বিশেষ সংবাদদাতা: সব বুথ ফেরত সমীক্ষা রিপোর্টে তৃণমূলের ক্ষমতায় আসার স্পষ্ট ইঙ্গিত৷ কিন্তু আসনসংখ্যা কত? তুঙ্গে উঠেছে কৌতূহল৷ আসলে একটি চ্যানেলের সমীক্ষার সঙ্গে অন্য চ্যানেলের সমীক্ষার অঙ্কের এতটাই ফারাক যে, বুথফেরত সমীক্ষা কতটা মিলবে তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে৷ তবে ট্রেন্ড স্পষ্ট, তৃণমূলই আসছে৷ জোটের আশায় জল৷ লোকসভার চেয়ে খারাপ ফল করছে বিজেপি৷
বৃহস্পতিবার সকাল হতেই গণনা শুরু৷ ২৯৪ আসনে ফল দুপুরের মধ্যেই সামনে এসে যাবে৷ শেষের এই প্রহরটি প্রবল টেনশনের৷ গোটা রাজ্যের মানুষ তাকিয়ে আছেন ১৯ মে-র দিকে৷ তাকিয়ে আছেন তিনিও৷ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ জয় নিয়ে সংশয় ছিল না৷ কিন্তু অঙ্কটা কত? কিছু আসনে কেন্দ্রীয় বাহিনীর দাপাদাপিতে বহু মানুষ ভোট দিতে পারেননি বলে অভিযোগ৷ এর পরও বাংলার রায় যে তৃণমূলের পক্ষেই যাবে সে ব্যাপারে চূড়ান্ত আত্মবিশ্বাসী মুখ্যমন্ত্রী৷ অনেক কিছুই তাঁর বলার আছে৷ কিন্তু এখন নয়, মুখ খুলবেন সঠিক সময়৷
তৃণমূল শিবির তাই চুপ৷ বুথফেরত সমীক্ষা নিয়ে আলাদা কোনও মন্তব্য নেতৃত্ব মঙ্গলবারও করেনি৷ অন্যদিকে, সমীক্ষা রিপোর্ট প্রকাশ হতেই বাম ও কংগ্রেস শিবিরে হতাশাটা সামনে এসে গিয়েছে৷ তারাও অপেক্ষায়৷ এদিকে, রাজ্যের কোনও বুথেই পুনর্নির্বাচন হবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন৷ ৪ এপ্রিল প্রথম দফার ভোটের দু’টি বুথে ইভিএম খারাপ হওয়ায় পুনরায় ভোট করিয়েছিল কমিশন৷ কিন্তু বাকি ৭,২৪৫টি বুথের কোথাও কোনও অনিয়ম খুঁজে পায়নি তারা৷ মঙ্গলবার রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক সুনীল গুপ্তা জানিয়েছেন, “কমিশনের তরফ থেকে পুনর্নির্বাচনের কোনও নির্দেশ আসেনি৷ যাবতীয় তৎপরতা এখন গণনাকে ঘিরে৷ ২০ তারিখেই দিল্লি থেকে কমিশনের কর্তারা আসছেন৷ ওই দিনই বিজয়ীদের নামের তালিকা তাঁরা রাজ্যপালের হাতে তুলে দেবেন৷” কমিশন কোনও বুথে পুনর্নির্বাচন না দেওয়ায় ক্ষুব্ধ বিরোধীরা৷ সিপিএম নেতা রবীন দেব জানান, তাঁরা হতাশ৷ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরি বলেন, “কমিশনের এই সিান্ত তৃণমূল-বিজেপির সখ্যতারই প্রতিফলন৷”
সব এক্সিট পোলে তৃণমূলই ক্ষমতায়৷ কিন্তু ধন্দ আসন সংখ্যা নিয়ে৷ এবিপি আনন্দ-এ সি নিয়েলসন যখন তৃণমূলকে ১৬৩ আসন দিয়েছে, তখন ইন্ডিয়া টুডে বলেছে, তৃণমূল সর্বোচ্চ পেতে পারে ২৪৩টি আসন৷ এর মাঝেই রয়েছে বিভিন্ন চ্যানেলের অঙ্ক৷ নিউজ নেশন দিয়েছে ১৫৩, টাইমস নাউ ১৬৭, ইন্ডিয়া টিভি দিয়েছে ১৭১, চাণক্য দিয়েছে ২১০৷ আজ তক আবার জানিয়েছে ২৩৩ থেকে ২৫৩-র মধ্যে থাকবে তৃণমূলের আসন সংখ্যা৷ অর্থাৎ, নিউজ নেশনের সঙ্গে যদি আজ তকের সর্বোচ্চ অঙ্কের ফারাকটা দেখা যায়, তা হলে সেটি প্রায় ১০০ আসন৷ কারটা ঠিক? কেউ একজন ভুল৷ অথবা দু’জনই ভুল! ইন্ডিয়া টিভি অথবা চাণক্যর মধ্যে কেউ ঠিক, কেউ ভুল৷ জল্পনা মঙ্গলবার এ নিয়েই৷ চায়ের দোকান থেকে অফিসপাড়া, ট্রেন থেকে মাছের বাজার৷ সর্বত্র একটাই কথা– ‘দিদিই থাকছেন৷ কিন্তু আসন কত?’
তবে তৃণমূল শিবির একটি বিষয়কে ইতিবাচক মনে করছে৷ তা হল কোনও সমীক্ষাতেই জোটের আসন ১৪৮ পেরোয়নি৷ কত শতাংশ ভোট সুইং হলে কী হবে, তা পুরোটাই অনুমানের বিষয়৷ এ দিয়ে কিছু বিচার হয় না৷ একইসঙ্গে দেখা হচ্ছে, এক্সিট পোল আমাদের দেশে কতটা মিলেছে, বা মেলেনি৷ সদ্য বিহার ভোটে বিজেপিকে এগিয়ে দিয়েছিল অনেকে৷ বাস্তবে হয়েছিল উল্টো৷ বিপুল গরিষ্ঠতা পেয়েছিলেন লালু-নীতীশ৷ তবে এ নিয়েও ব্যাখ্যা আছে৷ যেহেতু দিল্লিতে সদ্য ক্ষমতায় এসেছে বিজেপি, সেই জন্য এক্সিট পোলে কোনও চ্যানেলই না কি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চটাতে চায়নি৷ ইতিপূর্বে নানা ভোটে নানা চ্যানেলের নানারকম সমীক্ষা মিলেছে বা মেলেনি৷ কিন্তু এবারই প্রথম দেখা গেল, সব চ্যানেলই তৃণমূলের পক্ষে রায় দিয়েছে৷ এই তথ্য হাতে পাওয়ার পর থেকেই তৃণমূল শিবির যেমন উজ্জীবিত, ততধিক মনমরা জোট নেতৃত্ব৷ আজ বুধবারও এই জল্পনা চলতে থাকবে৷ চলবে আসন নিয়ে কাটাছেঁড়া৷ যেভাবে সিপিএম নেতারা কথায় কথায় হার স্বীকার করছেন তাতে অনেক বেশি আসন পাওয়ার আত্মবিশ্বাস তৃণমূলের দৃঢ় হচ্ছে৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.