ভাস্কর মুখোপাধ্যায়, বোলপুর: চতুর্থ দফায় বোলপুর লোকসভা কেন্দ্রের ভোটের আগে নানুর নিয়ে চিন্তার চোরা স্রোত তৃণমূলের নিচুতলার কর্মীদের মধ্যে৷ কারণ, এবারই প্রথম নানুর বিধানসভা কেন্দ্রে প্রচারের দায়িত্ব থেকে বাদ পড়েছেন জন্মলগ্ন থেকে তৃণমূলের সঙ্গে থাকা, অত্যন্ত ভরসাযোগ্য নেতা গদাধর হাজরা৷ যা কিনা নানুরকে বেশ খানিকটা পিছিয়ে দিয়েছে বলে মনে করছেন স্থানীয় কর্মীরা৷ তাই আশঙ্কা বাড়ছে, নানুর বিধানসভায় তৃণমূল বেশি ভোটে লিড নাও পেতে পারে৷
৩৪ বছরের বাম সরকারের পতন ঘটিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন প্রথম রাইটার্স বিল্ডিংয়ে মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে বসেন, ২০১১ সালের সেই রাজনৈতিক সন্ধিক্ষণে তাঁর সর্বক্ষণের সঙ্গী ছিলেন নানুরের প্রাক্তন বিধায়ক গদাধর হাজরা। বামেদের শক্ত ঘাঁটি নানুর জয়ের নায়ক ছিলেন তিনি। রাজ্যের রাজনৈতিক সংঘর্ষের মানচিত্রে বীরভূমের নানুর একটা সময় ছিল প্রথম সারিতে। অনুব্রত মণ্ডলের নেতৃত্ব দীর্ঘ লড়াইয়ের পর সিপিএমের এই দুর্গ দখল করে নেয় তৃণমূল। ২০১১ সালে নানুর থেকে বিধায়ক হন গদাধর হাজরা। তারপর থেকে নানুরের সার্বিক দায়িত্ব ছিল তাঁর উপর।
কিন্তু নানুরের মতো জায়গায় ধীরে ধীরে বাড়ছিল দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব৷ এলাকার ক্ষমতা কার দখলে থাকবে, তা নিয়ে দলের অন্দরে একাধিক গোষ্ঠী তৈরি হয়েছিল। ২০১৪-র লোকসভা নির্বাচনে নানুর বিধানসভা থেকে প্রায় ৬০ হাজার ভোটের লিড নেয় তৃণমূল প্রার্থী। কিন্তু তৃণমূলের ভিতরে প্রবল গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব জন্য ২০১৬ সালে বাম প্রার্থী কাছে ২৫ হাজারের বেশি ভোটে হেরে যান গদাধর হাজরা। যা নিয়ে তৃণমূল রাজ্য নেতৃত্বের কাছে রীতিমতো জবাবদিহি করতে হয়েছিল জেলা নেতৃত্বকে। কিন্তু এত কিছুর পরেও গদাধর হাজরাকে নানুর থেকে সরানো হয়নি। জেলা সভাপতির দায়িত্ব পাওয়ার পর অনুব্রত মণ্ডল গদাধর হাজরাকে নানুর বিধনসভার সার্বিক দায়িত্ব দেওয়ার পাশপাশি জেলার যুব সভাপতির পদে বসান৷
মূলত গদাধরের নেতৃত্বে ২০১৮ সালে পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূল ১১টি গ্রাম পঞ্চায়েত, ১৯টি পঞ্চায়েত সমিতি এবং ৩টি জেলা পরিষদের আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় লাভ করে তৃণমূল। এবার নানুরের ভোটের দায়িত্বে ব্লক সভাপতি সুব্রত ভট্টাচার্য এবং জেলাপরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ কেরিম খান। মার্চ মাসে নানুরে বুথভিত্তিক সম্মেলনে জেলা নেতৃত্ব ৬০ হাজারেরও বেশি ভোট লিড দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। কিন্তু যদি সেই লক্ষ্য পূরণ না হয়, তাহলে দায় কার হবে? এনিয়েই চিন্তিত নির্বাচনের দায়িত্বপ্রাপ্তরাও৷ নানুরের ব্লক সভাপতি সুব্রত ভট্টাচার্য সাফ বলছেন, নানুর থেকে এবার ৪০ হাজারের বেশি লিড হবে। অর্থাৎ লিডের অঙ্ক ৬০ হাজারে পৌঁছবে না৷ তবে যাঁকে নিয়ে এত আলোচনা, সেই গদাধর হাজরা অবশ্য নির্বিকার৷ তিনি বলছেন, ‘নানুর ছাড়া বোলপুর লোকসভার অন্তর্গত বাকি বিধানসভাগুলিতে প্রচারের দায়িত্ব দিয়েছে দল। সেই কাজই করে চলেছি।’
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.