ছবি: অমিত সিং দেও।
সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: চাকরি চাই। নইলে নিজেদের মতো করে বুঝে নেবেন। রাজ্য সরকারের উদ্দেশে এমনই হুমকি দিলেন প্রাক্তন মাওবাদীরা। সেইসঙ্গে আরও বার্তা, সরকার দ্রুত চাকরির ব্যবস্থা করলে আবার আগের মতোই মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে তাঁরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই (Mamata Banerjee) বসাবেন। সোমবার পুরুলিয়ার (Purulia) বরাবাজারের ঝাড়খণ্ড লাগোয়া বেড়াদায় তৃণমূলের পতাকার নিচে বৈঠক করে এই সিদ্ধান্ত নিলেন একসময় মাওবাদী সংগঠনে থাকা স্কোয়াড সদস্য বা লিংকম্যানরা। কয়েকদিন আগে এই থানা এলাকাতেই মাওবাদীদের পোস্টার, ব্যানার, প্রচারপত্র উদ্ধার হয়, যাতে নানাবিধ হুঁশিয়ারি ছিল। এরপর বৈঠক করে বার্তা। ফলে বিধানসভা ভোটের আগে প্রাক্তন মাওবাদীদের এমন সিদ্ধান্তে চাপে পড়ে গিয়েছে পুলিশ l পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার এস. সেলভামুরুগণ বলেন, “এই বিষয়টি এখনই শুনলাম, খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।”
সোমবার দুপুরে একদা মাওবাদী (Maoist) উপদ্রুত বেড়াদাতে বাংলা-ঝাড়খণ্ডের প্রায় শতাধিক প্রাক্তন মাওবাদী সদস্য হাজির ছিলেন। তাঁদের মধ্যে বেশ কয়েকজন ইতিমধ্যে সমাজের মূল স্রোতে ফিরেছেন। তবে এই বৈঠক ছিল একেবারে তৃণমূলের পতাকা লাগিয়েl তাই বৈঠকে হাজির ছিলেন একদা মাও মদতপুষ্ট আদিবাসী মূলবাসী জনগণের কমিটির সভাপতি, জঙ্গলমহল উন্নয়নবিরোধী প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি তথা পুরুলিয়া জেলা পরিষদের মেন্টর অঘোর হেমব্রম। তাঁর সামনেই রাজ্য সরকারের পূর্বের ঘোষণা মত চাকরি না পেয়ে প্রাক্তন মাওবাদীরা ক্ষোভ উগরে দেন। এই বৈঠকে আসা তথা বরাবাজার থানায় মামলা থাকা ঝাড়খণ্ডের পূর্ব সিংভূম জেলা বড়াম থানার বুড়িবাসা গ্রামের বাসিন্দা ধনঞ্জয় দাস বলেন, “রাজ্য সরকারের ঘোষণা মত আমাদের চাকরি দিতে হবে, নাহলে আমরা নিজেদের মতো করে বুঝে নেব। যারা একসময় মাওবাদী কার্যকলাপে যুক্ত ছিলেন, তাদের সকলকে চাকরি দিতে হবে।”
আসলে জঙ্গলমহলের এই জেলায় রাজ্য সরকার ঘোষণা অনুযায়ী প্রাক্তন মাওবাদীদের চাকরি দেওয়ার কাজ করলেও এখনও বহু মাওবাদী চাকরি পাননি। তাছাড়া অভিযোগ, এই চাকরি দেওয়ার ক্ষেত্রে নানা বেনিয়ম চলছে। আর এর ফাঁসে প্রকৃত মাওবাদীরা রাজ্য সরকারের পুনর্বাসন প্যাকেজ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বলেও এদিনের বৈঠক থেকে সরাসরি অভিযোগ তুলেছেন তাঁরা । অযোধ্যা পাহাড়ের মাথায় থাকা আরশা থানার ধানচাটানি গ্রামের বাসিন্দা প্রাক্তন মাওবাদী মনিলাল মুর্মুর কথায়, “একসময় অযোধ্যা পাহাড়ে মাওবাদীদের প্রধান ডেরা ধানচাটানির বাসিন্দা আমি। সেইসময় নানা মাওবাদী কার্যকলাপে যুক্ত ছিলাম। কখনও তাদের ডেরা পরিবর্তন, পোস্টারিং, মিছিল, কোন নেতাকে মারতে হবে – দাদাদের সেই নির্দেশ আমরা পালন করেছি। মাওবাদী লিডার বা দাদারা চাকরি পেলেও আমরা পাইনি । দ্রুতগতিতে তা যদি বাস্তবায়িত হয়, তাহলে যেমন জীবন দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে এনেছিলাম তেমনই জীবন দিয়ে তাঁকে আবার রাখব।”
প্রকাশ্যে প্রাক্তন মাওবাদীদের এমন কথা অস্বস্তি বাড়িয়ে দিয়েছে জঙ্গলমহলে তৃণমূলের নেতৃত্বের। তাই ওই বৈঠকে রাজ্য সরকারের সাফল্যের রিপোর্ট কার্ড বিলি করে তৃণমূল নেতা তথা জেলা পরিষদের মেন্টর অঘোর হেমব্রম বলেন, “প্রাক্তন মাওবাদীরা রাজ্য সরকারের অনেক সুযোগ সুবিধা পেয়েছেন। তাঁরা সরকারের পাশেই আছেন। যাঁরা এখনও চাকরি পাননি, সেই সুযোগ পাওয়ার যোগ্য, সেই বিষয়ে আমরা যথাস্থানে কথা বলছি।”
যে বেড়াদা এলাকায় এদিন প্রাক্তন মাওবাদীদের সভা হয়েছে, সেখান থেকে ঝাড়খণ্ডের দূরত্ব মাত্র তিন কিলোমিটার। এর অদূরে প্রায় ১০ দিন আগেই পুলিশ মাওবাদী নথিপত্র উদ্ধার হয়েছে। জানা গিয়েছে, এদিনের সভায় ঝাড়খণ্ড থেকেও দুই প্রাক্তন মাওবাদীও যোগ দিয়েছেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.