অরূপ বসাক, মালবাজার: উত্তরবঙ্গে গাড়ি চলাচলের পথকে আরও সুগম করতে ফ্লাইওভার তৈরি হবে। আর এই ফ্লাইওভারের জন্য কাটা হবে প্রায় পাঁচ হাজার গাছ। তাই বন বাঁচাতে গরুমারার জঙ্গলে ২০ কিলো কাঁঠালের বীজ ছড়ালেন জলপাইগুড়ির এক পরিবেশপ্রেমী সংগঠনের সদস্যরা। আন্দোলন করেও ফ্লাইওভার তৈরি রোখা যায়নি। কেননা গ্রিনট্রাইব্যুনালও ওভারব্রিজের পক্ষেই রায় দিয়েছে। তাই বন সংরক্ষণে নতুন গাছের উপরেই ভরসা রাখছে পরিবেশপ্রেমী সংগঠন গ্রিনভ্যালি ওয়েলফেয়ার অর্গানাইজেশন। সংগঠনের কর্মীদের আশা, বিপুল হারে কাটা পড়া গাছের ক্ষতি পূরণ করবে এই ভবিষ্যতের মহীরূহরা।
জানা গিয়েছে, জলপাইগুড়ির নেওড়া মোড় থেকে বিচাডাঙা পর্যন্ত প্রায় দু’কিলোমিটার দীর্ঘ ফ্লাইওভার তৈরির কথা হয়। সেইমতো ২০১৭-র এপ্রিলের তিন তারিখে লাটাগুড়ির জঙ্গলে গাছে কোপ পড়ে। ফ্লাইওভার তৈরি করতে গিয়ে শয়ে শয়ে গাছ কাটা পড়বে, ধ্বংস হবে বনাঞ্চল। এহেন ক্ষতির হাত থেকে গাছকে বাঁচাতে উঠে পড়ে লাগে স্থানীয় পরিবেশপ্রেমী সংগঠনগুলি। প্রথমদিন লাটাগুলির জঙ্গলে গাছকাটা শুরু হলেই বাধা দেন সংগঠনের কর্মীরা। এহেন সরকারি সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে পরের দিন থেকেই শুরু হয় ধরনা। ৫ এপ্রিল আন্দোলনরত পরিবেশপ্রেমী সংগঠনের কর্মীদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন মহকুমাশাসক। তবে তাতে কোনও সুরাহা হয়নি। গাছ বাঁচাতে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় সংগঠনগুলি। গাছ কাটায় তিনদিনের স্থগিতাদেশ দেওয়ার পর গত বছর ১০ এপ্রিল মামলাটিকে গ্রিন বেঞ্চে পাঠানো হয়। কেন্দ্রীয় বন ও পরিবেশমন্ত্রকের ছাড়পত্র ছাড়া গাছ কাটা যাবে না বলে জানায় গ্রিনবেঞ্চ। সেই ছাড়পত্র দাখিলের পরেই গত মঙ্গলবার থেকে ফের গাছ কাটা শুরু হয়েছে লাটাগুড়িতে।
এরই প্রতিবাদে শনিবার জঙ্গলে কাঁঠালের বীজ ছড়ালেন পরিবেশপ্রেমী সংগঠন জলপাইগুড়ি গ্রিনভ্যালি ওয়েলফেয়ার অর্গানাইজেশনের সদস্যরা। সংগঠনের সভাপতি প্রশান্ত সরকার জানান, উন্নয়নের জন্য তৈরি হবে ফ্লাইওভার। আর এর জন্য বেসরকারি হিসেবে বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় ৫ হাজার গাছ কাটা পড়বে। এনিয়ে বছর ভর আন্দোলন হয়েছে। কিন্তু গ্রিন ট্রাইব্যুনাল ফ্লাইওভারের পক্ষে রায় দেয়। তিনি বলেন, “আদালতের রায় আমরা মানতে বাধ্য। তাই আজ আমরা গরুমারার জঙ্গলের রাস্তার দু’ধার দিয়ে প্রায় ১০ কিলোমিটারের মতো এলাকাজুড়ে ২০ কিলো কাঠালের বীজ ছড়ালাম। এই বীজ থেকে জন্ম নেওয়া গাছ আবার সবুজ করে তুলবে এই বনাঞ্চলকে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.