তারক চক্রবর্তী, শিলিগুড়ি: সাংসদ থাকাকালীন ২০১৪ সালে নকশালবাড়ি ব্লকের হাতিঘিষা গ্রাম পঞ্চায়েতকে দত্তক নিয়েছিলেন বিজেপির সুরেন্দ্র সিং আলুওয়ালিয়া। স্থানীয় প্রশাসন ও সাধারণ মানুষের দাবি, ওই গ্রাম পঞ্চায়েতের উন্নয়নের ক্ষেত্রে একাধিক পদক্ষেপ গ্রহণ করার কথা দিয়েছিলেন সাংসদ। তবে প্রতিশ্রুতিই সার, উন্নয়নের কোনও কাজই তাঁর আমলে ওই দত্তক নেওয়া গ্রামের জন্য করতে পারেননি প্রাক্তন দার্জিলিং সাংসদ আলুওয়ালিয়া। শুধুমাত্র একটি সেতু ছাড়া বাসিন্দাদের প্রাপ্তির ভাড়ার শূন্য বলে অভিযোগ করছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, বারবার এই বিষয়ে প্রাক্তন সাংসদের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও ফল মেলেনি। বেশ কিছু বছর ধরেই দার্জিলিং-এ বিজেপির প্রার্থীরাই সাংসদ হচ্ছেন। আলুওয়ালিয়ার নেওয়া গ্রামের দিকে তাঁরাও ফিরে তাকাচ্ছে না বলেও অভিযোগ করছেন স্থানীয়রা। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই ইস্যু আগামী বিধানসভা নির্বাচনে অবশ্যই বিজেপিকে ব্যাকফুটে ফেলতে পারে। যদিও বিজেপির দাবি, উন্নয়নের একাধিক প্রচেষ্টা করেছিলেন সাংসদ। তবে শাসকদলের সহযোগিতা না মেলায় সব কাজ করে উঠতে পারেননি সাংসদ।
এই বিষয়ে হাতিঘিষা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার প্রাক্তন বাম প্রধান জ্যৈষ্ঠ মোহন রায় বলেন, “প্রাক্তন সাংসদ আমাদের এলাকায় একটি ২৫ লক্ষ টাকা ব্যয় করে একটি সেতু তৈরি করেছিলেন। আর কিছুই করেননি। প্রথম প্রথম তাঁর সঙ্গে এই বিষয়ে টেলিফোনে কথা হত। কিন্তু তারপর আর কিছুই করেননি। নামেই দত্তক নিয়েছিলেন তিনি।” স্থানীয় বাসিন্দা পেশায় কৃষক প্রসেঞ্জিত মল্লিক বলেন, “আমাদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিকাঠামো থেকে অনেক দাবি পূরণ করার আশ্বাস দিলেও কোনও কাজই করেননি তিনি। আমাদের মনে হয় দত্তক নেওয়া ছাড়া আর কোনও কাজ তিনি করেননি।” যদিও বিজেপির বাগডোগরা-হাতিঘিষা ব্লক কমিটির সদস্য মন্মথ রায় বলেন, “সাংসদ আমাদের এলাকা উন্নয়নের জন্য একাধিক প্রচেষ্টা চালিয়েছিলেন। কিন্তু শেষপর্যন্ত শাসকদল কোনওরকমের সাহায্য করেনি। সেই কারণেই সাংসদ একাধিক প্রকল্পের চেষ্টা করেও সফল হননি।”
নকশালবাড়ি ব্লকের হাতিঘিষা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় প্রায় ৪০০০০ ভোটার রয়েছেন। স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত এতদিন পর্যন্ত বামেদের দখলেই ছিল। চা বাগানে ঘেরা এই গ্রাম পঞ্চায়েত দীর্ঘদিন ধরে অবহেলিত ছিল। একের পর এক লোকসভা, বিধানসভা, পঞ্চায়েত ভোট আসলেও মানুষের মৌলিক চাহিদা মেটানোর কোন প্রয়াস কেউ করেননি বলেই বারবার অভিযোগ উঠেছিল। মূলত ওই অঞ্চলে চা-শ্রমিকদের বসবাস বেশি থাকা সত্ত্বেও তাদের জন্য কোনো ব্যবস্থাই নেয়নি কোন জনপ্রতিনিধি বলেও বারবার অভিযোগ উঠেছিল।
এমতাবস্থায় ২০১৪ সালে আদর্শ গ্রাম যোজনা প্রকল্পের আওতায় এই গ্রামকে দত্তক নেন তৎকালীন সাংসদ। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, রাস্তাঘাটের উন্নয়ন, সেতু তৈরি করা, চা-শ্রমিকদের জন্য আর্থিক উন্নয়ন, উন্নত পানীয় জলের ব্যবস্থার আশ্বাস দিয়েছিলেন তিনি। তবে, ছয় বছর পেরিয়ে গেলেও কোনও কথাই রাখেননি বলেই দাবি করেছেন স্থানীয়রা। তাদের আরও দাবি হাতিঘিষা হাইস্কুলের পেছনে একটি ছোট সেতুই তাঁর পাচবছরের সময়কালে করেছেন। আগামী নির্বাচনে যার প্রভাব পড়তে বলেও রাজনৈতিক মহলে জল্পনা ছড়িয়েছে।
দেখুন ভিডিও:
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.