রাণে বাঁচিয়েছিলেন তিনি। সেই সময় বনগাঁ সীমান্তে তাঁরই বুদ্ধিতে ওআরএস খাইয়ে বহু কলেরা আক্রান্তকে সুস্থ করে তোলা হয়। তখনও কিন্তু এই চিকিৎসা পদ্ধতিকে স্বীকৃতি দেয়নি ‘হু’।
আটের দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে নয়ের দশকের গোড়া পর্যন্ত বিশ্ব সংস্থার ডায়রিয়া সংক্রান্ত কর্মসূচির মেডিক্যাল অফিসারের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। সেই সঙ্গে আইসিডিডিআর বাংলাদেশের অধিকর্তাও ছিলেন। ১৯৯৪ সালে রয়্যাল সুইডিশ অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সেসের বিদেশি সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন দিলীপ। ২০০২ সালে পান পলিন পুরস্কার। পরে ২০০৬ সালে পান প্রিন্স মাহিডল অ্যাওয়ার্ড। শেষের কয়েক বছর আর রোগী দেখতেন না। ক্রমশ ভাঙছিল শরীর। অবশেষে চলে গেলেন তিনি। কিন্তু রয়ে গেল তাঁর আবিষ্কার। যা আগামিদিনেও কলেরা-ডায়েরিয়ার মতো রোগে আক্রান্তদের জীবনদায়ী ওষুধ হিসেবে কাজ করে চলবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.