পলাশ পাত্র, তেহট্ট: সমস্ত জল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে ছাত্রাবস্থা থেকে এসএফআই করা প্রাক্তন বিধায়ক সমর ঘোষ গেরুয়া শিবিরে নাম লেখালেন। বামপন্থায় আস্থা হারিয়ে যে বিজেপিতে তাঁর এই যোগদান সেকথাও অকপটে স্বীকার করেছেন সিপিএম থেকে বহিষ্কৃত হওয়া করিমপুরের প্রাক্তন এই বিধায়ক।
বুধবার হাওড়ার রাম গড়িয়া ভবনে রাজ্য বিজেপি বিশেষ যোগদান পর্বের আয়োজন করেছিল। বিজেপির দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, যোগদান অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সংগ্রহ অভিযানের প্রমুখ মধ্যপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান, রাজ্য বিজেপির সহ-সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদার-সহ বিজেপি নেতৃত্বের উপস্থিতিতে এই যোগদান পর্ব চলে। এই যোগদান পর্বে বিভিন্ন বুদ্ধিজীবী থেকে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব বিজেপিতে যোগদান করেন। এই অনুষ্ঠানেই করিমপুরের প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক সমরেন্দ্রনাথ ঘোষ বিজেপির দলীয় পতাকা হাতে নিয়ে নতুন করে রাজনৈতিক জীবন শুরু করলেন।। তিনি বলেন, ‘বামপন্থা ভাল। বামপন্থীরা নয়। ২০১১ সাল থেকে দলের বামপন্থীদের কাছ থেকে কম অত্যাচারের শিকার হতে হয়নি! সিপিএমে থেকে হাড়ে হাড়ে আমি টের পেয়েছি। বামপন্থী না বামপন্থা বড় এ নিয়ে আমার কনফিউশন আছে। পন্থী আর পন্থার মধ্যে তফাত আছে। আমাকে তো চলতে হয় মানুষ নিয়ে। কোন পন্থা নিয়ে চলে তো আমার লাভ হবে না।’ তার দলবদলের সাফাই দিতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘মানুষ ভোট দেয় সেই দলের নীতি আদর্শের উপর দাঁড়িয়ে। মানুষকে নিয়েই হয় গণতন্ত্র। তাই ২০১১ সাল থেকে এই বামপন্থীদের দ্বারা অত্যাচারিত হয়েও দলটা করেছিলাম। কিন্তু আমাকে বহিষ্কার করল কেন? আমি তো চিঠি দিয়ে জেলা সম্পাদকের কাছে জানতে চেয়েছিলাম। কিন্তু উত্তর দেয়নি। তাই আস্থা হারিয়ে দলবদল।’
তাঁর বহিষ্কার প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘আমাকে সম্পূর্ণ ভ্রান্ত ধারণা থেকে বশবর্তী হয়ে বহিষ্কার করা হয়। আমি একমাস সাতদিন অপেক্ষা করেছিলাম। এমনকি যখন জয়েন করার কথা হচ্ছে তখন দুদিন সময় চাই।’ ছাত্রাবস্থা থেকে যে বামপন্থার সঙ্গে তাঁর নাড়ির সম্পর্ক তাকে দূরে ঠেলে সম্পূর্ণ বিপরীত মেরুর অবস্থান নিয়ে বিজেপিতে যাওয়া নিয়ে তাঁর কোনও অনুশোচনা বা আক্ষেপ নেই। বরং সিপিএম নেতারা তাঁর রাজনৈতিক ভাবে বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে ছলচাতুরির আশ্রয় নিয়েছেন বলে তাঁর অভিমত। সমরবাবুর সাফ কথা, ‘কোনও দল খারাপ নয়। তাদের নীতি আদর্শ মানুষের সামনে তুলে ধরে যদি উপকার করা হয় সেটা একটা কাজ। সেই জায়গা থেকে নরেন্দ্র মোদির কাজ বা বিজেপি একটা দল। যে দলের হয়ে কাজ করে তৃণমূলের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো যাবে।’
প্রশ্ন ওঠে তবে কেন বিজেপি? কংগ্রেস অন্য দল নয় কেন? সেক্ষেত্রে সমরবাবু কংগ্রেসের অস্তিত্ব, সংগঠন নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘একটা শক্তিশালী সংগঠনের মাধ্যমে তৃণমূলকে আটকাতে বিজেপিই বিকল্প।’ তবে তৃণমূলের কোন পন্থাই নেই বলেও তিনি কটাক্ষ করেন। প্রসঙ্গত, করিমপুর বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়িক মহুয়া মৈত্র সাংসদ হওয়ায় ওই কেন্দ্রে উপনির্বাচন হওয়ার কথা। সেক্ষেত্রে সমরবাবু বিজেপির প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই দাবিদার। স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্ব কি তাকে মেনে নেবে? লাখ টাকার এ প্রশ্ন সকলের মুখে। এ প্রসঙ্গে সমরবাবু বলেন, ‘আমার সংসদীয় গণতন্ত্রের উপর আস্থা রয়েছে দীর্ঘদিন। সেখান থেকে বিচ্যুত হইনি। আমারও একটা নীতি আদর্শ রয়েছে। তাকে সামনে রেখে রাজনীতি করব। এই প্রার্থী হওয়াটা ছোট ব্যাপার। আমি বিধায়ক-সাংসদ হওয়ার জন্য বিজেপিতে আসিনি। কাজ করার জন্য এসেছি। তাই স্থানীয়রা মেনে নেবে কিনা এটা তাঁদের ব্যাপার।’
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.