চন্দ্রশেখর চট্টোপাধ্যায়, আসানসোল: পরনে জলপাই রঙের পোশাক। ছোট চুল, দিন পাঁচেক না কামানো দাড়িগোঁফ। সোমবার রাতে মূর্তিমান হাজির হয় আসানসোল জেলা হাসপাতালে। জয় গঙ্গোপাধ্যায় নামে ওই যুবক নিজেকে পুলওয়ামার জঙ্গি হামলা থেকে সদ্য বেঁচে ফেরা জওয়ান বলে পরিচয় দেয়৷ দাবি, সেই নৃশংস হামলার সাক্ষী তিনি। সিআরপিএফের ১০৭ নম্বর ব্যাটেলিয়নে কর্মরত। কিন্তু রাত কাটতে না কাটতেই তার মুখোশ গেল খুলে। বেরিয়ে এল আসল পরিচয়। জানা গেল, হাসপাতালে বাড়তি সুবিধা পেতে জওয়ানের ভুয়ো পরিচয় দিয়েছিলেন। এমন অপরাধে আপাতত পুলিশের হাতে আটক ওই ব্যক্তি।
জয়ের বাড়ি বাঁকুড়ার সোনামুখিতে, শ্বশুরবাড়ি আসানসোলের হীরাপুরে। জম্মুর জঙ্গি হামলার খবরে স্ত্রী শ্রাবণী অসুস্থ হয়ে জেলা হাসপাতালে ভরতি হওয়ায় ছুটে আসা বলে জানায়৷ পরিচয় দিয়েছিল, পুলওয়ামা হামলা থেকে বেঁচে ফেরা এক জওয়ান হিসেবে। এরকম একজন ‘রিয়েল হিরো’কে সামনে পেয়ে সকলে তো মহা খুশি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ থেকে পুলিশ কেউ জয় গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করে আবার কেউ এগিয়ে গিয়ে কথাও বলেন৷ সুপার নিজে তাঁর অসুস্থ স্ত্রীর জন্য বিশেষ চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। বাড়িয়ে দেওয়া হয় হাসপাতালের নিরাপত্তা। সেলফি তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন হাসপাতালের কর্মীরা। রাজ্য ও জাতীয় স্তরের সংবাদমাধ্যম ছুটে এলে বুমের সামনে চোয়াল শক্ত করে পাকিস্তানকে বদলা নেওয়ার অঙ্গীকার করেন। পুলওয়ামা হামলা নিয়ে একাধিক গল্প বলতে থাকেন জয়।
পুলওয়ামা নিয়ে বিতর্কিত পোস্ট, গণপিটুনির পর যুবককে কান ধরে ওঠবোস
এতদূর পর্যন্ত সব ঠিক ছিল। তবে পরেরদিকে তার আচার-আচরণ নিয়ে সন্দেহ জাগে স্থানীয় বাসিন্দাদের। বাঁকুড়া থেকে খবর আসে, জয় আদৌ জওয়ান নয়। যোগাযোগ করা হয় জয়ের মা মঞ্জু গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে। তিনি জানান, তাঁর ছেলে সিবিআই-এ কাজ করে। কলকাতায় থাকে। ব্যস, ঝুলি থেকে বেরিয়ে পড়ল বেড়াল। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছবি ও খবর সম্প্রচারিত হতেই হাঁড়ি ভেঙে গেল হাটের মাঝে। মূহূর্তের মধ্যে ‘রিয়েল হিরো’র আসল পরিচয় ধরা পড়ল। জানা গেল, নিজেকে সিআরপিএফ জওয়ানের পরিচয় দিয়ে হাসপাতালে স্ত্রীর চিকিৎসায় বাড়তি সুবিধা পেতে চাইছিলেন তিনি। ভুয়ো পরিচয় দেওয়ার জন্য পুলিশ তাকে আটক করে। আর সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরার সামনে তিনি কবুল করলেন – ‘ভুল হয়ে গেছে।’ এসব নিয়ে মঙ্গলবার দিনভর টানটান উত্তেজনা রইল আসানসোল জেলা হাসপাতালে।
হাসপাতালের কর্মীরা জানাচ্ছেন, বিশেষ চিকিৎসা পরিষেবা পেয়ে জয়ের স্ত্রী শ্রাবণী গঙ্গোপাধ্যায়ের সন্দেহ হয়। তখনই হাসপাতাল কর্মীদের মুখে তিনি জানতে পারেন, স্বামী নিজেকে সিআরপিএফের জওয়ান বলে পরিচয় দিয়েছেন। এসব শোনার পর তিনি সাফ জানিয়ে দেন, তাঁর স্বামী মোটেই জওয়ান নন। এদিকে, সিআরপিএফের ডিআইজি বিনয় কুমার সিংয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনিও জানান, ১০৭ নম্বর ব্যাটেলিয়ন আদৌ জম্মুতে নয়। সবচেয়ে বড় কথা, এমন সংকটের সময়ে জম্মুর কোনও জওয়ানকে ছুটিই দেওয়া হয়নি। মঙ্গলবার রাতে ফের জয় হাসপাতালে পৌঁছাতেই তাঁকে চেপে ধরেন সবাই। ডাকা হয় পুলিশ। এসবে ঘাবড়ে গিয়ে অসংলগ্ন কথা বলতে থাকেন ভুয়ো জওয়ান। শেষ পর্যন্ত সংবাদমাধ্যমের সামনে বলেই ফেলেন, ভুয়ো পরিচয় দিয়ে ভুল হয়েছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.