Advertisement
Advertisement
First graduate sabar girl Ramanita

শবর জনজাতির প্রথম স্নাতক, নারীশিক্ষায় আঁধার ঘুচিয়ে বিশ্ব আদিবাসী দিবসে আইকন রমনিতা

বিশ্ব আদিবাসী দিবসে রমনিতাকে কুর্নিশ।

Everyone salutes first graduate sabar girl Ramanita in International tribal day, 2021 । Sangbad Pratidin

ছবি: অমিতলাল সিং দেও

Published by: Sayani Sen
  • Posted:August 9, 2021 1:26 pm
  • Updated:August 9, 2021 3:00 pm  

সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: সকাল হলেই তির-ধনুক, লাঠি, বর্শা হাতে পাড়া-পড়শি চলে যেত জঙ্গলে। তারপর গোসাপ, ব্যাঙ ‘শিকার’ করে নিয়ে এসে পুড়িয়ে, শাক পাতা সেদ্ধ করে চলত খাওয়া-দাওয়া। দুপুরের আগেই হাঁড়িয়ার নেশায় ডুবে যেত। তারপর সন্ধে নামলেই পথে নেমে লুটপাঠ। তাই ব্রিটিশরা এই আদিম জনজাতিকে ‘জন্ম অপরাধী’ আখ্যা দেয়। ফলে শৈশব থেকে শবর টোলায় এমন ছবিই দেখে এসেছিলেন রমনিতা (Ramanita Sabar)। আর ১৫-১৬ বছর হলেই বিয়ে করে নতুন সংসার পাতার নিয়ম। সেই নিয়মের বেড়া ভেঙেই শবর মহিলাদের শিক্ষার আঁধার ঘোচাচ্ছেন তিনি। শবর-খেড়িয়া জনজাতির মহিলাদের মধ্যে এই প্রথম স্নাতক হয়ে নারী শিক্ষায় যেন আলো ফেলেছেন অজ পাড়া গাঁয়ের শবর টোলায়। নারী শিক্ষার প্রসারে শবর টোলা থেকে আদিবাসী পাড়ায়-পাড়ায় প্রচারও চলছে তার। তাই বিশ্ব আদিবাসী দিবসে অনেক বেশি প্রাসঙ্গিক জঙ্গলমহলের নারীশিক্ষার আইকন রমনিতা শবর।

পুরুলিয়ার (Purulia) জঙ্গলমহল বরাবাজার ব্লকের সিন্দরি গ্রাম পঞ্চায়েতের ফুলঝোর গ্রামে তার মাটির বাড়ি। শিশু শিক্ষা থেকে প্রাথমিক পাঠ। তারপর মাধ্যমিক পাশও করেন ঝাড়খন্ডের পূর্ব সিংভূম জেলার চৌকা থেকে। হস্টেলে থেকে লেখাপড়া চালানোর পর পুরুলিয়া শহরের কস্তুরবা হিন্দি বালিকা বিদ্যালয় থেকে উচ্চমাধ্যমিক দেন। এরপর পূর্ব সিংভূম জেলার পটমদা ডিগ্রি কলেজ থেকে ইতিহাসে স্নাতক। কিন্তু এই দীর্ঘ লড়াইটা সহজ ছিল না তাঁর। আজ এই জায়গায় পৌঁছতে ওই আদিবাসী তরুণীকে কম কাঠখড় পোড়াতে হয়নি। শিশু শিক্ষা থেকে মাধ্যমিক পর্যন্ত শবর জনজাতির কল্যাণ সাধনে যাঁরা কাজ করেন তাঁরা রমনিতার লেখাপড়ার দায়িত্ব নিলেও উচ্চমাধ্যমিকের পড়াশোনায় প্রতিবন্ধক হয়ে গিয়েছিল অর্থ। তিন ভাই-বোন আর বাবা-মা-র পাঁচজনের সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরানোর অবস্থা তাঁদের।

Advertisement

Ramanita

[আরও পড়ুন: কান কামড়ে ছিঁড়ে নিল ‘রাক্ষস’ ছেলে! প্রতিবেশী যুবকের বিরুদ্ধে থানায় পুরকর্মী]

সামান্য চাষবাস, প্রাণীপালন, হাতের কাজ আর দিনমজুরির কাজ করে মাসে হাজার পাঁচেক টাকা হাতে আসে রমনিতার বাবা মহাদেব শবরের। সেই টাকা থেকেই ফি মাসে পুরুলিয়া শহরে শুধুমাত্র মেসের খরচ হিসেবেই দু’হাজার টাকা মেয়েকে দিতে হত। এমন বহু মাস গিয়েছে ছাগল, মুরগি বিক্রি করে বা ধারদেনা করে মেসের খরচ কোনভাবে মেয়ের হাতে তুলে দিয়েছেন বাবা। কিন্তু একদিনের জন্যও বলেননি লেখাপড়া বন্ধ করে দেন। কিন্তু পাড়া-পড়শিরা সবাই বলতো এত লেখাপড়া করে কি হবে? এমন কথায় কান ঝালাপালা হয়ে যেত শবর কন্যার। কিন্তু একটা কথাও বলত না। আজ স্নাতক (Graduate) হয়ে এইসব প্রশ্নের জবাব দিতে পেরেছেন তিনি।

এখন আর তাঁকে কেউ বলেন না কেন তুই আরও লেখাপড়া করিস? বিশ্ববিদ্যালয়ে যাস? সিধো-কানহো-বিরসা বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন ইতিহাসে স্নাতকোত্তরের পাঠ নিচ্ছেন রমনিতা। সোমবার থেকেই তার দ্বিতীয় সেমিস্টারের অনলাইন পরীক্ষা শুরু। মাটির ঘরে মোবাইলের মাধ্যমে ইন্টারনেট সংযোগ করে এখন অনলাইনে ক্লাস করেন এই আদিবাসী তরুণী। তার হস্তশিল্পও চোখ টানে। রমনিতার কথায়, ” অধ্যাপক হতে চাই। শবর জনজাতির মহিলাদের উচ্চশিক্ষার আলোয় নিয়ে আসায় আমার চ্যালেঞ্জ। যেদিনই এই কাজ করতে পারব, সেদিনই আমার প্রথম স্নাতক হওয়া সার্থক হবে।”

Ramanita

করোনাকালে অনলাইনে নিজে পড়াশোনার পাশাপাশি তাঁদের গ্রামের ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার দায়িত্ব নিয়েছেন তিনি। অক্ষর পরিচয় করানো থেকে শুরু করে অঙ্ক শেখানো।ফি দিন চলে রমনিতার পাঠশালা। কিশোরীদের বোঝান শিক্ষা কতখানি প্রয়োজন। এলাকার কোন আদিবাসী কিশোরী যাতে স্কুলছুট না হয়ে যায় সেদিকেও নজর রয়েছে তার। পশ্চিমবঙ্গ খেড়িয়া শবর কল্যাণ সমিতির অধিকর্তা প্রশান্ত রক্ষিত বলেন, “শবর জনজাতির নারী শিক্ষায় রমনিতা আজ উদাহরণ। নারী শিক্ষার আঁধার গুচিয়ে আলোর পথে নিয়ে যাচ্ছেন ওই শবর তরুণী। বিশ্ব আদিবাসী দিবসে তাঁকে কুর্নিশ।”

[আরও পড়ুন: প্রতিশোধ নিতে পরকীয়ায় মগ্ন স্বামীকে খুন, সন্তানকেও হত্যায় অভিযুক্ত গৃহবধূ]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement