ছবি: প্রতিম মৈত্র।
সুনীপা চক্রবর্তী, ঝাড়গ্রাম: একসময়ে বন্দুক হাতে নেমেছিলেন রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপে। ভিড়ে গিয়েছিলেন মাওবাদীদের (Maoist) দলে। আত্মগোপন করে থাকা, অতর্কিত হামলা – এসবই ছিল রোজনামচা। তবে সময়ের চাকা ঘুরেছে। জঙ্গলের গেরিলা জীবন ছেড়ে সমাজের মূলস্রোতে ফিরেছেন ঝাড়গ্রামের প্রাক্তন মাওবাদী নেতা (Ex Mao leader) যজ্ঞেশ্বর বেসরা। রাজ্য পুলিশে হোমগার্ডের চাকরি পেয়েছেন। আর এখন? হাতে তাঁর কোটি টাকা! হ্যাঁ, ঝোঁকের বশে কেটে ফেলা একটা লটারির (Lottery) টিকিটই ভাগ্য বদলে দিয়েছে তাঁর। লটারিতে পুরস্কার স্বরূপ কোটি টাকা পেয়ে গিয়েছেন যজ্ঞেশ্বর বেসরা। এত টাকা কীভাবে কাজে লাগাবেন, বুঝেই উঠতে পারছেন না তিনি।
লাকি ডে ২১ জানুয়ারি। এই দিনটিতেই লটারি কেটেছিলেন প্রাক্তন মাওবাদী নেতা যজ্ঞেশ্বর বেসরা। ঝাড়গ্রাম স্টেশনের পাশে একটি দোকান থেকে ১৫০ টাকা খরচ করে কেটেছিলেন বিখ্যাত একটি লটারির টিকিট। কিন্তু ভাবেননি, সেই কাগজের টিকিটেই লেখা রয়েছে তাঁর প্রাপ্তিযোগ। এরপর বিকেলে যজ্ঞেশ্বর সহকর্মীর সঙ্গে চলে গিয়েছিলেন ঝাড়গ্রামে জঙ্গলমহল উৎসবে। মেলায় ঘুরতে ঘুরতেই দেখেন, তিনি যে লটারি কিনেছিলেন, তার খেলা চলছে। তিন পর্বের খেলায় অংশ নেওয়ার পর যজ্ঞেশ্বরকে জয়ী ঘোষণা করা হয়। হাতে পান কোটি টাকা!
জানা গিয়েছে, যজ্ঞেশ্বর বেসরার আদি বাড়ি ঝাড়গ্রামের গোপীবল্লভপুরে। যৌথ পরিবারে দরিদ্রের ছাপ স্পষ্ট। সামান্য জমিতে চাষবাস করে কোনওক্রমে দিন গুজরান হয়। তারউপর পরিবারের এক ছেলে ঘরবাড়ি ছেড়ে মাওবাদীদের দলে নাম লিখিয়েছে। ফলে সংসারে চিন্তা আরও কয়েকগুণ বেশি। ২০০৮ সালে যজ্ঞেশ্বরের পরিচয় ‘মাওবাদী’ হওয়ার পর থেকে সংসারের অবস্থার আরও অবনতি হতে থাকে। ২০১১এ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যের ক্ষমতায় আসার পর মাওবাদীদের মূল স্রোতে ফেরাতে চেয়ে পুনর্বাসন প্যাকেজ ঘোষণার করেন। তাতে সাড়া দিয়ে ২০১৪ সালে মাওবাদী সংসর্গ ত্যাগ করে আত্মসমর্পণ করেন যজ্ঞেশ্বর। আপাতত তিনি ঝাড়গ্রাম থানার পুলিশের হোমগার্ড। তাই কাজের সূত্রে থাকেন ঝাড়গ্রাম শহরে।
বৃহস্পতিবার বিকেলে কোটি টাকা হাতে পেয়ে কী করবেন, তা এখনও ঠিক করে উঠতে পারেননি আজীবন দারিদ্র্যের সঙ্গে সংগ্রাম করা যজ্ঞেশ্বর বেসরা। কখনও তাঁর ইচ্ছে হচ্ছে, গোপীবল্লভপুরের বাড়িটা পাকা করে ফেলার। আবার কখনও কিছু চাষের জমি কিনতে চাইছেন। যাতে চাষবাস আরও ভাল করে করতে পারেন তাঁর পরিবারের সদস্যরা। পরিকল্পনা যাই হোক, আপাতত কোটি টাকা সুরক্ষিতভাবে রাখাই বড় কথা। তারপর তো তা খরচের পরিকল্পনা পাকা হবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.