সৈকত মাইতি, তমলুক: উচ্চশিক্ষার জন্য দু’চোখে ভরা স্বপ্ন নিয়ে বিদেশে পাড়ি দিয়েছিল কোলাঘাটের (Kolaghat) মেধাবী যুবক। কিন্তু পরিণতি হল মর্মান্তিক! সামান্য শারীরিক অসুস্থতা থেকে নিভে গেল জীবন প্রদীপ। ছেলের নিথর দেহ ফিরে পাওয়ার আশায় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর দ্বারস্থ হতে চলেছেন শোকে পাথর অসহায় মা।
কোলাঘাটের (Kolaghat) দেউলিয়া এলাকার বাসিন্দা বছর ৩১-এর যুবক সমীক মাইতি। বাবা কমল মাইতি। পেশায় তিনি মেচগ্রামের একটি আশ্রমে সামান্য মাইনের শিক্ষক ছিলেন। তা দিয়েই দুই ছেলের পড়াশুনোর খরচ, সংসারের যাবতীয় দায়িত্বভার সামলানো। বড় ছেলে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়া। ছোট ছেলে কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র সাম্যদ্বীপ। এর মধ্যেই আচমকা বছর তিনেক আগেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান কমলবাবু। তাতেই যেন মাথার উপর আকাশ ভেঙে পড়ে। এমন অবস্থায় বড় ছেলে সমীক মাইতি এম টেক ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার পর স্পেশ্যাল কোর্স এর জন্য পাড়ি দেন প্যারিসে। সেখানে কম্পিউটেশন মেকানিক্স নামে চার বছরের একটি ইন্টিগ্রেটেড কোর্স এ প্যারিসের স্ট্রাউস বার্গ ইউনিভার্সিটিতে গবেষণারত ছিলেন তিনি। গত জানুয়ারি মাসেই শেষবারের মতো বাড়ি ফিরেছিল সমীক।
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, কয়েক দিনের ছুটি কাটিয়ে ফের প্যারিস ফিরে যায় কোলাঘাটের ওই মেধাবী ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়া। ১ মে নাগাদ প্যারিসে গিয়ে তাঁর জন্ডিস ধরা পড়ে। চিকিৎসকদের পরামর্শ মত হাসপাতালে ভরতি হতে হয়। সেখানেই চলতি মাসের ৯ তারিখে তার গলব্লাডার স্টোন অপারেশন হয়। এরপর কয়েকদিন শারীরিক অবস্থার উন্নতি হলেও ফের ১৬ তারিখ তার পেটের অসহ্য যন্ত্রণা হতে শুরু করে। আই সি ইউ তে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৩ তারিখ তাঁর মৃত্যু হয়। আর এই খবরে আকাশ ভেঙ্গে পড়ে কোলাঘাটের দেউলিয়ার এই মাইতি পরিবারে। এরপর আবার বিদেশের মাটি থেকে নিহত ছেলের দেহ দেশে ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে বিপুল খরচের বোঝা যেন নতুন করে দুশ্চিন্তায় ফেলেছে তাদের। ছেলেকে শেষ টুকু দেখার আশায়, তাই সহায় সম্বলহীন অবস্থায় জেলা প্রশাসন থেকে শুরু করে দেশের বিদেশ মন্ত্রী জয় শংকর এর দ্বারস্থ হয়েছেন পরিবার। কিন্তু তাতেও কোনও ফল না হওয়ায় এবার তাই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর দ্বারস্থ হতে চলেছেন নিহত ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়ার মা বিজলী দেবী। কান্নায় ভেঙে পড়ে মা বিজয়ী বলেন, এখন প্রায় সবটুকুই হারিয়েছি। আশার প্রদীপ হিসেবে বড় ছেলের দেহটুকু ফিরে পেতে আমরা রাজ্যের মৎস্য মন্ত্রী থেকে শুরু করে বিদেশমন্ত্রীর দ্বারস্থ হয়েছিলাম। কিন্তু কোন আশার আলো দেখতে না পাওয়ায় আমরা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর কাছে প্রার্থনা জানাচ্ছি।”
মৃত ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়ার কাকা সুনীল মাইতি বলেন, “প্রায় সাড়ে তিন বছর আগে বিশ্ব ব়্যাঙ্কিংয়ে ২০ জনের মধ্যে ভারতবর্ষ থেকে একমাত্র কৃতি ছাত্র হিসেবে সুযোগ পেয়ে প্যারিসে পাড়ি দিয়েছিল সমীক। সামনের জুলাইয়ের দিকেই সেই কোর্স শেষে বিদেশের মাটিতেই মোটা মাইনের চাকরির হাতছানি এসেছিল। কিন্তু তার মধ্যেই যে শেষ পরিণতিটা এভাবে হবে তা ভাবতেই পারিনি কেউ।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.