বাবুল হক, মালদহ: টিকিট না পেয়ে গনির প্রাসাদে বসেই এবার বেসুরো ডালু! প্রয়াত বরকত গনি খান চৌধুরির ভাই ডালু ওরফে আবু হাসেম খান চৌধুরি শনিবার মালদহের কোতোয়ালিতে প্রয়াত গনি খান সাহেবের প্রাসাদে বসে বলেন, “বিজেপিতে অনেক ভালো লোক রয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও খারাপ না। তৃণমূলিরাই মোদির নামে অপপ্রচার চালিয়ে তাঁকে মানুষের কাছে খারাপ সাব্যস্ত করতে চাইছে।” কংগ্রেসের প্রাক্তন সাংসদের মুখে ‘চিরশত্রু’ বিজেপির প্রশংসা শুনে ভ্রু কুঁচকেছেন অনেকে। দলবদলের মরশুমে ডালুবাবুর মন্তব্য বেশ তৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।
দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পর কলকাতা থেকে মালদহে ফিরেছেন চারবারের কংগ্রেস সাংসদ আবু হাসেম খান চৌধুরি (ডালু)। তিনি নিজেই জানালেন, কলকাতায় তাঁর চিকিৎসা চলছিল। পিঠে ব্যাথা নিয়ে তিন-চারবার তাঁকে বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে। মালদহ দক্ষিণ কেন্দ্রের বিদায়ী সাংসদ বলেন, “আমিই প্রার্থী হতে চেয়েছিলাম। এআইসিসিও তাই চেয়েছিল। পিঠে ব্যথা নিয়ে চিকিৎসা করার জন্যই দাঁড়াতে পারলাম না।” প্রায় তিন মাস পর কোতোয়ালিতে ফিরেছেন তিনি।
এদিন এনআরসি ও সিএএ ইস্যুতে কার্যত গেরুয়া শিবিরের পাশে দাঁড়িয়ে তৃণমূলকে তুলোধোনা করেন গনির ভাই তথা মালদহ জেলা কংগ্রেস সভাপতি আবু হাসেম খান চৌধুরি। তিনি এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন, “বিজেপি এনআরসি চালু করে মুসলিমদের তাড়িয়ে দেবে, এটা সঠিক নয়। এটা নিয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে ভোট নেওয়ার অপচেষ্টা চালাচ্ছে তৃণমূল।” ডালুর সাফ কথা, “নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন নিয়ে তৃণমূলের কিছু করার ক্ষমতা নেই। ওরা ভুল বুঝিয়ে ভোট চাইছে। কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের যে তদন্তকারী এজেন্সিগুলি রয়েছে তারা তৃণমূলের একটার পর একটাকে ধরে জেলে ঢুকিয়ে দিচ্ছে। তৃণমূল নিজেদের নেতাদের বাঁচাতে পারছে না। তাহলে ওরা কি করে মুসলিমদের তথা একটা শ্রেণির মানুষকে বাঁচাবে?”
এবার মালদহ দক্ষিণ লোকসভা কেন্দ্র থেকে অসুস্থতার কারণে ডালুকে প্রার্থী করেনি কংগ্রেস। তাঁর পরিবর্তে ওই কেন্দ্রে কংগ্রেসের প্রার্থী হয়েছেন ডালুবাবুর ছেলে ইশা খান চৌধুরি। কোতোয়ালিতে ফিরে এদিন সারাদিন বাড়িতেই ছিলেন ডালুবাবু। দুপুরে গনির প্রাসাদে বসেই তিনি সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন। এই লোকসভা নির্বাচন প্রসঙ্গে বিশদভাবে রাজনৈতিক বিশ্লেষণ করেন ডালু। দক্ষিণ মালদহের বিদায়ী সাংসদ বলেন, “একুশের বিধানসভা নির্বাচনে সুজাপুর কেন্দ্রে প্রার্থী হয়েছিল আমার ছেলে ইশা। সেই সময় এনআরসি এবং সিএএ নিয়ে মানুষকে ভুল বুঝিয়েছিল তৃণমূল। ফলে আতঙ্কিত সংখ্যালঘুদের একটা বড় অংশ তৃণমূলকে ভোট দিয়ে জয়ী করেছিল। পরাজিত হয়েছিল কংগ্রেস। এরপর কেটেছে কয়েকটা বছর। অনেকেই তৃণমূলকে ভোট দিয়ে ভুল করেছিলেন, তা এখন আমার কাছে এসে স্বীকার করছেন। নাগরিকত্ব আইন সম্পর্কে ভুল বুঝিয়ে আর ভোট নিতে পারবে না তৃণমূল। কারণ, মানুষ সবটাই বুঝে গিয়েছে। মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ বুঝে গিয়েছে, তৃণমূল এই নাগরিকত্ব আইন নিয়ে ফাঁকা আওয়াজ দিচ্ছে। তৃণমূলের অবস্থা খুবই খারাপ।”
বিদায়ী কংগ্রেস সাংসদ ডালুবাবু এদিন আরও বলেন, “শারীরিক অসুস্থতার কারণে আমি বেশ কয়েক মাস বাইরে ছিলাম। শরীরটা কিছুটা ঠিক হয়েছে। ছেলে ইশার প্রচারে আমি নামব। ওঁর জন্য মানুষের কাছে ভোট চাইব। ওখানে কংগ্রেসের মূল প্রতিপক্ষ কেউ নেই। তবে শুনেছি, বিজেপি প্রার্থী হিসেবে একজন ভদ্রমহিলা বাইরে থেকে এসেছেন। তাতে কোনও লাভ হবে না। কারণ বিজেপির অনেক সমর্থকরা আমার সঙ্গে দেখা করেছেন। বহিরাগত প্রার্থীকে মানতে চাইছেন না তাঁরা। অনেকেই আমার মধ্যে নাকি দাদা গনিখান চৌধুরির ছায়া দেখতে পান। সেটা তাঁদের আবেগ। তবে এবারে ছেলেকে দক্ষিণ মালদহের দায়িত্ব দিয়েছি। আমার আশা, মানুষ ইশাকে মেনে নিবেন। কারণ গত বিধানসভা নির্বাচনে যে ভুলটা হয়েছিল, তাতে অনেক ভোটাররাই দুঃখ প্রকাশ করেছেন। ইশা ভালো ছেলে ও কাজের ছেলে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.