অভিষেক চৌধুরী,কালনা: জঙ্গি সংগঠন আল কায়দার সঙ্গে যোগ। এই কারণে বাড়ির রোজগেরে ছেলে সুকুর আলি শেখ ও সইফ নওয়াজকে গ্রেপ্তার করেছে গুজরাটের সন্ত্রাস দমন শাখা। স্বাভাবিক কারণেই মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে নাদনঘাট ও কালনা থানার অন্তর্গত দুই পরিবার। উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠায় দিন কাটছে তাঁদের। শুধু তাই নয়, নাদনঘাটের ঘোলা এলাকার আরও এক যুবক হানিফ মল্লিককে পুলিশ তুলে নিয়ে গেলেও শুক্রবারও তাঁর কোনও খবর মেলেনি। তাই একরাশ দুশ্চিন্তায় কপালে ভাঁজ পড়েছে বাবা আমিনুল মল্লিক ও মা হাসিনা খাতুনের।
এমনই এক সংকটময় মূহূর্তে সুকুর আলি শেখের হয়ে আইনি পরামর্শ নিতে গিয়ে সমস্যায় পড়েছে গরিব ওই পরিবারটি। পরিবারের সদস্যদের দাবি, স্থানীয় একজনের পরামর্শে আইনজীবীর নাম করে ফোন করা ব্যক্তিকে বেশ কয়েক হাজার টাকা অনলাইন মাধ্যমে পাঠিয়ে দেয় ওই পরিবার। কিন্তু তারপর তাঁর খোঁজ আর মিলছে না। ফলে নুন আনতে পান্তা ফুরানোর সংসার আরও এক বিপদের সম্মুখীন হয়েছে বলে জানান সুকুরের দাদা বাপন শেখ। ছত্তিশগড়ের রায়পুরে গয়নার কাজের সঙ্গে যুক্ত বাপন বলেন, “আমার ভাই নির্দোষ। ও চক্রান্তের শিকার। তাই ভাইকে বাঁচাতে গ্রামের বাড়ির একজনের পরামর্শে আহমেদাবাদের আইনজীবীর নাম করে পরিচয় দেওয়া এক ব্যক্তির ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অনলাইনে ১৬ হাজারেরে বেশি টাকা পাঠান। তাও আবার বন্ধুদের থেকে ধার নিয়ে। ওই ব্যক্তি ভাইয়ের জামিন করে দেওয়ার আশ্বাস দেন। শুধু তাই নয়, যাদের এই ঘটনায় ধরা হয়েছে, তাদের সকলেরই একের পর এক নাম করেন ওই ব্যক্তি। গ্রামের আর একজন হানিফের পরিবারের সঙ্গেও তার যোগাযোগ হয়েছে বলে তিনি জানান।”
বাপন আরও জানান, “তারকেশ্বরের আমন তারা উকিল দিয়ে দিয়েছেন। আর তার যদি জামিন হয়ে যায়, তাহলে আমার ভাই নাকি দোষী প্রমাণিত হবে। এরপরই প্রথমে ১৮ হাজার ৫০০ টাকা চান। পরে আমার অনুরোধে দু-হাজার টাকা ছাড় দেয়। শুধু তাই নয়, এই রেটের কথা কাউকে জানাতেও নিষেধ করেন তিনি।” কিন্তু টাকা পাওয়ার পর ওই ব্যক্তির ফোন সুইচ অফ হয়ে যায়। শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত তাঁর আর খোঁজ মেলেনি। সুকুরের বাবা হজরত শেখ জানান, কোনওরকমে আমাদের সংসার চলে। তার উপর এক রোজগেরে ছেলেকে পুলিশ অন্যায়ভাবে ধরেছে। ছেলেকে বাঁচাতে গিয়ে আবার নতুন সমস্যা পড়তে হয়েছে।
এদিকে সুকুরের গ্রামের এক প্রতিবেশী যুবক হানিফ মল্লিককে পুলিশ রাজকোট থেকে তুলে নিয়ে যায় বলে দাবি তাঁর পরিবারের। যদিও পরে মা-কে ফোন করে হানিফ জানান তিনি ভাল আছেন। তাঁকে শুক্রবার ছেড়ে দেবে। কিন্তু এদিন কোনও খোঁজ মেলেনি তাঁর।
অন্যদিকে ছেলেকে বাঁচাতে আইনি পরামর্শ নেবেন বলে জানান কালনার আঙ্গারসনের ধৃত যুবক সইফ নওয়াজের বাবা আবু শাহিদ। কিন্তু আর্থিক অনটনের জন্য কিছু করে উঠতে পারেননি। এলাকার ভাল ছেলে হিসাবে পরিচিত এক সময়ের কালনা কলেজের পড়ুয়া সইফ নওয়াজকে জঙ্গি কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত থাকায় গুজরাট জঙ্গিদমন শাখা গ্রেপ্তার করার ঘটনাকে মেনে নিতে পারছে না পরিবার। সকলেরই দাবি, তাঁদের ফাঁসানো হয়েছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.