সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: মেয়ের বিয়ের (Marriage) আচার-অনুষ্ঠানে ‘কন্যাদান’, ‘কনেবিদায়’-এর মতো রীতি আজও চলছে। সময় বদলেছে। তাই কন্যাকে ‘দানসামগ্রী’র সঙ্গে তুলনা করার মতো প্রাচীন ধ্যানধারণা ফেলে আসার দিন আসন্ন। কিন্তু এতদিনকার লালিত সংস্কার ছেড়ে বেরনো কি এত সহজ? তাই তো একটু ভিন্ন ঘরানায় মেয়ের বিয়ের আমন্ত্রণপত্র (Invitation Card) লিখে বিতর্কের (Controversy) মুখে পড়লেন কনের বাবা। কট্টর হিন্দুত্ববাদীদের (Hindutwa) তরফে তাঁকে হুমকিও শুনতে হচ্ছে বলে অভিযোগ। এ নিয়ে বেশ বিপাকে মেয়ের বাবা।
কিন্তু মেয়ের বিয়ের কার্ডে কী এমন লিখেছিলেন ওই ব্যক্তি, যাঁর জন্য তাঁকে হিন্দুত্ববাদীদের সমালোচনার মুখে পড়তে হল? সাধারণ আমন্ত্রণপত্রের মতোই তার বয়ান। শুধু শেষে ইংরাজিতে লেখা – ‘কন্যা দানের সামগ্রী নয়’। আর বাংলা বয়ানের পর লেখা – ‘কন্যা দান নয়, রক্ত দান।’ আর এতেই চটেছেন কট্টরপন্থীরা। তাঁদের মত, কন্যাদান হিন্দু বিবাহের একটি রীতি। এটা ছাড়া বিবাহ সম্পূর্ণ হয় না। তাই মেয়ের কার্ডে ওই ব্যক্তির লেখা – ‘কন্যা দানের সামগ্রী নয়’, এই বক্তব্য হিন্দুত্বের অপমান ছাড়া কিছুই নয়। বাবার অভিযোগ, এ ধরনের সমালোচনা তো আছেই। তার উপর মেয়ের বিয়ে ভেঙে দেওয়ার জন্যও তাঁর কাছে হুমকি ফোন আসছে। এই পরিস্থিতিতে খানিকটা চিন্তিত তিনি। ডিসেম্বরে মেয়ের বিয়ের আগে তাই তৈরি হয়েছে জটিলতা।
বিয়ের আমন্ত্রণপত্রের বয়ান নিয়ে এমন ঘটনা হয়তো প্রথম। তবে সামগ্রিকভাবে হিন্দু বিয়ের আচার নিয়ে তর্কবিতর্ক, সমালোচনা আগেও হয়েছে। সেলুলয়েডের পর্দায় উঠে এসেছে ‘কন্যাদান’ রীতি নিয়ে বিতর্ক। অরিত্র মুখোপাধ্যায় পরিচালিত সিনেমা ‘ব্রহ্মা জানে গোপন কম্মটি’র প্রধান চরিত্র সংস্কৃতের শিক্ষিকা শবরী তথা অভিনেত্রী ঋতাভরী চক্রবর্তীকে (Ritabhari Chakraborty) দিয়ে এই রীতি নিয়ে একটি ছোটখাটো যুক্তিশীল বাদানুবাদ করিয়েছেন। কন্যা ‘দানসামগ্রী’ নয় – এই বার্তা দেওয়া হয়েছে।
সম্প্রতি এক পোশাক প্রস্তুতকারী সংস্থার বিজ্ঞাপন করেছিলেন বলিউড অভিনেত্রী আলিয়া ভাট (Alia Bhat)। তাতে আলিয়াকে কনের সাজে দেখা গিয়েছিল। বিয়ের মণ্ডপে বসে কনের মনের অবস্থা ঠিক কেমন, তা বোঝানোর চেষ্টা করেন অভিনেত্রী। এর মধ্যেই কন্যাদানের প্রসঙ্গটি ওঠে। প্রশ্ন তোলা হয়, কন্যা কীভাবে দানের সামগ্রী হতে পারে? ‘কন্যাদান’ নয়, ‘কন্যামান’ হোক। এই বার্তা দিয়েই শেষ করা হয় বিজ্ঞাপনটি।
নেটদুনিয়ার একাংশের অভিযোগ, আলিয়ার এই বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে হিন্দু ধর্মের বিরুদ্ধে প্রচার করা হচ্ছে। কারও দাবি, হিন্দু ধর্মে কন্যাদান মানে কন্যাকে দান নয়, বরং কন্যার জন্য দান। নিন্দুকদের অভিযোগ, যে ঐতিহ্যের দোহাই দিয়ে এই সংস্থা পোশাক বিক্রি করে তারই অপমান করা হয়েছে বিজ্ঞাপনে। হিন্দু রীতি মেনে বিয়েই যদি না হয়, তাহলে সংস্থার পোশাক কারা পরবেন? এমন প্রশ্নও তোলা হয়।
তবে পর্দার বাইরে বেরিয়ে এবার এই সমস্যা দাঁড়াল বাস্তবের মাটিতে। কন্যাদান নিয়ে ভিন্নমত ব্যক্ত করে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পাত্রীর বাবা। যদিও তাঁর বক্তব্য, তিনি যা বিশ্বাস করেন, সেটাই লিখেছেন। তবে এই মুহূর্তে তিনি খানিকটা বিপন্ন বোধ করছেন। কারণ, মেয়ের বিয়ে ভেঙে দেওয়ার হুমকি আসছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.