বিক্রম রায়, কোচবিহার: উনিশের লোকসভায় উত্তরবঙ্গে তৃণমূলের শোচনীয় পরাজয়ের গ্লানি মোছেনি এখনও। সেটাই স্বাভাবিক। হারের কারণ নিয়ে বিস্তর পর্যালোচনা হয়েছে। এবার তা বিশ্লেষণ করতে গিয়ে নিজেদের ভূমিকাকেই কাঠগড়ায় তুলে ফেললেন কোচবিহারের তৃণমূল সভাপতি তথা প্রাক্তন সাংসদ (Ex MP of TMC) পার্থপ্রতিম রায়। রবিবার কোচবিহারের গোপালপুরের এক জনসভায় তিনি সাফ বললেন, ”পঞ্চায়েত নির্বাচনে জোর করে ভোট করানোর জন্যই লোকসভায় হেরেছি।” তাঁর এই স্বীকারোক্তিতে জেলা তৃণমূলের অন্দরে শুরু হয়েছে গুঞ্জন।
২০১৩ ও ২০১৮। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের আমলে দুটি পঞ্চায়েত ভোটই বাংলার সাম্প্রতিক রাজনীতির বেশ উল্লেখযোগ্য অধ্যায়। দু’বারই শাসকদলের বিরুদ্ধে লাগাতার হিংসা, সন্ত্রাস, ভয় দেখিয়ে ভোট আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ যে অনেকাংশে সত্যি, তা বিভিন্ন জেলায় বোমাবাজি, গুলিচালনা, প্রাণহানির ঘটনা থেকেই স্পষ্ট। বিশেষত ২০১৮’র পঞ্চায়েত ভোট যেন বেশিই সন্ত্রাসদীর্ণ।
আর ঠিক এই পরিস্থিতিকেই উনিশের লোকসভা ভোটে উত্তরবঙ্গে তৃণমূলের হারের জন্য (Locksabha Poll debacle) দায়ী করলেন সেখানকার প্রাক্তন সাংসদ পার্থপ্রতিম রায়। প্রকাশ্যেই তাঁর স্বীকারোক্তি, ”উনিশের লোকসভায় মানুষ কেন আমাদের ভোট দেয়নি, তা আমরা জানি। পঞ্চায়েত নির্বাচনে কোনও কোনও জায়গায় জোর করে ভোট করানো হয়েছে। মানুষ আমাদের শিক্ষা দিয়েছে, লোকসভায় ভোট না দিয়ে।”
আসলে, উত্তরবঙ্গের সংগঠন নিয়ে বরাবরই মাথাব্যথা তৃণমূল সুপ্রিমোর। সেখানে লাগাতার গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। বারবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ নিয়ে সতর্ক করলেও, কিছুদিন পরই ফের মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে তা। রবীন্দ্রনাথ ঘোষ, পার্থপ্রতিম রায়, উদয়ন গুহ – প্রত্যেকে সর্বদাই যেন বিবদমান। সে কারণেই গত লোকসভায় তৃণমূলের এমন ভরাডুবি বলে ধারণা অনেকের। তার উপর আবার সাংসদ থাকা সত্ত্বেও পার্থপ্রতিম রায় গত লোকসভায় লড়াইয়ের টিকিট পাননি। ঘাসফুল শিবিরে দাঁড় করানো হয়েছিল পরেশ অধিকারীকে। বিজেপি প্রার্থী নিশীথ প্রামাণিকের কাছে যিনি বিপুল ভোটে হেরে যান। ফলে বর্তমান জেলা সভাপতি পার্থপ্রতিম রায়ের ক্ষোভ স্বাভাবিক। সেই কারণেই কি প্রকাশ্যে দলের ভুল চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন তিনি? তবে এসবই একুশের আগেও তৃণমূলকে যথেষ্ট চাপে রাখছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.