বিপ্লবচন্দ্র দত্ত, কৃষ্ণনগর: দেশবাসীর সুরক্ষার গুরুদায়িত্ব তুলে নিয়েছিলেন কাঁধে। দেশের বিপদসংকুল স্থানে পোস্টিংই ছিল পছন্দের। তাই তো সুকমার সিআরপিএফ ক্যাম্পে (CRPF Camp) দিব্যি দিন কাটছিল তাঁর। কিন্তু কে-ই বা জানত সেখানেই ওঁৎ পেতে আছে মৃত্যু? অথচ বাস্তবে ঘটল তাই। সোমবার কাকভোরে সহকর্মীর এলোপাথাড়ি গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে গেল নদিয়ার (Nadia) সিআরপিএফ জওয়ান রাজীব মণ্ডলের শরীর। সকালে যখন সুদুর সুকমা থেকে নদিয়ার দেবগ্রামের বাড়িতে এল সেই খবর, তখন প্রথমটায় বিশ্বাসই হয়নি কারও। তারপর টেলিভিশনের পর্দায় চোখ রেখে বোঝা গেল, খবর সত্যি। তাঁদের ছেলে আর নেই। যেন আকাশ ভেঙে পড়ল মাথায়। দিন কয়েক আগেও যে ছেলেটা সুসংবাদ দিয়েছিল, সে আজ নেই!
নদিয়ার দেবগ্রামের মণ্ডল পরিবার। বছর তিরিশের ছেলে রাজীব। দেশের কাজে ব্রতী হয়ে ২০১০ সালে আধা সামরিক বাহিনীতে যোগ দেন। পরীক্ষা, ইন্টারভিউ, ট্রেনিং পর্ব পেরিয়ে সিআরপিএফে যোগদান। ২০১৩ সালে বিয়ে, দুই সন্তানের বাবা হওয়া। চলতি বছরই রাজীবকে সুকমার (Sukma) ৫০ নং ব্যাটেলিয়ানে ট্রান্সফার করা হয়। তাঁর ঠিকানা হয়, সুকমার মারাইগুড়ি থানার সিআরপিএফ ক্যাম্প। ভালই চলছিল সব। মাস খানেক আগে নদিয়ার বাড়িতেও ফিরেছিলেন রাজীব। আনন্দে মুখর হয়ে উঠেছিল গোটা পরিবার।
ছুটি শেষে দেবগ্রামের বাড়ির টান কাটিয়ে সিআরপিএফ জওয়ান রাজীব মণ্ডল ফিরে যান সুকমার সিআরপিএফ ক্যাম্পে। ছত্তিশগড়ের প্রত্যন্ত এলাকা থেকে ঠিকমতো নেটওয়ার্ক পাওয়া যায় না বলে ফোনে কথা খুব কম হতো। কান্নাভেজা গলায় জানাচ্ছেন অসুস্থ মা। বলছেন, ”চারদিন আগেও ফোনে কথা হয়েছিল। বলছিল, মা চিন্তা কোরো না। আমি ভাল আছি। তোমার জন্য টাকা পাঠাচ্ছি। ভাল করে ডাক্তার দেখিও।” অসুস্থ মায়ের জন্য চিন্তা রাজীব সবসময় চিন্তিত থাকতেন। দূরে থেকেও চেষ্টা করতেন, যাতে মায়ের চিকিৎসা হয় ঠিকমতো। সোমবার সকালে বাড়িতে তাঁর মৃত্যু সংবাদ যখন, তখন স্ত্রী সুলেখা ছিলেন না বাড়িতে। বাপের বাড়ি থেকে ছুটতে ছুটতে আসেন সুলেখা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.