সংগ্রাম সিংহরায়, শিলিগুড়ি: সব মিলিয়ে বড়জোর জনসংখ্যা আড়াইশো। ৫০টির মতো পরিবার। শিলিগুড়ি শহর থেকে দূরত্ব প্রায় ৪০ কিলোমিটার। একই মহকুমার খড়িবাড়ি ব্লকের বুড়াগঞ্জ গ্রাম পঞ্চায়েতের চুচুরমুচুর গ্রাম। এই গ্রামে পাকা বাড়ি আছে। একশো দিনের কাজ আছে। প্রতি ভোটে নেতা-মন্ত্রীদের আনাগোনাও আছে। রয়েছে প্রতিশ্রুতির বন্যাও। অথচ ২০১৯ সালের শেষে এসেও এখানে এখনও বিদ্যুৎ পৌঁছয়নি। ফলে হতাশাই ভরসা চুচুরমুচুরের বাসিন্দাদের। স্থানীয়দের আক্ষেপ, কেউ ঘুরেও তাকায় না।
গ্রামবাসীদের এই সমস্যার কথা সবটাই জানেন শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের সভাধিপতি অধ্যাপক তাপস সরকার। এপ্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা বিদ্যুৎ বন্টন কোম্পানির সঙ্গে কথা বলেছি। তারাও বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে ইচ্ছুক। কিন্তু, খুঁটি পোঁতার জায়গা না মেলায় ওই গ্রামে বিদ্যুৎ ঢোকানো যায়নি। তবে আমরা চেষ্টা করছি যাতে সমস্যার সমাধান হয়।’
প্রশ্ন হচ্ছে স্বাধীনতা লাভের এত বছর পরও খুঁটি পোঁতার জায়গা পাওয়া যায়নি কেন? স্থানীয় সূত্রে খবর, লাগোয়া জমিতে একটি চা বাগান লিজে নেওয়া রয়েছে। ওই বাগান কর্তৃপক্ষ দশ বছর আগে একবার বাধা দিয়েছিল। তখন খুঁটি এসেও ঘুরে গিয়েছিল। কিন্তু, তারপর থেকে এই সমস্যা মেটাতে কেউ উদ্যোগ নেয়নি। কিন্তু, এখনও যে তা মেটানো যাবে না, এটা মেনে নিতে নারাজ শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের বিরোধী দলনেতা তৃণমূলের কাজল ঘোষ।
তাঁর দাবি, স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধান থেকে মহকুমা পরিষদ সভাধিপতি সকলেই সিপিএমের। ৩৪ বছরে প্রমাণিত তাঁরা কতটা কাজ করতে আগ্রহী। আমরা বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। যত দ্রুত সম্ভব এখানে বিদ্যুৎ পৌঁছনোর ব্যবস্থা করা হবে।
সিপিএম পরিচালিত পঞ্চায়েতের সদিচ্ছা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন শিলিগুড়ি সাংগঠনিক জেলার বিজেপি যুব মোর্চা সভাপতি এবং স্থানীয় বাসিন্দা কাঞ্চন দেবনাথও। তিনি বলেন, ‘বামেরা রাজ্যে ক্ষমতায় থাকাকালীনও কিছু করেনি। তৃণমূলও বহুদিন হয়ে গেল ক্ষমতায়। ইচ্ছে থাকলেই এতদিনে বিদুৎ আনতে পারত। কিন্তু, রাজনৈতিক চাপানউতোরের জন্য ছেড়ে দিয়েছে।’
চুচুরমুচুরে না থাকলেও আশপাশের আর পাঁচটি গ্রামে দিব্যি রয়েছে বিদ্যুৎ সংযোগ। আধুনিক সুযোগ-সুবিধাও মিলছে যথেষ্টই। এই কথা উল্লেখ করে চুচুরমুচুরের এক বাসিন্দা রবিউল মিঞা আক্ষেপ করেন, দূর থেকে পাশের গ্রামগুলিতে রাতে আলোর মালা দেখতে পাই। অথচ আমরা এখনও হ্যারিকেন, কুপির আলোয় জেগে থাকি।
অন্য এক বাসিন্দা সুলেখা মণ্ডলের ক্ষোভ, ‘সব জায়গায় বাচ্চারা রাতে বিদ্যুতের আলোয় পড়াশোনা করে। আমাদের বাচ্চারা সে স্বাদ এখনও পেল না। মোবাইল ফোন থেকে আধুনিক গেজেট, বিদ্যুৎ না থাকায় সবটাই তাঁদের কাছে এখনও দূরের জিনিস।’ স্থানীয় প্রধান লক্ষ্মী সিংহ বলেন, ‘এখানে দীর্ঘদিন ধরেই সমস্যা রয়েছে। বাগান কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। তবে এখনও সমাধান হয়নি। সমস্তটাই সভাধিপতিকে জানানো হয়েছে।’
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.