শাহজাদ হোসেন, ফরাক্কা: মঙ্গলবার রাতে কাশ্মীরে কুলগামের কাতরাসু গ্রাম যে ঘটনার সাক্ষী থেকেছে তা এক কথায় নৃশংস। নির্বিচারে গুলি চলেছে মুর্শিদাবাদের পাঁচ শ্রমিকদের উপর। মৃত্যু হয়েছে পাঁচজনেরই। গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আরও ১ শ্রমিক। সেই খবর পৌঁছতেই কার্যত থমকে গিয়েছে মুর্শিদাবাদের সাগরদিঘির জনজীবন। কান্নায় ভেঙে পড়েছেন মৃতের পরিবারের সদস্যরা।
রাতে খবর পৌঁছতেই চোখের জল যেন বাঁধ মানছে না নইমুদ্দিনের পরিবারের। মৃতের দাদা জসিমুদ্দিন শেখ জানান, ১৮ বছর ধরে কাশ্মীরে কাজ করতে যেতেন তাঁর ভাই। গ্রামে কোনও কাজ নেই বলে, গত মাসের ২৫ তারিখ কাশ্মীর চলে গিয়েছিলেন তিনি। ভাবতেই পারেননি যে এই যাওয়াই কাল হবে।
একই ছবি মুরসালিমের পরিবারেও। গত রাতে টিভির মাধ্যমে অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়া সাহানা খাতুন জানতে পেরেছিল যে, কাশ্মীরে কিছু একটা হয়েছে। আশঙ্কা করলেও মন শক্ত রেখেছিল। কিন্তু আশঙ্কাই সত্যিই হল। রাতেই স্থানীয় থানার তরফে মুরসালিমের মৃত্যুর খবর পাঠানো হল তাঁর বাড়িতে। একথা বলতে গিয়েই কান্নায় ভেঙে পড়েছে মুর সেলিমের মেয়ে।
কামিরুদ্দিনের দাদা বাকের আলি জানান, চরম অর্থাভাবের কারণেই কিছুটা অনিচ্ছা সত্বেই কাশ্মীরে পাড়ি দিয়েছিল ভাই। ভেবেছিল পরিবারের সমস্যা মিটবে। কাশ্মীরের সমস্যার কারণে তাঁরা যেতে বারণও করেছিলেন। কিন্তু নাহ, তাও দুটো টাকা উপার্জনের আশায় ঘর ছেড়েছিল ভাই। কামিরুদ্দিনই পরিবারের একমাত্র রোজগেরে ছিলেন। তাই তাঁর মৃত্যু কার্যত এক অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলে দিল গোটা পরিবারকে।
জানা গিয়েছে, মুর্শিদাবাদের যে কজন শ্রমিক কুলগামে গিয়েছিলেন তাঁরা সকলেই আপেল তোলা ও ধান কাটার কাজে গিয়েছিলেন। কাতরাসুতে ঘর ভাড়া নিয়ে থাকতেন ৮ জন। মঙ্গলবার রাতে কাজ সেরে ফিরে সেখানেই ছিলেন সকলে। এরপর সাড়ে সাতটা নাগাদ খাবার আনতে বের হন বাসিরুল সরকার ও বাবু সরকার নামে দু’জন। আর ঠিক সেই সময়ই শ্রমিকদের ডেরায় হানা দেয় দুষ্কৃতীরা। অপরহণের পর এলোপাথারি গুলিতে ঝাঁঝরা করে দেওয়া হয় নইমুদ্দিন শেখ, মুরসালিম শেখ, রফিকুল শেখ, রফিক শেখ ও কামরুদ্দিন শেখকে। পালাতে গিয়ে জখম হন জাহিরুদ্দিন। সূ্ত্রের খবর, বর্তমানে শ্রীনগর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তিনি। ফলে এক অজানা আতঙ্কের প্রহর কাটাচ্ছেন নিহত শ্রমিকদের পরিবার। আর্থিক সামর্থ নেই, তাই তাঁরা এটাও জানেন না যে ঘরের ছেলে দেহ আদৌ বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছবে কি না। তবে নিহতদের পরিবারকে সাহায্য করা হবে, এমনই আশ্বাস মিলেছে পুলিশের তরফে। একই অবস্থা কাশ্মীরে কর্মরত সাগরদিঘির অন্যান্য শ্রমিকদের পরিবারের। কারণ, এই ঘটনার পরই পুলিশের তরফে বহু শ্রমিককে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেই কারণে তাঁদের সঙ্গেও যোগাযোগ করতে পারছেন না পরিবারের সদস্যরা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.