সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, দুর্গাপুর: হারের কারণ তলব করতে গিয়ে ক্ষোভের মুখে প্রাক্তন সাংসদ। দলের প্রাক্তন সাংসদের বিরুদ্ধেই ক্ষোভে ফেটে পড়লেন কাউন্সিলররাই। দলের ‘ক্যাপ্টেন’রাও তাদের ভূমিকা সঠিকভাবে পালন না করার ফলেই ব্যর্থতা বলে দাবি কাউন্সিলরদের। বৈঠকে কংগ্রেস বিধায়ক তথা তৃণমূলের ‘ঘরের’ ছেলে বিশ্বনাথ পারিয়ালের মেয়র পারিষদ স্ত্রীর অনুপস্থিতি নিয়ে জল্পনা।
বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভা কেন্দ্রের পরাজিত তৃণমূল প্রার্থী মমতাজ সংঘমিতা বুধবার দুর্গাপুর নগর নিগমের প্রতিটি কাউন্সিলরের সঙ্গে বৈঠক করে হারের কারণ পর্যালোচনা করেন। দুর্গাপুর নগর নিগমের ৪৩টি ওয়ার্ডেই তৃণমূলের হার হয়েছে ৭৩,০৩৬ ভোটে। কিন্তু মাত্র ২৪৩৯ ভোটে তার পরাজয় হয়। স্রেফ নিগম এলাকায় দলের ভরাডুবির কারণেই দলের এই ব্যর্থতা। ব্যর্থতার কারণ নিয়েই আলোচনা করতে গিয়ে কাউন্সিলরদের তোপের মুখে প্রাক্তন সাংসদ। একের পর এক ব্যর্থতার কারণ নিয়ে সরাসরি প্রাক্তন সাংসদ ও দলের বিরুদ্ধেই তোপ দাগেন কাউন্সিলররা বলে জানা গিয়েছে। সাংসদ তহবিলের অর্থে এলাকার কোন উন্নয়ন হয়নি কিংবা এলাকায় সাংসদকে বিগত পাঁচ বছরে দেখা যায়নি বলে প্রথমেই সরব হন কাউন্সিলররা। এছাড়া এলাকার বাসিন্দাদের প্রয়োজনে সাংসদের শংসাপত্র পেতে কালঘাম ছুটেছে বলেও অভিযোগ করেন তারা। সাংসদ থাকাকালীন মানুষের সঙ্গে জনসংযোগ ছিল না বলেই বহু ভোটার সাংসদকে দেখতেই পাননি বলে অভিযোগ। জেলা ও স্থানীয় নেতৃত্বের তত্ত্বাবধানে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল সাংসদকে ভোটে লড়ার জন্যে। তারাই সাংসদকে ভূল পথে চালিত করেছেন বলেও এদিন অভিযোগ করেন কাউন্সিলাররা। এছাড়াও শ্রমিক সংগঠনের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বও এই ভোটে তৃণমূলের বিরুদ্ধে গেছে। বহু শ্রমিক সংগঠনের কর্মীরা কারখানায় সক্রিয় শ্রমিক সংগঠন করলেও বাইরে দল করে না বলেও তোপ দেগেছেন কাউন্সিলররা। মূল অভিযোগ দলের কান্ডারিদের বিরুদ্ধেই।
এই নির্বাচনে দল কংগ্রেস বিধায়ক বিশ্বনাথ পারিয়াল ও জেলার কার্যকরি সভাপতি উত্তম মুখোপাধ্যায়ের উপর দায়িত্ব দিয়েছিল। তারা তাদের দায়িত্ব পালন করেননি বলেও এদিন প্রাক্তন সাংসদের কাছে অভিযোগ করেছেন কাউন্সিলররা বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। তবে এদিনের বৈঠকে দলের মধ্যে সবথেকে বিতর্কিত ও চর্চিত চরিত্র কংগ্রেস বিধায়ক বিশ্বনাথ পারিয়ালের স্ত্রী তথা মেয়র পারিষদ সদস্য রুমা পারিয়ালের অনুপস্থিতি নিয়ে কাউন্সিলরদের মধ্যেও গুঞ্জন ছড়িয়েছে। বুধবার সকালে তার ওয়ার্ডে একটি অনুষ্ঠানে দেখা গেলেও এদিনের বৈঠকে তিনি ছিলেন না। যদিও এই ব্যাপারে তাকে ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। এই বৈঠক নিয়ে দুর্গাপুরের মেয়র দিলীপ অগস্তি বলেন, “প্রাক্তন সাংসদ আমাকে কাউন্সিলরদের সঙ্গে বসবেন বলে জানিয়েছিলেন। আমি বোর্ড মিটিংয়ের পর তাকে বৈঠক করতে প্রস্তাব দিয়েছিলাম। বৈঠকে হারের কারণ নিয়ে পর্যালোচনা করা হয়। প্রাক্তন সাংসদ তা শোনেন। এর বাইরে দলের অভ্যন্তরীন ব্যাপারে আর কিছু বলব না।”
তবে হারের কারণ হিসাবে প্রাক্তন সাংসদ কিংবা দলীয় নেতৃত্বের একটা অংশকে কাউন্সিলররা দায়ী করলেও তাদের বিরুদ্ধেও মানুষের ক্ষোভ যে চরমসীমায় পৌঁছেছে তা বুঝেছেন প্রাক্তন সাংসদ মমতাজ সংঘমিতা চৌধুরি। এই ব্যাপারে এদিন তিনি মুখে কিছু না বললেও দলের উচ্চ নেতৃ্ত্বকে বিস্তারিত রিপোর্ট জমা দেবেন বলে জানিয়েছেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.