ছবি: প্রতীকী
শান্তনু কর, জলপাইগুড়ি: নৈসর্গিক প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ওঁদের সেই অর্থে টানে না। জঙ্গি কিংবা পাহাড়ি ধসের ভয় উপেক্ষা করেও ওদের কাছে কাশ্মীর পাড়ি দেওয়ার একমাত্র কারণ অধিক উপার্জন। প্রতি বছর ধূপগুড়ির গধেয়ার কুঠি এবং মাগুর মারি গ্রাম থেকে ৫০ জনের বেশি যুবক কাশ্মীর যান বেড়াতে নয় কাজের উদ্দেশ্যে। পেটের টানে ভিন রাজ্যে পাড়ি দেওয়াই কাল। জম্মুর রামবান টানেলে প্রাণ গেল পাঁচ শ্রমিকের। এখনও নিখোঁজ বেশ কয়েকজন। তাঁদের খোঁজে চলছে তল্লাশি।
ধূপগুড়ির বাসিন্দাদের মূল আয়ের উৎস মূলত আলু চাষ। ডিসেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত চার মাস জমিতে কাজ থাকে। তারপর? বাকি আটমাস আয় নেই। আয় না হলে পেট ভরবে কীভাবে? সে কারণেই গত ৩ মে ধূপগুড়ির গধেয়ার কুঠি, মাগুর মারি গ্রাম থেকে ১৫ জন যুবক শ্রমিকের কাজ করতে কাশ্মীর পাড়ি দেন। মৃত পাঁচজন ওই দলের সদস্য। বাকিরা নিখোঁজ। দুশ্চিন্তার প্রহর গুনছেন পরিবার এবং প্রতিবেশীরা। গ্রামবাসীদের বক্তব্য, এলাকায় যদি নিয়মিত কাজ থাকত, তা হলে কেউ আর ঝুঁকি নিয়ে ভিনরাজ্যে পাড়ি দিতেন না। মাগুরমারির মল্লিক পাড়া বাসিন্দা নিখোঁজ যাদব রায়ের পরিবারে বৃদ্ধ বাবা-মা আর সতেরো বছরের ছোট ভাই রয়েছেন। মেজো ভাই গত মাসে শ্রমিকের কাজ করতে কেরলে যান।
শুক্রবার সন্ধেয় যাদবের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন তৃণমূলের জলপাইগুড়ি জেলা সভানেত্রী মহুয়া গোপ। পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস দেন তিনি। মহুয়ার অভিযোগ, বাংলার পাঁচ যুবকের মৃত্যুর জন্য কেন্দ্র সরকার অনেকাংশেই দায়ী। কারণ, কেন্দ্র ১০০ দিনের কাজের টাকা আটকে রেখেছে। গত তিন মাস ধরে কাজ করেও মজুরি পাচ্ছেন না মাগুর মারি, গধেয়ার কুঠি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার বহু শ্রমিক। মহুয়া আরও বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী চাইছেন গ্রামের মানুষ গ্রামেই কাজ করুক। কিন্তু কেন্দ্র পদে পদে বাধা দিচ্ছে।”
ধূপগুড়ির বিধায়ক তথা বিজেপি নেতা বিষ্ণুপদ রায় যদিও অভিযোগ মানতে নারাজ। তাঁর বক্তব্য, “এ সব রাজনীতির কথা। মানুষের কাজ নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনও প্রকল্প রাজ্য সরকারের হাতে নেই। কাজ না পেয়েই আজ গ্রামের ছেলেরা কেউ কেরলে কেউ কাশ্মীরে পাড়ি দিচ্ছে। একশো দিনের কাজে স্বজনপোষণ এবং দুর্নীতি চলছে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.