কৃষ্ণনগরে ঘট বিসর্জনের শোভাযাত্রা।
নিজস্ব সংবাদদাতা, তেহট্ট: জগদ্ধাত্রী পুজোকে কেন্দ্র করে চন্দননগর ও কৃষ্ণনগরের মধ্যে চলা সুস্থ প্রতিযোগিতার কথা সকলেরই জানা। তারপরেও এই দুই এলাকার জগদ্ধাত্রী পুজোর মধ্যে কিছু পার্থক্য রয়েই গিয়েছে। কৃষ্ণনগরের জগদ্ধাত্রী পুজোর ভাসানের সঙ্গে ঘট বিসর্জনের একটা সম্পর্ক রয়েছে। বেশ ধুমধাম করেই এই ঘট বিসর্জন হয়। যত দিন যাচ্ছে ঘট বিসর্জনের শোভাযাত্রার শ্রীবৃদ্ধি ততই বাড়ছে। আর এই ঘট বিসর্জনই চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজোর থেকে কৃষ্ণনগরকে আলাদা করে দিয়েছে। তাই একদিনের জগদ্ধাত্রী পুজো দেখতে কৃষ্ণনগরে যতটা না ভিড় হয়, তার থেকে অনেক বেশি দর্শনার্থী আসেন ঘট বিসর্জনের শোভাযাত্রা সামনে থেকে প্রত্যক্ষ করতে।
বলা বাহুল্য, ঘট বিসর্জনের সূচনা নিয়েও কৃষ্ণনগরের বিভিন্ন বারোয়ারি পুজোর মধ্যে একটা ঠান্ডা লড়াই বর্তমান। তবে স্থানীয়দের মতে আটের দশকের মাঝামাঝি সময়ে কৃষ্ণনগরের জগদ্ধাত্রী পুজোয় ঘট বিসর্জন-সহ শোভাযাত্রার শুরু। কেউ কেউ বলেন, স্থানীয় গোলাপট্টি সর্বজনীনের পুজোতেই প্রথম ঘট বিসর্জনের সূত্রপাত হয়েছিল। আর এক পক্ষের দাবি, চাষাপাড়া বারোয়ারির পুজোকমিটিই ঘট বিসর্জনের পথ প্রদর্শক। আবার একই দাবি করে আসছেন চৌরাস্তা বারোয়ারির সদস্যরাও। রাজবাড়ি যাওয়ার পথে চৌরাস্তা বারোয়ারির পুজো মণ্ডপ। তাই একটু ভৌগলিক সুবিধাও পেয়ে থাকে এই পুজোকমিটি। সঙ্গত কারণেই তাঁদের দাবিকে হেলাফেলার বিষয় নয়। এই প্রতিযোগিতায় পা বাড়িয়ে দিয়েছে কলেজ স্ট্রিট বারোয়ারি পুজোকমিটিও। এদিকে দাবি যাই উঠুক না কেন, ইতিমধ্যেই ঘট বিসর্জনকে অন্য মাত্রায় নিয়ে গিয়েছে হাতারপাড়া বারোয়ারি। দাবি যত বেড়েছে তত এই অনুষ্ঠানের শ্রীবৃদ্ধি ঘটেছে। একাধিক ট্যাবলো সহযোগে মঙ্গল ঘট বিসর্জনের বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা দেখতে এই একদিনেই উপচে পড়ে ভিড়। ঘট বিসর্জনের শোভাযাত্রায় ঠিক কত রকমের ট্যাবলো থাকছে। কোনও পুজো কমিটিই আগেভাগে তা নিয়ে মুখ খুলতে চায় না। শোভাযাত্রা বেরলেই দেখা যায় পুজোকমিটি গুলি চমক দিচ্ছে। কোন বারোয়ারির শোভাযাত্রায় কী ধরনের ট্যাবলো থাকছে, তা জানতে প্রতিযোগী পুজোকমিটি গুলি ওঁত পেতে থাকে। রবিবার বেলার দিকে শোভাযাত্রা বেরতেই, রণপা, ছৌ-নাচ, সার্জিক্যাল স্ট্রাইক, সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফের মতো বিভিন্ন বিষয় ভিত্তিক ট্যাবলোর দেখা মিলল এদিনের শোভাযাত্রায়।
এবারও ঘট বিসর্জনে নজর কাড়ল হাতারপাড়া সর্বজনীন। শোভাযাত্রাতে বৈচিত্র আনতে মতুয়া সম্প্রদায়ের হরিচাঁদ ঠাকুরের অনুগামীদের দলকে আমন্ত্রণ করা হয়েছে। সাজানো গোছানো পালকিতে চলল ঘট। পিছনে হাতারপাড়া সর্বজনীনের তৈরি সাদা কাপড়ে মোড়া বিরাটাকার হাতি নিয়ে এগিয়ে চলল ট্যাবলো। একে একে ঘট বিসর্জনের পালা সাঙ্গ হলেই শুরু হয় ভাসানের পর্ব।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.