ছবিতে বৃদ্দ দাদি সূর্যনারায়ণা, ছবি: মৈনাক মুখোপাধ্যায়।
চন্দ্রশেখর চট্টোপাধ্যায়, আসানসোল: অশীতিপর বৃদ্ধকে বাড়ি ফেরার পথ খুঁজে দিল ফেসবুক। প্রায় একমাস ধরে আসানসোল জেলা হাসপাতালে রয়েছেন দক্ষিণ ভারতের এক বৃদ্ধ। শরীর সুস্থ হলেও বাড়ি ফিরতে পারেননি তিনি। কেননা, কোথায় বাড়ি, কি ঠিকানা কিছুই ঠিকমতো বলতে পারছেন না ওই বৃদ্ধ। কারণ ভাষা সমস্যা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাঁকে কাগজ কলমও দিয়েছিলেন। কিন্তু কয়েকটি ফোন নম্বর ছাড়া ভিন রাজ্যের ওই বৃদ্ধ কিছুই লিখতে পারেননি বলে জানা গিয়েছে। শুধু তাই নয়, যে ফোন নম্বরগুলি লিখেছিলেন, সেগুলি আবার ৯ সংখ্যার। শেষপর্যন্ত এগিয়ে আসেন স্থানীয় সমাজকর্মী কুমারেশ মিশ্র। তিনিই বৃদ্ধের ছবি তুলে ফেসবুকে পোস্ট করে দেন। জানা যায়, ওই বৃদ্ধের নাম দাদি সূর্যনারায়ণা। অন্ধ্রপ্রদেশের বাসিন্দা তিনি। স্টেশনে আত্মীয়কে ছাড়তে এসে ভুল করে আসানসোলগামী ট্রেনে উঠে পড়াতেই এই বিপত্তি।
আসানসোলে শাসকদলের দলের কর্মী হিসেবে পরিচিত কুমারেশ মিশ্র। বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কাজের সঙ্গে যুক্ত তিনি। কুমারেশবাবু জানিয়েছেন, ২৫ দিন আগে এক আত্মীয়কে বিদায় দিতে এসে নিজেই চেন্নাই থেকে আসানসোলগামী ট্রেনে চড়ে বসেন দাদি সূর্যনারায়ণ। আসানসোল স্টেশনে অচৈতন্য অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করে জিআরপি। ভরতি করা হয় আসানসোল জেলা হাসপাতালে। কিন্তু তেলগু ছাড়া আর কোনও ভাষাই জানেননি ওই বৃদ্ধ। তাই তাঁর কথা কেউ বুঝতে পারছিলেন না। লোকমুখে বিষয়টি জানতে পারেন তিনি। হাসপাতালে গিয়ে ওই বৃদ্ধের ছবি তুলে ফেসবুকে পোস্ট করে দেন। একটাই আশা, যদি পরিজনদের নজরে পড়ে তাহলে বাড়ি ফিরতে পারবেন ওই অজ্ঞাতপরিচয় বৃদ্ধ। তবে প্রথমবার এই চেষ্টা বিফলে যায়। দিন পাঁচেক আগে ফের ছবি তুলে পোস্ট করা হয় ফেসবুকে। সেই ছবিই বেঙ্গালুরুর এক যুবকের নজরে পড়ে। তাঁর নাম রমেশ নায়ডু। তিনি জানান, হারিয়ে যাওয়া বৃদ্ধ তাঁর দাদু।
রমেশবাবুর বন্ধু ঋষভ সিনহা রানিগঞ্জের বাসিন্দা। ফেসবুকে দাদুর খোঁজ পাওয়ার পর বন্ধুকে ফোন করে বিষয়টি জানান তিনি। বুধবার আসানসোল জেলা হাসপাতালে যান ঋষভ। বৃদ্ধকে দেখার পর একপ্রকার নিশ্চিত হয়েই বন্ধুকে খবর দেন। জানান, এই বৃদ্ধ আসলে অন্ধ্রপ্রদেশের বাসিন্দা দাদি সূর্যনারায়ণা। ওই বৃদ্ধকে বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পরিবারের লোকেরা আসানসোলের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। আসানসোল জেলা হাসপাতালের সুপার নিখিলচন্দ্র দাস জানান, ‘বৃদ্ধের বাড়ির খোঁজ মেলায় খুবই ভাল লাগছে। তবে যতক্ষণ না পরিজনরা সঠিক পরিচয়পত্র দেখাচ্ছেন, ততক্ষণ ওই বৃদ্ধকে ছাড়া যাবে না।’
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.