ছবি: প্রতীকী
সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: টানা ১০ দিন ‘নিখোঁজ’ ছিল। হুলা পার্টি থেকে বনকর্মী – সকলেই ভেবেছিলেন, হয়ত ঝাড়খণ্ডে গা ঢাকা দিয়েছে। কিন্তু সোমবার সকালে সবার সব ভাবনা একেবারে ওলট-পালট করে দিল। অযোধ্যা পাহাড়তলির জঙ্গলে গা ঢাকা দেওয়া ওই দলছুট দাঁতাল একেবারে খামারবাড়িতে ঢুকে কৃষককে পা দিয়ে পিষে ‘খুন’ (Kill)করে ফেলল! রবিবার রাতে পুরুলিয়ার (Purulia) বলরামপুর বনাঞ্চলের বেড়ষা বিটের ওই গ্রামে ঘটে গেল এই হাড়হিম করা ঘটনা। মৃত কৃষকের নাম অনিল বেসরা, বয়স বাহান্ন বছর। তাঁর বাড়ি বেড়ষা গ্রামেই।
দলছুট দাঁতালের গর্জনে রাতেই ওই পাহাড়তলির বাসিন্দারা বুঝে গিয়েছিলেন ‘হাতিঠাকুর’ চলে এসেছে। কিন্তু এত বড় যে বিপদ হয়ে গিয়েছে, তা দুঃস্বপ্নেও ভাবতে পারেননি তাঁরা। রাতের দিকে ওই ‘খুনে’ দাঁতাল লোকালয় ছাড়লে এলাকার বাসিন্দারা ঘর থেকে বের হন। তারপরই কৃষক অনিল বেসরাকে খামারবাড়িতে নিথর অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে চমকে ওঠেন। কৃষক পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, মেঘলা আবহাওয়ায় ধানের যাতে ক্ষতি না হয়, তাই রাতেই সেই ধান ত্রিপল দিয়ে ঢেকে রাখছিলেন তিনি। সেই সময় হঠাৎ এই ঘটনা ঘটে যায়।
তাঁকে মৃত অবস্থায় দেখে বনদপ্তরকে খবর দেন প্রতিবেশীরা। খবর পৌঁছয় পুলিশে। পুলিশ ও বনকর্মীরা মিলে মৃতদেহ উদ্ধার করেন। রাতেই পুরুলিয়া বিভাগের এডিএফও অভিষেক চৌধুরী বলরামপুর বনাঞ্চলে চলে যান। বলরামপুর রেঞ্জার সুবিনয় পান্ডাকে নিয়ে হুলা পার্টি সমেত দলছুট দাঁতালটিকে ঘন জঙ্গলে পাঠানো হয়। রাতভর চলে এই ড্রাইভ। বলরামপুর বনাঞ্চল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ওই বুনো হাতিটি ব(Elephant) র্তমানে বেড়ষা পাহাড় চূড়ার জঙ্গলে রয়েছে।
এদিকে এই বনাঞ্চলের বলরামপুর বিটের ইছাডির জঙ্গলে থাকা হাতিটি কয়েকদিন আগে ঝাড়খণ্ড চলে গেলেও সেটি আবার এই বনাঞ্চল-সহ মাঠা বনাঞ্চল ঘুরে ফের বেড়ষার জঙ্গলেই হাজির হয়েছে। ফলে দুটি দলছুট দাঁতালকে নিয়ে এখন ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা বলরামপুর বনাঞ্চলের। পুরুলিয়া বিভাগের ডিএফও দেবাশিস শর্মা বলেন, “দলছুট দাঁতালগুলি যাতে লোকালয়ে না আসে, আমরা সেই চেষ্টা করছি। আসলে ধানের গন্ধেই লোকালয়ে চলে আসছে তারা।” ‘খুনে’ দলছুট দাঁতালটি প্রায় বছর খানেকের বেশি সময় ধরে এই বনাঞ্চলে রয়েছে। তবে মাঝে মধ্যে ঝাড়খণ্ডেও যায় গজরাজ।
বেশ কিছুদিন আগেই চাষের জমি থেকে আমন ধান কাটা হয়ে গিয়েছে। কাটা অবস্থায় পাকা ধান আর জমির পাশে নেই, চলে গিয়েছে খামারবাড়িতে। আর সেই কারণে হাতি খাবারের লোভে পাহাড়তলিতে নেমে চাষের জমিতে ফসল না পেয়ে ধানের গন্ধে একেবারে খামারবাড়িতেই ঢুকে যাচ্ছে। এলাকার মানুষজন বলছেন, এবার খামারবাড়িতেই সম্মিলিতভাবে মশাল নিয়ে রাত জাগতে হবে। তাছাড়া হাতির তাণ্ডব থেকে রক্ষা পাওয়ার আর কোনও উপায়ই নেই।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.