নন্দন দত্ত, সিউড়ি: পরনে পোশাক নেই৷ বাঁ হাতে ও বুকে ধারালোর অস্ত্রের ক্ষত৷ এমনকী, কেটে নেওয়া হয়েছে পুরুষাঙ্গটিও৷ সিউড়ির যুবকের ক্ষতবিক্ষত দেহ উদ্ধারে ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে ঘটনার কিনারা করল পুলিশ৷
বৃহস্পতিবার সকালে সিউড়ির কড়িধ্যা গ্রামের ডোমপাড়ায় মৃতদেহ উদ্ধারের ঘটনার তদন্তে নামে সিউড়ি থানার পুলিশ৷ তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, নাবালক ভাগ্নে খুন করেছে মামাকে৷ দুই নাবালক মামার সঙ্গে তার পিসতুতো দিদির পরকীয়া মেনে নিতে পারেনি। তারই শোধ নিতেই হাঁসুয়া দিয়ে নৃশংসভাবে সুব্রত ওরফে পিন্টু অঙ্কুরকে খুন করে ভাগ্নে৷ ধৃত ভাগ্নে রমেশ অঙ্কুর ও তার বন্ধু অমিত অঙ্কুরকে গ্রেপ্তার করে সিউড়ি থানার পুলিশ৷ শুক্রবার সিউড়ির নাবালক বিশেষ আদালতে তাদের তোলা হয়৷ আপাতত তাদের ১৪ দিনের জন্য বহরমপুর হোমে পাঠান হয়েছে৷ পিন্টুর কাটা বাঁ হাত ঘটনাস্থলের ঝোঁপ থেকে উদ্ধার করে পুলিশ৷ এমনকি যে হাঁসুয়া দিয়ে খুন করা হয়েছে সেটিও উদ্ধার করেছে পুলিশ৷ তবে, দুই নাবালক এমন নৃশংসভাবে খুন করায় পুলিশমহলে উদ্বেগ বেড়েছে৷
কড়িধ্যায় পিসতুতো দিদির সঙ্গে মামার বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্ক মেনে নিতে পারেনি রমেশ। বেশ কিছুদিন ধরেই পিন্টুকে উচিত শিক্ষা দিতে তক্কেতক্কে ছিল রমেশ। বিশেষ করে জেদ চাপে কয়েকদিন আগেই পিন্টুর সঙ্গে এ নিয়ে বচসা থেকে রমেশের হাতাহাতি পর্যন্ত হয়। তারপর থেকে বন্ধু অমিতের সঙ্গে পিন্টুকে খুনের পরিকল্পনা করে রমেশ। বুধবার রাতে মোটর সাইকেলের শোরুমের কর্মী সুব্রত ওরফে পিন্টু অঙ্কুরের মৃতদেহ পাওয়া যায় কড়িধ্যা গ্রামের ডোমপাড়ার একটি ঝোঁপ থেকে৷
পিন্টুর স্ত্রী রিঙ্কু অভিযোগ করেন, তার সহকর্মী সঞ্জয় মাল তার স্বামীকে পরিকল্পিতভাবে খুন করেছে৷ পুলিশের তদন্ত সে দিকেই এগোচ্ছিল৷ কিন্তু সন্ধ্যায় পুলিশ কুকুর আসতেই আর মাথার ঠিক রাখতে পারেনি রমেশ৷ রাতেই পুলিশি জেরায় ভেঙে পরে৷ যদিও বৃহস্পতিবার রমেশ পুলিশকে জানায়, বুধবার রাত দশটা পর্যন্ত সে সঞ্জয়ের বাড়িতে স্বাভাবিক অবস্থায় মামাকে দেখেছে৷ কিন্তু বৃহস্পতিবার পুলিশ কুকুর রমেশের বাড়ির পাশ দিয়ে যেতেই ভয় পেয়ে যায় বছর ১৬-র রমেশ৷ পুলিশকে সে জানায়, বুধবার রাতে বাড়ি ফেরার পথে একটি সাঁকোর ধারে পিন্টু মদ্যপ অবস্থায় পড়েছিল৷ সে পথেই ফিরছিল রমেশ আর অমিত। পিন্টুকে বেহুঁশ হয়ে পড়ে থাকতে দেখে তাঁদের প্রতিশোধ স্পৃহা জেগে ওঠে। রমেশ অমিতকে তার বাড়ি থেকে হাঁসুয়া আনতে বলে৷ তারপরেই দু’জনে পিন্টুকে তুলে নিয়ে গিয়ে ডোমপাড়ার পিছনের নির্জন জায়গায় নিয়ে গিয়ে খুন করে। খুন করে হাঁটতে হাঁটতে বক্রেশ্বর রাস্তায় গিয়ে হাটতলার কাছে হাত পা ধুয়ে বাড়ি ফিরে যায়৷ রমেশ খুনের কথা স্বীকার করতেই রাতে অমিতকে তার বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে পিন্টুর কাটা হাতটি উদ্ধার করে। অমিতের বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয় পিন্টু খুনে ব্যবহৃত হাঁসুয়াটি। শুক্রবার দু’জনকে সিউড়ির বিশেষ আদালতে তোলা হয়। সরকারি আইনজীবী তপন গোস্বামী জানান, দুই নাবালক আদালতে তাদের খুনের কথা স্বীকার করে। তাদের বিরুদ্ধে ৩০২, ১০২ খ ধারা ও ৩৪ ধারায় মামলা ঋজু করা হয়েছে। জুভেনাইল কোর্ট তাদের ১৪ দিনের জেল হিসাবে বহরমপুর হোমে পাঠিয়েছে৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.