রাজা দাস, বালুরঘাট: বাংলার হেঁশেল আগেই গোটা দেশের রসাস্বাদনে প্রশংসা কুড়িয়েছে। শুধু কি তাই? এখানকার হরেক রেসিপি বিদেশেও সমাদৃত। পিৎজ্জা, বার্গার, স্যান্ডউইচ কিংবা রকমারি স্বাদের চকোলেটের ভিড়েও বাংলার রসগোল্লা কিংবা দই (Curd) স্বতন্ত্র্য স্বাদে আলাদাভাবে নজর কাড়ে। এবার সেই স্বাদের জোরেই দক্ষিণ দিনাজপুরের (South Dinajpur) নয়াবাজারের দই পাড়ি দিল সুদূর আমেরিকায়। লকডাউনের সময় ক্ষতির ফাঁড়া কাটিয়ে আমেরিকার বাজার এভাবে খুলে যাওয়ায় স্বভাবতই খুশি বিক্রেতারা।
নয়াবাজারের দই সাত সমুদ্র তেরো নদী পেরিয়ে আগেও প্রবাসে পাড়ি দিয়েছে। তবে এবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (USA) থেকে এসেছে বরাত। দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার বিখ্যাত নয়াবাজারের দই, যার খ্যাতি রয়েছে শহর ছেড়ে গ্রাম, জেলা, রাজ্য-সহ ভারতে। যেমন অতুলনীয় গন্ধ তার, তেমনই স্বাদ (Taste)। সেই কারণেই বহু দূরদূরান্ত থেকে মানুষ ছুটে আসেন নয়াবাজারের দই কিনতে। নয়াবাজারের দইয়ের নানা প্রকার রয়েছে। ক্ষীর দই, টকদই, সাদাদই, চিনিপাতা দই এবং মিষ্টি দই – সবই বিখ্যাত নয়াবাজারের।
কীভাবে তৈরি হয় এই দই? জানা যাচ্ছে, পুরনো রীতি মেনেই দুধ সংগ্রহের পর মাটির সরা বা পাত্রে দই প্রস্তুত করেন বিক্রেতারা। চাহিদার কারণে এখানে শাক-সবজির মত দুধের হাট বসে প্রতিদিন। দূর দূরান্ত থেকে শতাধিক ব্যবসায়ী দুধ নিয়ে আসেন এই হাটে। প্রতিদিন কম করে ১০ হাজার লিটার দুধ বেচা কেনা হয়। ৪০-৬০ টাকা কেজি/ লিটার দরে দুধ কিনে কারিগররা সাধারণত তিন ধরনের দই উৎপাদন করেন। যার মধ্যে ক্ষীর দই, খাসা দই ও সাধারণ দই। ক্ষীর দইয়ের বর্তমান বাজার মূল্য ২৮০ টাকা প্রতি কেজি। খাসা দই ১৪০ টাকা প্রতি কেজি ও সাধারণ দই ১১০ টাকা প্রতি কেজিতে বিক্রি করেন। এছাড়াও স্পেশাল অর্ডার পেলে চন্দ্রচূড় দই তৈরিও করেন তারা। যার বাজার মূল্য প্রায় ১০০০-১২০০ টাকা প্রতি কেজি।
শুধুমাত্র জেলা নয় প্রতিবেশী রাজ্য বিহারে এই দই রফতানি করা হয়। চাহিদায় থাকা কলকাতাতেও নয়াবাজারের দই পাঠানো হয় বাসে চাপিয়ে। তবে ইদানিং এই দই-এর সুনাম পৌঁছায় সূদূর আমেরিকা ও দুবাইয়ের মত দেশগুলিতে। এরপরেই তা পসার সাজাতে শুরু করেছে সেখানে।
জন্মদিন বিয়ে থেকে শুরু করে নানান অনুষ্ঠানে অতিথি আপ্যায়নে নয়াবাজারের দইয়ের জনপ্রিয়তা (Popularity) তুঙ্গে বহু প্রজন্ম ধরে। নয়াবাজারের দই বিক্রেতা বিপ্লব ঘোষ বলেন, “উত্তরবঙ্গ দক্ষিণবঙ্গের সমস্ত জেলা, পার্শ্ববর্তী রাজ্য এমনকী আমেরিকাতেও আমাদের দই পাড়ি দেয় প্রত্যেক বছর। গত দুবছর লকডাউনে (Lockdown) ব্যবসা কিছুটা খারাপ হলেও, ফের ব্যবসা ভালো হচ্ছে। আমরা খুশি।” দই কিনতে আসা ক্রেতা মানিক সরকার বলেন, ”নয়াবাজারের দই রাজ্যজুড়ে নামডাক রয়েছে। সাধ্যের মধ্যে এত সস্তায় এরকম ভালো দই পশ্চিমবঙ্গে কোথাও পাওয়া যাবে না।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.