রাজা দাস: মাত্র তিন বছরেই বদলে গিয়েছে ছবি৷ একসময়ে প্রতিশ্রুতির বন্যা, সেইমতো বেশ কিছু সাহায্যও মিলেছিল৷ কিন্তু এখন আর পাশে দাঁড়ানোর মতো কেউ নেই৷ আর কেউ সাহায্যের হাতও বাড়ান না৷ যার ফলে, চরম দুর্দশার মধ্যে দিন গুজরান করতে হচ্ছে৷
সিদ্দিকা পারভিন৷ দক্ষিণ দিনাজপুরের বংশীহারি থানার শ্রীরামপুর থানার ২২ বছরের এই তরুণীকে নিয়ে একসময়ে তোলপাড় হয়েছিল৷ কারণ, ৯ ফুট উচ্চতার সিদ্দিকার ওজন ১২৫ কেজি৷ সংবাদ মাধ্যমে এই বিরলতম খবর প্রকাশ হতেই সাহায্যের জন্য হুড়োহুড়ি পড়ে যায়৷ সাধারণ মানুষের পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, প্রশাসনের পক্ষ থেকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া হয়৷ কিন্তু সবটাই যে ছিল লোক দেখানো, সাময়িক তা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রকট হয়ে পড়েছে৷ তিন বছর পর বিনা চিকিৎসায়, অর্ধাহারে দিন কাটছে সিদ্দিকার৷ দিনমজুর কৃষক বাবা মেয়েকে নিয়ে অথৈ জলে পড়েছেন৷
বিরলতম রোগের শিকার সিদ্দিকা পারভিন তাঁর অস্বাভাবিক উচ্চতার জন্য ২০১৩ সালে খবরের শিরোনামে আসেন৷ তাঁকে নিয়ে হইচই শুরু হয়ে যায়৷ তখন রাজ্য সরকারের তদানীন্তন মন্ত্রী শঙ্কর চক্রবর্তী উদ্যোগী হয়ে সিদ্দিকাকে কলকাতায় নিয়ে যান৷ সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল পিজিতে দেড় মাস নিখরচায় চিকিৎসা হয় তাঁর৷ লোকসভা নির্বাচনের আগে কংগ্রেস নেতা ওমপ্রকাশ মিশ্র সিদ্দিকার দিল্লিতে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দেন৷ চিকিৎসকরা পরীক্ষা করে বলেন, পিটুইটারি গ্রন্থিতে টিউমার থাকার কারণেই অস্বাভাবিক বৃদ্ধি সিদ্দিকার৷ অপারেশন করে সেই টিউমার বাদও দেওয়া হয়৷ তখন তিন মাস অন্তর খাওয়া খরচ বাবদ ১০ হাজার টাকা পাঠাতেন ওমপ্রকাশবাবু৷ কিন্তু দেড় বছর পর তা বন্ধ হয়ে যায়৷ ২০১৫ সালে সিদ্দিকা ফের অসুস্থ হলে তাঁকে আবারও পিজি হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়৷ সরকারের তরফ থেকে সাহায্যর প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়৷ এখন তাঁকে চিকিৎসার জন্য প্রতি মাসে পিজিতে নিয়ে আসতে হয়৷ বিনা পয়সায় চিকিৎসা চললেও যাতায়াতের খরচ বহন করাই সমস্যা হয়ে উঠেছে সিদ্দিকার পরিবারের৷
তাঁর বাবা আফাজুদ্দিন আহমেদ বলেন, “মেয়ের সারাদিন দু’ কেজি চালের ভাত লাগে৷ এছাড়া টিফিন রয়েছে৷ এখন ধনুকের মতো বেঁকে গিয়েছে৷ চিকিৎসার জন্য কলকাতায় প্রতি মাসে নিয়ে যেতে হয়৷ ট্রেনের সিটে জায়গা হয় না৷ বেসরকারি পরিবহণেও যাতায়াত করা সমস্যায়৷ সবচেয়ে বড় কথা, প্রত্যেক মাসে কলকাতায় নিয়ে যাওয়ার খরচ আর আমরা টানতে পারছি না৷” চিকিৎসা দূরে থাক, এখন সিদ্দিকার দু’বেলা খাওয়ার জোটানোই সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে আফাজুদ্দিনের কাছে৷ ফের কেউ যদি সাহায্যের হাত বাড়ান, এখন সেই প্রতীক্ষাই করছেন তিনি৷ এ প্রসঙ্গে জেলার অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) অমলকান্তি রায় বলেন, “বিষয়টি জানা ছিল না৷ সিদ্দিকার পরিবারের লোকেরা যোগাযোগ করলে ভাবনা-চিন্তা করা হবে৷ সমস্যা কিছু হবে না৷”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.