ধীমান রায়, কাটোয়া: বিজ্ঞানের অগ্রগতি বহু অপ্রত্যাশিত, আকস্মিক আবিষ্কার উপহার দিয়েছে মানবসভ্যতাকে। কিন্তু তার চেয়ে ঢের বেশি চমক এখনও লুকিয়ে প্রকৃতির গহ্বরে। তারই একটা উদাহরণ দেখা গেল বর্ধমানের কেতুগ্রামে। কোনও বৈজ্ঞানিক গবেষণা নয়, কেতুগ্রামের বহরা গ্রামে ১১ মাথার খেজুর গাছ এক্কেবারে প্রকৃতির নিজস্ব দান। আর সেই দান পূজনীয়।
মাখলার পীরবাবার মেলা আজও হিন্দু-মুসলিমের মহান মিলনক্ষেত্র
বহরা গ্রামের রাস্তা দিয়ে যেতে যেতে একটা পুকুরের ধারে চোখ আটকে গেল এই গাছ দেখে। মাটি থেকে একটুখানি কাণ্ড উঠেছে। তারপরই একে একে উঠে গিয়েছে ১১টি মাথা। ১১টি জায়গা আবার বহুপত্রের উৎস্য। স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, অনেক আগে, তাও প্রায় বছর পঞ্চাশেক আগে, এই বাঁকাপুকুর পাড়ে নিজে থেকেই গজিয়েছিল এই অদ্ভুতদর্শন খেজুর গাছ। তা দেখেই তাজ্জব বনে গিয়েছিলেন সবাই। গ্রামের বেশিরভাগ মানুষই এর মধ্যে ঐশ্বরিক মাহাত্ম্য খুঁজে পান। বিশ্বাস করতে শুরু করেন, ব্যতিক্রমী গাছটির মধ্যে দিয়ে কোনও বার্তা দিচ্ছেন স্বয়ং ভগবান। এই ৫০ বছর ধরে শুধু এই বিশ্বাসেই রোজ একবার করে গাছটি ছুঁয়ে যেতেন সবাই। অন্তত চোখের দেখা দেখে যেতেন।
কিন্তু সম্প্রতি প্রকৃতির এই সৃষ্টিকে এত সাদামাটাভাবে থাকতে দিতে চাইছেন না কেউ। একটু সাজাতে চাইছেন। তাই গোটা গ্রাম থেকে চাঁদা তুলে বাঁধিয়ে দেওয়া হয়েছে গাছের গোড়ার অংশটি। তৈরি হয়েছে বেদী, লাগোয়া সিঁড়ি। এসব কাজের পর বুধবার প্রথমবার বাস্তবে পূজনীয় হয়ে উঠল সে গাছ। ধূমধাম করে পুজো, হরিনাম সংকীর্তন, প্রসাদ বিতরণ–সবই হল। যোগ দিলেন কেতুগ্রাম ১ নং ব্লকের বিডিও বনমালী রায়ও। স্থানীয় যুবক সৌমেন পাল, তরুণ রায়রা জানালেন, ‘এবার থেকে রোজ এখানে পুজো হবে। দৈব কারণেই এখানে এরকম একটা গাছ গজিয়ে উঠেছে। সেই দেবতাকে আমরা তুষ্ট রাখব।`
ভিনরাজ্যে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত করিমপুরের যুবক, এলাকায় শোকের ছায়া
উদ্ভিদ বিজ্ঞানের প্রযুক্তিগত দিকে চোখ রাখলে দেখা যাবে, এক মূল থেকে বহু কাণ্ড সমন্বিত গাছ তৈরি করার একটা পদ্ধতি আছে। রিয়াধে এমন একটি বহুমাথার তাল গাছ তৈরি করা হয়েছে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে বহরা গ্রাম প্রযুক্তির সঙ্গে ততটা এগোতে পারেনি। তাই কোনও ফরেস্ট ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের কোনও পরীক্ষানিরীক্ষা এখানে খাটে না। বাঁকাপুকুর পাড়ে ১১ মাথার খেজুর গাছ তাই এখানে ঈশ্বরের দান ছাড়া অন্য কিছু নয়। আর তাকে ঘিরে জনগণের কৌতুহল, বিশ্বাস, পূজার্চনা থাকবেই। অতি যুক্তিবাদীরা হয়তো অবজ্ঞা ভরে বলবেন, কুসংস্কার! কিন্তু ভেবে দেখুন, গাছ তো প্রকৃতিই। তাকে লালনপালন তো প্রকৃতির যত্ন নেওয়া। আজকের দিনে গাছ কেটে নগরায়নের ছবি ঢেকে দিতেই পারে গাছের সেবায় এমন উদ্যোগ। অন্তত পরিবেশ সুন্দর থাকবে। আপন রূপে রূপসী থাকবে প্রকৃতি।
ছবি: জয়ন্ত দাস
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.