নন্দন দত্ত, সিউড়ি: দলের নেতাদের কাটমানি ফেরতের নির্দেশ দিয়ে ইতিমধ্যেই মাস্টারস্ট্রোক দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ শুদ্ধিকরনের যে পন্থা দলনেত্রী অবলম্বন করেছেন, তা প্রশংসা কুড়িয়েছে সাধারণ মানুষের৷ কাটিমানি ফেরত চেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত নেতাদের বাড়িতে চড়াও হতে শুরু করেছেন সাধারণ মানুষ৷ দলেরই একাংশেরও বিক্ষোভের মুখে পড়তে হচ্ছে কাটমানি খেকো নেতাদের৷ এবার সম্ভবত সেই আতঙ্ক থেকেই মঙ্গলবার কাটমানি ফেরত দিলেন সিউড়ি ২ নম্বর ব্লকের কোমা পঞ্চায়েতের খন্যা গ্রামে তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি ত্রিলোচন মুখোপাধ্যায়। সম্ভবত তিনিই প্রথম তৃণমূল নেতা, যিনি দলনেত্রীর নির্দেশ মান্য করে প্রকাশ্যে কাটমানি ফেরত দিলেন৷
[ আরও পড়ুন: প্রবল বৃষ্টির জের, রাস্তা ভেঙে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ডুয়ার্সের বিভিন্ন এলাকায়]
স্থানীয়দের অভিযোগ, গ্রামে একটি লম্বা নিকাশি নালা তৈরির করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে সাধারণ মানুষের থেকে দু’লক্ষ টাকা কাটমানি তুলেছিলেন অঞ্চল সভাপতি ত্রিলোচন মুখোপাধ্যায়৷ কিন্তু বহুদিন হয়ে গেলেও সেই নালার কাজ এখনও শুরুই করেননি তিনি৷ যার ফলে গ্রামবাসীদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই একটা চাপা ক্ষোভ ছিল৷ মুখ্যমন্ত্রী কাটমানি ফেরতের নির্দেশ দেওয়ায় যাতে ঘৃতাহুতি পড়ে৷ তৃণমূল নেতা ত্রিলোচন মুখোপাধ্যায়ের কাছ থেকে টাকা ফেরতের দাবিতে মঙ্গলবার সকাল থেকে গ্রামে সালিশি সভা বসান স্থানীয়রা। অঞ্চল সভাপতির বাড়ি ঘেরাও করেন গ্রামবাসীরা। সূত্রের খবর, স্থানীয় বিজেপি নেতাদের নেতৃত্বেই এই ঘেরাও অভিযান হয়। এবং সেই জনরোষের মুখে পড়েই অবশেষে বাধ্য হয়ে কাটমানি ফেরত দেন ত্রিলোচন মুখোপাধ্যায়৷ গ্রামের ১৪১ জন মানুষকে ১৬১৭ টাকা করে ফেরত দেন তিনি৷ তিনি জানান, ‘‘গ্রামবাসীদের উন্নয়নমূলক কাজের জন্য এই টাকা তোলা হয়েছিল। কিন্তু তাদের দেওয়া হয়নি। তাই আজ সবাইকে ডেকে, সে টাকা ফেরত দিয়ে দেওয়া হল।’’
[ আরও পড়ুন: বাবুলের ঘোষিত প্রকল্পের বাস্তবায়ন, চালু হল দুর্গাপুর-মুম্বই উড়ান পরিষেবা ]
প্রসঙ্গত, কাটমানির অভিযোগ প্রমাণিত হলে ইতিমধ্যে ৪০৯ ধারা প্রয়োগের নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য প্রশাসন৷ দোষীদের যাবজ্জীবন কারাবাসে পাঠানোরও এবং কঠোর শাস্তির নিদান দিয়েছে নবান্ন। জনপ্রতিনিধি হোক বা সরকারি কর্মচারী, কাটমানি নিয়ে থানায় অভিযোগ জমা পড়লে আর যে রেহাই নেই, সে কথা আগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কাটমানি নিয়ে অত্যন্ত তৎপরতার সঙ্গে ইতিমধ্যে কাজ শুরু করে দিয়েছে রাজ্য প্রশাসন। সোমবার নবান্ন থেকে রাজ্যের এডিজি (আইনশৃঙ্খলা) জ্ঞানবন্ত সিং জানিয়ে দিয়েছেন কারও বিরুদ্ধে কাটমানির নালিশ জমা পড়লে ৪০৯ ধারায় মামলা হবে। দোষ প্রমাণিত হলে যার সাজা ১০ বছর থেকে যাবজ্জীবন কারাবাস। রাজ্যের সমস্ত পুলিশ সুপারের কাছে এই মর্মে নির্দেশ জারি হয়ে গিয়েছে। জ্ঞানবন্তর কথায়, “সরকারি সম্পত্তি ও অর্থ তছরুপের মামলা দায়ের হবে। জনপ্রতিনিধি ও সরকারি কর্মচারীদের বিরুদ্ধে কাটমানি সংক্রান্ত অভিযোগের তদন্ত করা হবে দ্রুত।”
[ আরও পড়ুন: ভরা বাজারে যুবককে কুপিয়ে খুন মহিলার, অভিযুক্তদের ধরে গণপিটুনি ]
এমনকী, কাটমানি নেওয়ার অভিযোগে তৃণমূলের জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে ক্ষোভের আগুন তীব্রতর হচ্ছে। জেলায় জেলায় মানুষ ফুঁসছে টাকা ফেরানোর দাবিতে। বাড়ি ভাঙচুর হচ্ছে পঞ্চায়েত প্রতিনিধি, কাউন্সিলরের। পড়ছে বোমা। আলিপুরদুয়ার পুরসভার কাউন্সিলরদের বিরুদ্ধে সরব হন প্রবীণ তৃণমূল নেতা প্রশান্তনারায়ণ মজুমদার। একই অভিযোগে কোচবিহারের তুফানগঞ্জ পুরসভার চেয়ারম্যান অনন্তকুমার বর্মা ঘেরাও হন। বর্ধমানের জনরোষের মুখে পড়েছেন পঞ্চায়েত সদস্য থেকে কাউন্সিলররা।
ছবি: শান্তনু দাস
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.