সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: দুপুর শেষে সবে বিকালের শুরু। মঙ্গলবার তখন কাশ্মীরের অনন্তনাগের বৈসরনে রিসর্টের আশেপাশে আড্ডায় ব্যস্ত পর্যটকরা। কেউ আবার হর্স রাইডিং-এ। আর ঠিক সেই সময়েই জঙ্গি হানা । একে-৪৭ তাক করে চলল গুলি। ঘোড়া থেকে নেমে পুরুলিয়ার ঝালদার বাসিন্দা আইবি অফিসার মণীশরঞ্জন মিশ্র চেষ্টা করছিলেন কায়দা করে অন্যান্যদের বাঁচানোর। আর ঠিক তখনই এক জঙ্গির চোখে পড়ে যান তিনি। ইশারায় কি যেন জানতে চায়! এরপরই নজরে পড়ে তাঁর হাতে থাকা বিপত্তারিণীর লাল সুতো! ব্যাস, আর এক মুহূর্তও অপেক্ষা করেনি জঙ্গিরা। ঝাঁঝরা করে দেয় মণীশরঞ্জনকে।
জানা যাচ্ছে, ঘটনার সময় একটু দূরেই ছিলেন মণীশের স্ত্রী জয়া। স্বামীকে ওই অবস্থায় দেখে আর্তনাদ করে ওঠেন তিনি। সঙ্গে ছিল ১২ বছরের ছেলে সমৃদ্ধ ও ৬ বছরের মেয়ে। বাবা মণীশকে মেরে ১২ বছরের ছেলেকেই টার্গেট করেছিল ওই জঙ্গি। আর তখনই ছেলে ও মেয়েকে কোলে নিয়ে দৌড়ে পালান জয়া। সামনে একটি দোকান থাকায় নজর এড়িয়ে যায় জঙ্গির। কিছুটা আড়ালে গিয়ে ছেলে-মেয়েকে নিয়েই পড়ে যান জয়া দেবী। তারপর আবার উঠে পিছন ফিরে দেখেন রক্তাক্ত হয়ে পড়ে রয়েছেন তাঁর স্বামী। কিন্তু ছেলে-মেয়েকে বাঁচাতে তাদের নিয়ে জঙ্গলে মিশে যান তিনি। বাড়ি ফিরেও প্রায় অচৈতন্য অবস্থায় জয়াদেবী। কখনও জ্ঞান ফিরলে চোখ বন্ধ করে এই কথাগুলোই আওড়ে যাচ্ছেন। নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ৪৮ ঘণ্টা পার হলেও ভূস্বর্গের আতঙ্ক কাটছে না আইবি অফিসারের স্ত্রীর। একই অবস্থা দম্পতির দুই সন্তানের।
ওই হামলার বেশ কয়েক ঘণ্টা পর জঙ্গল থেকে জয়াদেবী ও তার ছেলে মেয়েকে সেদিন সেনাবাহিনী উদ্ধার করে। শোকে অসুস্থ হয়ে যাওয়া জয়া দেবীকে ওই দিন বিকালেই পহেলগাঁও হাসপাতালে ভর্তি করেন জওয়ানরা। তার আগে কোনক্রমে ফোনে তার দেওর বিনিতকে জয়া জানান, “হাবিকো জঙ্গি লোগ গুলি মার দিয়া।” বউদির সেই কথা এখনও কানে বাজে বাঁকুড়ায় কর্মরত আবগারি দপ্তরের আধিকারিক তোর ছোট ভাই বিনীত মিশ্রর কানে। রীতি অনুযায়ী এদিনই মস্তক মুণ্ডন করেন তিনি। পুরুলিয়া জেলা পুলিশের গার্ড অফ অনারের সময় মৃতদেহের পাশে দাঁড়িয়ে থেকে শেষ শ্রদ্ধা জানান দাদাকে। তাদের পিসতুতো বোন স্নেহা বলেন, “বউদি বলছিলেন মণীশকে গুলি করে ১২ বছরের সমৃদ্ধকে জঙ্গিরা টার্গেট করেছিল। ছেলে-মেয়েকে কোলে নিয়ে পালিয়ে যাওয়াতেই বেঁচে যায় তারা।” একথা বলতেই চোখে জল চলে আসে তার। কান্না থামছে না ১২ বছরের সমৃদ্ধেরও। শুধু-ই বলে যাচ্ছে ‘পাপা’। কাঁদতে কাঁদতে শ্মশানে মুখাগ্নি করতে পারেনি সে। তার কাকা বিনিত-ই দাদার মুখে আগুন দেয়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.