সুনীপা চক্রবর্তী, ঝাড়গ্রাম: গভীর রাতে গ্রামে পরপর বাড়িতে কড়া নাড়ার শব্দ। সচকিত গ্রামবাসীরা। আবার কি তাহলে মাওবাদীরা ফিরে এল? আবার কি মিটিংয়ে যাওয়ার ডাক পড়ল? দ্বিধাগ্রস্ত গ্রামবাসীরা রাতের অন্ধকারে বাড়ির বাইরে পা রাখার সাহস দেখায়নি। ঘরের কোণে সেঁধিয়ে রইলেন। একটা নয়, গ্রামের পরপর বাড়িতে চলছিল একইভাবে দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ। গ্রামের নিচ পাড়ার এক ব্যক্তির বাড়ির দরজা ভাঙার শব্দে আর ঘরের ভিতরে থাকতে পারেননি বাসিন্দারা। সাহস করে বাড়ির বাইরে এসে সকলে যা দেখলেন, তা দেখে হকচকিয়ে যাওয়ার অবস্থা। দেখলেন, এক দল হাতি ততক্ষণে দরজা ভেঙে ঘরে মজুত রাখা সিদ্ধ ধান খেয়ে সাবাড় করে দিয়েছে। এহেন দৃশ্য দেখে রীতিমতো অবাক গ্রামের মানুষজন। ঝাড়গ্রাম জেলার জামবনি রেঞ্জের ভালুকা বিটের অধীন কুমরি গ্রামে এইভাবেই গভীর রাতে দলমা থেকে নেমে দশ থেকে পনেরোটি হাতি রাতভর গ্রামে পরপর বাড়িগুলির দরজায় ধাক্কা দিয়ে ঢোকার চেষ্টা করল। শেষ পর্যন্ত গ্রামের নিচ পাড়ায় গুরুপদ মাহাতোর বাড়ির দরজা ভেঙে তারা পাঁচ বস্তা সিদ্ধ ধান খেয়েছে বলে গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন। শেষে গ্রামবাসীদের তাড়া খেয়ে ধান এবং ভুট্টা জমির উপর দিয়ে হেলেদুলে গিরার জঙ্গলে ফিরে যায়। আবার পেটপুজোর পর ধান আর ভুট্টা জমির উপর দিয়েছে গড়াগড়ি। ফলে কৃষকদের জমির ধান, ভুট্টার একেবারে তছনছ অবস্থা।
বনদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, বেশ কিছুদিন ঝাড়গ্রাম ডিভিশনের বনাঞ্চলে দলমার কোনও হাতি ছিল না। গত শুক্রবার ঝাড়খণ্ডের দিক থেকে জামবনির চিচিড়া হয়ে দলমা দলের প্রায় পনেরোটি হাতি আবারও ঢুকে পড়ে জামবনি ব্লকে। চিচিড়া হয়ে ঝাড়গ্রাম ব্লকের পুকুরিয়া বিটের পিপড়ি, চাঁদাবিলা এলাকার জঙ্গলগুলিতে একদিন থাকার পর দলটি শনিবার রাতে ঢুকে পড়ে কুমরি গ্রামে। কুমরি গ্রামটি প্রায় পুরো জঙ্গলে ঘেরা। এই এলাকার জঙ্গলে দলমা হাতির দল প্রায়ই ঘাঁটি গেড়ে থাকে। কিছুদিন আগে নেকড়ে বাঘের আতঙ্ক ছিল।
সারা বছর ধরে এখন হাতির উপদ্রব। এই এলাকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পড়ুয়া, শিক্ষকরা রীতিমত জঙ্গল পথে বিদ্যালয় যেতে ভয় পান। তার উপর বেনাগেড়িয়া থেকে রামচন্দ্রপুর পর্যন্ত প্রায় সাত কিমি রাস্তা অত্যন্ত খারাপ। সব মিলিয়ে শনিবার রাত দেড়টা, দুটো নাগাদ হাতির দলের এইভাবে সদলবলে গ্রামে ঢুকে তাণ্ডব চালানোর ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন গ্রামবাসীরা।
শনিবার রাতের ঘটনার পর রবিবার সকালে ভালুকা বিটের বিট অফিসার সন্তোষ সর্দার গ্রামে পৌঁছে ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি দেখেন। কুমরি গ্রামের বাসিন্দা তথা শিক্ষক হরেন মাহাতো বলেন, “যেভাবে এক দল হাতি এসে গভীর রাতে গ্রামে পরপর বাড়ির দরজায় ধাক্কা দিয়েছে তাতে আমরা খুবই আতঙ্কিত হয়ে পড়েছি। প্রায় দশ-বারোটি ঘরে এই ভাবে পরপর ধাক্কা দেয়। এক জনের বাড়ির ধান খেয়ে নেয়। একেই জঙ্গল ঘেরা গ্রাম তার উপর গ্রামের রাস্তা এত খারাপ আর বলার নয়। নিত্যদিন গ্রামে হাতি ঢুকচ্ছে। আমাদের আরজি গ্রামে যাতে হাতি না ঢোকে তার ব্যবস্থা নিক বনদপ্তর।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.