ছবি: প্রতীকী
সৌরভ মাজি, বর্ধমান: ঋণের দায়ে বিষ খেয়ে আত্মঘাতী এক ভাগচাষি। পরিবারের দাবি, সেচের জল না মেলায় মাঠের ধান শুকিয়ে গিয়েছে। ঋণ শোধ করতে পারবেন না। এই নিয়ে মদ্যপ অবস্থায় স্ত্রীর সঙ্গে অশান্তি করে ঘাস মারার বিষ খান স্বপন মাঝি (৫৮)। কয়েকদিন পর হাসপাতালে মৃত্যু হয় তাঁর। মৃতের বাড়ি পূর্ব বর্ধমানের আউশগ্রাম থানার সাঁতলা গ্রামে। রবিবার বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় তাঁর। যদিও প্রশাসনের তরফে দাবি করা হয়েছে, এই ঘটনার সঙ্গে চাষের সরাসরি কোনও সম্পর্ক নেই। পারিবারিক বিবাদেই এই ঘটনা।
[রাগের বশে পুলিশের সামনেই পোশাক খুললেন মদ্যপ তরুণী, ভাইরাল ভিডিও]
সোমবার মৃতদেহের ময়নাতদন্তের সময় বর্ধমান মেডিক্যালে এসেছিলেন মৃতের ছেলে মোহন মাঝি, আত্মীয় আনন্দমোহন মেটেরা। তাঁরা জানান, চলতি মরশুমে প্রায় ৫ বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছিলেন। এর জন্য গ্রামেরই কয়েকজনের কাছে হাজার পাঁচেক টাকা ঋণও নিয়েছিলেন। কিন্তু এবার বৃষ্টিপাত হয়নি সেভাবে। এছাড়া এলাকায় মাটির জলধারণ ক্ষমতাও কম। তাই মাঠের ধান মাঠেই শুকিয়ে গিয়েছে। ফলে চাষে ব্যাপক ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা করছেন তাঁরা। মোহনবাবু জানান, ঋণ নিয়ে এইভাবে চাষ করার জন্য তাঁর মায়ের তীব্র আপত্তি ছিল। এই নিয়ে মাঝে মাঝে অশান্তিও হত বাড়িতে। স্বপনবাবু মাঝে মাঝেই মদ্যপান করতেন বলেও জানিয়েছেন ছেলে মোহন। তা নিয়েও অশান্তি হত বাড়িতে। গত ২২ অক্টোবর এই নিয়ে অশান্তি চরমে ওঠে।
মোহনবাবু জানান, ওইদিন সকালে তিনি ও তাঁর ভাই দিনমজুরের কাজ করতে চলে গিয়েছিলেন। বাড়িতে বাবা ও মা ছিলেন। দুপুরে খাওয়াদাওয়া করে তাঁরা আলাদা ঘরে শুয়েও পড়েন। বিকেল ৪টে নাগাদ বাড়ি ফিরে দেখেন তাঁর বাবার যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। তাঁরা প্রথমে ভেবেছিলেন মদের ঘোরে এমনটা করছেন। কিন্তু পরে তাঁরা বুঝতে পারেন অন্য কিছু ঘটেছে। ঘরে থাকা ঘাস মারা বিষের শিসি খালি দেখে তাঁরা নিশ্চিত হন বিষ খেয়েছেন স্বপনবাবু। সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে কাছে বীরভূমের বোলপুর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। গত বৃহস্পতিবার সেখান থেকে তাঁকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়। রবিবার সেখানেই মৃত্যু হয় ওই কৃষকের।
পরিবারের তরফে চাষের ক্ষতির আশঙ্কা থেকে স্বপনবাবু আত্মঘাতী হয়েছে বলে দাবি করা হলেও প্রশাসন তা মানতে নারাজ। জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি দেবু টুডু বলেন, “চাষে ক্ষতি হলে একমাত্র আমাদের মুখ্যমন্ত্রীই ক্ষতিপূরণ দিয়ে থাকেন কৃষকদের। প্রশাসন সবসময় কৃষকদের পাশে থাকে। তাই চাষের ক্ষতির আশঙ্কায় আমাদের জেলায় কোনও কৃষক আত্মঘাতী হন না। প্রাথমিকভাবে খোঁজ নিয়ে দেখা গিয়েছে এই ঘটনার পিছনে অন্য কারণ রয়েছে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.