সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: কাজের পর সন্ধেবেলা হুড়মুড়িতে ইটভাঁটার চিমনি ভেঙে পড়ে চারজনের মৃত্যুশোক এখনও ভুলতে পারেনি বসিরহাটের ধলতিথা গ্রাম। বুধবারের ঘটনায় আহত হয়েছিলেন ২০ জন। এই ঘটনার পর কেটে গিয়েছে ৩৬ ঘণ্টা। শুক্রবার ঘটনাস্থলে গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করল রাজ্যের ফরেনসিক দল (Forensic Team)। আর তাঁদের কাছে পেয়ে চিমনি প্রস্তুতকারকরা চাঞ্চল্যকর দাবি তুললেন। অভিজ্ঞ প্রস্ততকারকরা জানাচ্ছেন, চিমনির মধ্যে লুকনো ছিল বিস্ফোরক। অন্যথায় এত ভয়ংকর শব্দ হতো না বিস্ফোরণের সময়।
বুধবার সন্ধ্যায় এক ভয়ানক বিস্ফোরণে হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে বসিরহাট (Basirhat) থানার শাঁকচূড়া-বাগুন্ডী গ্রাম পঞ্চায়েতের ধলতিথা গ্রামের একটি ইটভাঁটার চিমনি। ঘটনায় তিন শ্রমিক এবং অন্য এক ভাটার মালিক নিহত (Death) হন। সেই ঘটনার তদন্তে অগ্রগতি আনতে শুক্রবার রাজ্যের ফরেনসিক দল ঘটনাস্থলে পৌঁছল। সকাল সাড়ে এগারোটা নাগাদ ফরেনসিক দলের ২ সদস্যের প্রতিনিধি দল বসিরহাট পুলিশ জেলার পুলিশ হেডকোয়ার্টার গোলাম সারোয়ার ও বসিরহাট থানার আইসি সুরিন্দর সিংরা বসিরহাট থানার পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে ওই ভাটায় এসে পৌঁছয়। চিমনি-সহ পুরো ভাঁটাটি পরিদর্শন করে। ঘটনাস্থল থেকে একাধিক নথিও সংগ্রহ করে।
প্রাথমিকভাবে ঘটনার তদন্তে নেমে ধন্দে পড়ে বসিরহাট পুলিশ জেলার আধিকারিকরা। ঠিক কী করে ওইদিন বিস্ফোরণ ঘটল, তার এখন সদুত্তর পাওয়া যায়নি। তবে প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছিল রক্ষণাবেক্ষণের অভাব ও দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার ফলে মিথেন গ্যাস জমে এবং সেই গ্যাস আগুনের সংস্পর্শে এসে এই ঘটনা ঘটেছে। যদিও ফরেনসিক দল ইতিমধ্যে চিমনির ভিতরে ঢুকে পুরো জায়গাটি খতিয়ে দেখে এবং সেখানে কোন গ্যাস মজুত ছিল কি না, তাও পরীক্ষা করে দেখছে। আতসকাচ দিয়ে ঘটনাস্থল পুরোটাই পর্যবেক্ষণ করেছেন। চিমনির ভিতরে ভয়ানক কোনও বিস্ফোরক রয়েছে কিনা, তাও খতিয়ে দেখছেন ফরেনসিক দলের আধিকারিকরা। বিস্ফোরকের তথ্য তাঁরা একেবারে উড়িয়ে দিচ্ছে না।
ইতিমধ্যে ইটভাঁটায় নিহত শ্রমিক হাফিজুল মণ্ডলের সহকর্মী নজরুল মণ্ডল সেদিন ঘটনার সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। তিনি জানান, ”এর পিছনে নিশ্চয়ই কোনও ষড়যন্ত্র রয়েছে। আমরা দীর্ঘদিন ধরে ভাঁটায় কাজ করে আসছি, কখনও এরকমভাবে চিমনিতে বিস্ফোরণ হয়নি। বিষয়টি খতিয়ে দেখুক পুলিশ প্রশাসন।”
বসিরহাটের এক চিমনি প্রস্তুতকারক বিশেষজ্ঞ জয়নাল মোল্লা বলেন, “বসিরহাটের ভাটা শিল্প প্রায় শতাব্দী প্রাচীন কিন্তু কখনওই এরকম ধরনের ঘটনা ঘটেনি। গ্যাস জমে থাকার ফলে এই ধরনের ঘটনা ঘটা সম্ভব নয়। এর মধ্যে কোনও বিস্ফোরক জাতীয় জিনিস মজুত করা ছিল এবং সেটাই আগুনের সংস্পর্শে আসা মাত্র বিস্ফোরণের আকার ধারণ করে।” ফলে গ্যাস জমে থাকার ফলে এই ঘটনা? নাকি এর পিছনে বিস্ফোরক মজুত থাকার কোনও যোগ রয়েছে? তাহলে কি পরিকল্পিতভাবে বিস্ফোরক মজুত করিয়ে এই ঘটনা ঘটানো হয়েছে? এমনই প্রশ্ন তুলছেন মৃতের পরিবার-সহ ওয়াকিবহাল মহলের মানুষ। তাহলে কি ওই চিমনির মধ্যে কোনও বিস্ফোরক দ্রব্য তথা জিলেটিন স্টিক ছিল? পুরো বিষয়টি তদন্ত করছে রাজ্যের ফরেনসিক দল ও বসিরহাট পুলিশ জেলার আধিকারিকরা।
দেখুন ভিডিও:
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.