অভিষেক চৌধুরী, কালনা: ছুটির দিনে বেড়াতে গিয়ে ভিনরাজ্যে প্রাণ হারাতে হয়েছে। মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ার মতো এই খবরে এসে পৌঁছেছিল কালনার (Kalna) যুবকের বাড়িতে। শোক খানিকটা সামলে ছেলের মরদেহ ফেরার অপেক্ষায় প্রহর গুনছিলেন প্রিয়জনরা। কিন্তু সেই দেহ যেভাবে ফিরল, তাতে চমকে উঠলেন তাঁরা। মুখ রক্তাক্ত, চেনার উপায় নেই, পোশাক দেখে শুধু ছেলের দেহ বলে চিনতে পারছেন মা। আর তাতে শোক যেন আরও পাথরের মতো চেপে বসল। যাঁরা মৃত হাবিবুলকে সঙ্গে নিয়ে ফিরেছিলেন, তাঁদের অভিযোগ, কোনও সাহায্যই করেনি গুজরাট (Gujarat) সরকার। বিমান ভাড়া পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। বাধ্য হয়ে ধার করে দেহ ফেরাতে হয়েছে।
রবিবার, ছুটির দিন বন্ধুদের সঙ্গে গুজরাটের মোরবির মচ্ছু নদীর উপরের কেবল ব্রিজ দেখতে গিয়েছিলেন হাবিবুল। আনন্দ করে ফিরে আসারই পরিকল্পনা ছিল। যাওয়ার সময়েও কেউ ভাবেননি এমন বিপদ আসতে চলেছে তা ক্ষুণাক্ষরেও টের পাননি। তবে বাস্তবে ঘটল তাই। ব্রিজ বিপর্যয়ে (Morbi Bridge Collapse) প্রাণ গিয়েছে বাংলার যুবকের। নিহত হাবিবুল শেখ, পূর্ব বর্ধমানের পূর্বস্থলী (Purbasthali) দু’নম্বর ব্লকের মুকসিমপাড়া পঞ্চায়েত কেশববাটি এলাকার বাসিন্দা। ছোট থেকে বেশ মেধাবী। পড়াশোনায় ভালই ছিলেন হাবিবুল। তবে অভাব প্রতি মুহূর্তে স্বপ্নপূরণে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই তো মেধাবী ছাত্র হাবিবুলকে একাদশ শ্রেণির পরই পড়াশোনায় ইতি টানতে হয়। চাষবাস করে যা আয় হবে, তাতে সংসারের খরচ সামাল দিতে কালঘাম ছুটেছে বাবার। তাই নিজে আর সে পথে এগোননি। পরিবর্তে সোনার কাজ করার জন্য পাড়ি দিয়েছিলেন গুজরাটে।
সোমবার মাঝরাত, প্রায় আড়াইটে নাগাদ কফিনবন্দি মরদেহ পৌঁছয় কেশববাটিতে। মুখ দেখেই আঁতকে ওঠেন মা লুৎফা বিবি। রক্তেমাখা মুখ। চেনাই দায়। তাঁকে নিয়ে এসেছেন দুই ভাই ইউসুফ ও সাবির। তাঁরাও গুজরাটে সোনার কাজ শিখতে গিয়েছিল। গ্রামে ফিরে তাঁরাই অভিযোগ করেছেন, খারাপভাবে দেহ ফেরত পাঠানো হয়েছে। যেন মাছ আনা হচ্ছে। কোনও ব্যবস্থাই নেই। বিমানভাড়া পর্যন্ত পাওয়া যায়নি সরকারের তরফে। কোনওক্রমে ধার করে তবে দেহ ফেরানো হয়েছে। মায়ের আক্ষেপ, ”কোনওদিন ওর কোনও চাহিদা ছিল না। সংসারের অভাব ও বুঝত। তাই তো বাইরে কাজ করতে গিয়েছিল। কিন্তু এমনটা হবে, কল্পনাও করিনি।”
রাতেই হাবিবুলের বাড়িতে যান রাজ্যের মন্ত্রী তথা পূর্বস্থলীর বিধায়ক স্বপন দেবনাথ। ছিলেন স্থানীয় বিধায়ক তপন চট্টোপাধ্যায়, জেলা তৃণমূল সভাপতি রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়, বিডিও, আইসি-সহ জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের আধিকারিকরা। মহাদেবপুর হাই স্কুলে পড়াশোনা করতেন হাবিবুল। সেখান থেকেও এসেছিলেন শিক্ষকরা। প্রধান শিক্ষক জানিয়েছেন, ”হাবিবুলের মিষ্টি ব্যবহার ছিল, সবসময়ে মুখে হাসি লেগে থাকত। খুব পরিশ্রমী। তাঁর এভাবে মৃত্যু মেনে নেওয়া যাচ্ছে না।” এদিন ভোর ৫.৫০ নাগাদ সমাধিস্ত করা হয় হাবিবুলকে। জেলা প্রশাসন সবরকমভাবে পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছে। দেহ ফেরানো ও আপৎকালীন পরিস্থিতির জন্য অর্থ তুলে দেওয়া হয়েছে তাঁদের হাতে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.