রঞ্জন মহাপাত্র, কাঁথি: অভিযোগ, স্কুলে চাকরি দেওয়ার নাম করে ছেলে টাকা নিয়েছিলেন এলাকার বেশ কয়েকজনের কাছ থেকে। শাসকদলের নেতা, সেই ছেলে খুন হয়ে গিয়েছেন। এখন ছেলের নেওয়া টাকা শোধ দিয়ে চলেছেন বৃদ্ধ পিতা। চমকপ্রদ এই ঘটনার সাক্ষী পূর্ব মেদিনীপুর (Purba Medinipur) জেলার ভগবানপুরের মহম্মদপুর।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মহম্মদপুর এলাকার দাপুটে তৃণমূল নেতা নান্টু প্রধান ছিলেন মহম্মদপুর ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান। আর প্রধান ছিলেন তাঁর স্ত্রী অপর্ণা। পঞ্চায়েত চলত কর্তা-গিন্নির যৌথ তদারকিতে। নান্টুর বাবা চাঁদহরি প্রধানও একসময় এই গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান থেকেছেন দীর্ঘদিন। অভিযোগ, চাকরি দেওয়ার নামে স্থানীয় বহু মানুষের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা তুলেছেন নান্টু। এরই মধ্যে ২০১৮-র ২৪ ফেব্রুয়ারি খুন হন তিনি। ছেলের মৃত্যুর পর পাওনাদাররা এসে ভিড় করে তাঁর বৃদ্ধ বাবা চাঁদহরির কাছে। চাপ দিতে থাকে টাকা ফেরতের দাবিতে। এরপরেই নিজের জমিজমা বেচে ছেলের নেওয়া টাকা পরিশোধ করতে শুরু করেন বাবা চাঁদহরি।
চাকরি দেওয়ার নামে ছেলে টাকা তুলেছিল তাঁকে তা ফেরত দিতে হচ্ছে, সে কথা প্রকাশ্যেই স্বীকার করছেন চাঁদহরি। পাশাপাশি এমনটাও দাবি করছেন যে, ছেলের বাড়ির ধারপাশ দিয়ে যেতেন না তিনি। কারণ, ছেলের সঙ্গে তেমন বনিবনা ছিল না তাঁর। অভিযোগ, ছেলে নান্টু চাকরি করে দেওয়ার নামে লাখ লাখ টাকা নিয়েছিলেন অনেকের থেকে। কিছু জনের চাকরিও করে দিয়েছিলেন নান্টু। কিন্তু যাঁদের চাকরি হয়নি, ছেলের মৃত্যুর পর তাঁদের টাকা ফেরতের জন্য চাপ আসে বৃদ্ধ বাবার উপর। তাই তিনি সম্পত্তি বিক্রি করে ছেলের ঋণ পরিশোধ করে চলেছেন। শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে ছেলের ঘনিষ্ঠতা ছিল বলে স্থানীয় মহলে খবর। স্থানীয়দের অভিযোগ, নান্টু শিক্ষক নিয়োগ থেকে গ্রুপ সি পদে চাকরি দেওয়ার নামে জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে টাকা তুলতেন। আর সেই টাকা পৌঁছে দিতেন তৎকালীন শিক্ষা মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কাছে। সে কথা তিনিও শুনেছেন বলে স্বীকার করেছেন চাঁদহরিবাবু।
চাঁদহরি প্রধান বলেন, “ছেলে কী করেছে, তা আমরা জানি না। আমার সঙ্গে ছয়-সাত বছর তেমন বনিবনা ছিল না। ওর বাড়ির চৌকাঠ পার হতাম না। নান্টুর মৃত্যুর পর মাঝেমধ্যে যেতাম। চাকরির ব্যপারে কিছু জানি না। ওর মৃত্যুর পর আমার উপর চাপ আসছিল টাকা পরিশোধ করার জন্য। ওর ঘর থেকে কিছু টাকা উদ্ধার হয়েছিল। কিন্তু তা দিয়ে এত টাকা পরিশোধ সম্ভব ছিল না। তাই কিছু জমি বিক্রি করে লোকের টাকা মিটিয়েছি। এখনও কিছুজনের টাকা বাকি রয়েছে। সম্পত্তি বেচে সব লোকের টাকা মেটাব।” তিনি বলেন, “আমি শুনেছি মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল। এখনও পর্যন্ত কয়েকজনের টাকা ফেরত দিয়েছি। কেউ ৫০, কেউ এক লাখ, কেউ দু’লাখ দিয়েছিল। বাকিদের টাকা ফেরানোর চেষ্টা করব। কিন্তু টাকা নেওয়ার কোনও তথ্য বা নথি কেউ দিতে পারছেন না। শুধুই চাপ আসছে। এটাও ভাবাচ্ছে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.