ফাইল ছবি।
দেবব্রত দাস, পাত্রসায়ের: পুজোর আগেই মাঠে মাঠে ধান পাকে। আর পাকা ধানের টানেই ওরা আসে। প্রতি বছরের ছকে বাঁধা যেন এই চেনা ছবি। পুজোর আগেই দলমার দাঁতালরা দল বেঁধে পশ্চিম মেদিনীপুরের সীমানা পেরিয়ে চলে আসে বাঁকুড়ায়। তবে দলমার সেই হাতির দল এখনও আসেনি। কিন্তু কবে গজরাজদের আগমন হবে সেই শঙ্কায় পুজোর আগেই ঘুম ছুটেছে বাঁকুড়ার জঙ্গল লাগোয়া গ্রামের বাসিন্দা ও চাষিদের। ফি বছর আশ্বিনের শুরুতেই জেলার মাটিতে পা রেখে দাপিয়ে বেড়ানো দাঁতালরা যে কোনওদিন চলতি বছরেও চলে আসবে বলে এখন থেকেই আশঙ্কায় শুধু জঙ্গল সংলগ্ন গ্রামের বাসিন্দারাই নয়, বনকর্মীরাও।
রাজ্যের মুখ্য বনপাল কুনাল ডাইভেল বলেছেন, “হাতির হানার ক্ষয়ক্ষতি কমাতে বন দপ্তরের পক্ষ থেকে এবার হাতিদের এক জায়গায় রাখার জন্য তাদের খাবারের জোগান দেওয়া জরুরি। সেই জন্য বাঁকুড়ার সোনামুখী রেঞ্জের হামিরহাটি বিটে ও বেলিয়াতোড় রেঞ্জের কাঁটাবেশিয়ায় মাইক্রো হ্যাবিট্যাট তৈরি হচ্ছে। হাতিদের প্রিয় গাছ, গাছালি এখানে লাগানো হচ্ছে। ওই পরিসরে তাদের আটকে রাখার প্রচেষ্টা নেওয়া হচ্ছে। এখনই আতঙ্কের কিছু নেই।”
বন দপ্তরের পরিসংখ্যান বলছে, প্রতি বছর পুজোর আগেই দলমার একটা দল পশ্চিম মেদিনীপুরের সীমানা পেরিয়ে বিষ্ণুপুর পাঞ্চেত বনবিভাগের জঙ্গলে ঢুকে পড়ে। এরপর সেখানে কিছুদিন কাটানোর পরেই তারা বাঁকুড়া উত্তর বনবিভাগের জঙ্গলে আশ্রয় নেয়। হাতির এক একটি দলে কখনও ৩০-৩৫টি হাতি থাকে। আবার কোথাও ৪০-৫০টি থাকে। কোথাও আবার ৬০ থেকে ৮০টি হাতির দল জঙ্গলে ঢুকে পড়ে। বিষ্ণুপুর, জয়পুর থেকে রাধানগর, পাত্রসায়ের হয়ে সোনামুখীর জঙ্গলে তারা আস্তানা গাড়ে। তবে এখানেই শেষ নয়, সোনামুখী থেকে হাতির দল আরও উত্তর-পশ্চিমমুখী হয়ে বেলিয়াতোড়, বড়জোড়া, গঙ্গাজলঘাটি, মেজিয়া হয়ে একেবারে বাঁকুড়া উত্তর রেঞ্জের জঙ্গলেও চলে যায়। আর এই যাতায়াতের পথে কার্যত জঙ্গল লাগোয়া জমির ধান খেয়ে, মাড়িয়ে তছনছ করে দিয়ে যায় হাতিরা।
জমির ফসল নষ্টের পাশাপাশি প্রাণহানির ঘটনাও ঘটে বারবার। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, হাতির দল কোনও রুটই মানে না। বারবার রুটবদল করে। জঙ্গলপথে চলতে গিয়ে আচমকা পাশের ধান জমিতে নেমে পড়ে হাতির দল। লোকালয়ে ঢুকে পড়ে। আর এত বিপুল সংখ্যক হাতির দলকে সামলাতে হিমশিম খেতে হয় বনকর্মীদের। সোনামুখীর হামিরহাটির বাসিন্দা সৌমেন মণ্ডল, মধুময় সিংহ বলেন, “পুজোর আগেই আমাদের মিনিকিট ধান পেকে যায়। আর এই সময়ে হাতির দল ঠিক হাজির হয়ে যায় জঙ্গলে। তবে ওরা তো আর জঙ্গলে থাকে না। জঙ্গল থেকে পাশেই ধানের জমিতে নেমে ফসল খেয়ে মাড়িয়ে নষ্ট করে দেয়। এবার ধান পাকার মরশুম শুরু হয়ে যাবে। সামনেই পুজো। ওদের আসার সময় হয়ে গিয়েছে। তাই আমরা সবাই এখন আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছি।”
বনদপ্তরের এক আধিকারিক বলেন, ”বছরভর হাতির দল জেলার জঙ্গলে ঘোরাফেরা করে। কয়েকটি হাতি আবার রেসিডেন্ট হয়ে এখানকার জঙ্গলে রয়ে গিয়েছে। এখনও বাঁকুড়া উত্তর বনবিভাগের জঙ্গলে ৬টি হাতি রয়েছে। তবে দলমা থেকে আসা বিপুল সংখ্যক হাতির দল এখানে এলেই চিন্তা বাড়ে। ফসল হানির পাশাপাশি প্রাণহানির ঘটনাও ঘটে। পুজোর আগে দলমার হাতির দলের আসার আগাম খবর কিছু নেই। তবে আমরা হাতিদের ঠেকাতে প্রস্তুতি নিয়ে রাখছি।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.