সুরজিৎ দেব, ডায়মন্ড হারবার: পরিবারের অন্ধবিশ্বাস, মেয়ের মানসিক রোগ সারাতে পারবেন ‘সাধুবাবা’। আর সেই সুযোগ নিয়েই বছর সতেরোর এক কিশোরীকে লাগাতার ধর্ষণের অভিযোগ উঠল এক সাধুর বিরুদ্ধে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার মহেশতলা থানার বিবেকানন্দ পল্লির ঘটনায় অভিযুক্ত সাধু পলাতক। তার এক শিষ্যকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে পুলিশ। খোঁজ চলছে অভিযুক্তের।
প্রায় আট বছর ধরে মানসিক রোগের শিকার বিবেকানন্দ পল্লির বাসিন্দা ১৭ বছরের এক কিশোরী। বহু চিকিৎসা করিয়েছেন কিশোরীর বাবা, মা। কিন্তু কিছুতেই সুস্থ হয়নি সে। শেষমেশ প্রতিবেশী নিখিল হালদারের মাধ্যমে ওই কিশোরীর অভিভাবকদের পরিচয় হয় বাংলাদেশ থেকে আসা এক সাধুর সঙ্গে। প্রতিবেশী তাঁদের পরামর্শ দেন যে ওই সাধু ঝাড়ফুঁক করে দিলেই মেয়ে ভাল হয়ে যাবে। প্রতিবেশীর কথায় ভরসা করে আর নিজেদের অন্ধবিশ্বাসের জোরে মানসিক রোগের শিকার ওই কিশোরীর বাবা-মা তাকে নিয়ে ওই সাধুর কাছে যান।
সাধু শেখর রায় ওরফে শেখর পাগল কিশোরীর বাবা মা’কে বলেন, তিন রাত্রি মেয়েকে তার কাছে পাঠাতে হবে। তিনি ঝাড়ফুঁক করে দিলেই তাঁদের মেয়ে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠবে। অন্ধবিশ্বাসী বাবা-মা সাধুর কথায় রাজি হয়ে যান। দু’রাত মেয়েকে ওই সাধুবাবার কাছে পাঠানও তাঁরা। তৃতীয় রাতে মেয়ে সেখানে যেতে আর রাজি হয়নি। বাবা-মা কারণ জানতে চাইলে সে জানায়, পরপর দু’রাত তাঁদের অন্ধবিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে ওই সাধু তাকে ধর্ষণ করেছে। ফাঁস হয়ে যায় ভণ্ড সাধুর কুকীর্তি।
এরপর কিশোরীর বাবা-মা প্রতিবেশীদের সঙ্গে নিয়ে বৃহস্পতিবার সকালে সাধুর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া সেই শিষ্য নিখিল হালদারের বাড়িতে যান। তাঁকে সমস্ত ঘটনার কথা খুলে বলা হয়। তাঁকে সঙ্গে নিয়ে সাধুর বাড়িতে গিয়ে দেখেন, স্ত্রীকে নিয়ে সাধু শেখর পাগল উধাও। শিষ্য নিখিলের কাছ থেকেই ওই সাধু খবর পেয়ে গিয়েছিল যে তার ভণ্ডামি ধরে ফেলেছে সবাই। এরপর নিখিলকে ধরেই মারধর শুরু করেন প্রতিবেশীরা। খবর পেয়ে মহেশতলা থানার পুলিশ এসে নিখিলকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। নির্যাতিতা কিশোরীকে শারীরিক পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, সাধুর শিষ্য নিখিলকে আটক করে অভিযুক্ত সাধুর সন্ধান পেতে জিজ্ঞাসাবাদ চালানো হচ্ছে। নির্যাতিতার পরিবার ভণ্ড সাধুর বিরুদ্ধে লিখিতভাবে থানায় অভিযোগ জানিয়েছে। পলাতক সাধুর খোঁজে জোর তল্লাশি শুরু করেছে পুলিশ। সাধু শেখর যাতে বাংলাদেশে পালিয়ে যেতে না পারে, তার জন্য ইতিমধ্যেই ব্যবস্থা নিয়েছেন তদন্তকারী আধিকারিকরা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.