কৃষ্ণকুমার দাস: আমফানে সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত দুই ২৪ পরগনায় প্রয়োজন ৭২ হাজার বিদ্যুতের খুঁটি। সেখানে রাজ্য সরকারের হাতে ওই দুই জেলায় মজুত আছে মাত্র ১৯ হাজার।
আর এই দুই জেলায় গৃহস্থকে বিদ্যুতের ২২০ ভোল্টের লাইন সংযোগ দিতে প্রয়োজন অন্তত ১ লক্ষ ২০ হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ তার। কিন্তু দুই জেলার বিভিন্ন ডিভিশনের গোডাউনে সব মিলিয়ে মাত্র ১০/১১ হাজার কিলোমিটার তারের যোগান হতে পারে। খুঁটি ও তারের জোগান নিয়ে গভীর চিন্তায় বিদ্যুৎ দপ্তরের ইঞ্জিনিয়ররা।
প্রচুর পরিমাণে খুঁটি, তার ও ট্রান্সফারের জন্য শনিবারই ওড়িশা ও ঝাড়খণ্ড সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন নিগম। ঘূর্ণিঝড় সামলাতে সবসময় অতিরিক্ত খুঁটি ও তার মজুত রাখা ওড়িশা ও অন্ধ্রপ্রদেশ সরকারের কাছ থেকে জরুরি ভিত্তিতে পরিকাঠামো গড়তে এই সাহায্য নিচ্ছে রাজ্য সরকার। ভিন রাজ্য থেকে প্রায় ৫০ হাজার খুঁটি আনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শনিবার নবান্নে বলেছেন,“ওড়িশা ও ঝাড়খণ্ড থেকে খুঁটি ও অন্যান্য সরঞ্জাম আনতে বলেছি। ওদের ঘূর্ণিঝড়ের সময় আমরা সাহায্য করেছিলাম, এবার ওরা আমাদের করবে।” তবে যে সমস্ত জেলায় এবার ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব পড়েনি সেই মালদহ, দুই দিনাজপুর, পুরুলিয়া, বাকুঁড়া থেকে দক্ষ বিদ্যুৎকর্মীদের ক্ষতিগ্রস্ত জেলায় নিয়ে আসছে রাজ্য সরকার। দু’এক দিনের মধ্যেই ওই কর্মীরা হাওড়া ও দুই ২৪ পরগনার কাজ করবেন।
কিন্তু ঝড়ের চারদিন পরে ক্ষতিগ্রস্ত জেলায় লাইন পুনর্গঠন করতে গিয়ে প্রবল শ্রমিক সংকটে পড়েছেন বিদ্যুৎ কর্তারা। কারণ, রাজ্য বিদ্যুৎ বন্টন নিগমে যাঁরা ঠিকাদারের অধীনে মেন্টেন্সের কাজ করেন ঝড়ে তাঁদেরই অধিকাংশের ঘর-বাড়ি ধূলিসাৎ হয়ে গিয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবে অনেক শ্রমিকের পরিবারের সদস্যরা গুরুতর জখম হয়েছেন। তাঁদের হাসপাতালের ভরতি ও চিকিৎসা এখনও শুরু করা যায়নি বলে অভিযোগ। সুন্দরবন এলাকার এক বিদ্যুৎ কর্তা এদিন স্বীকার করেন, ঝড়ের পরদিন ফিডার মেরামতের কাজ চলছিল। আচমকা খবর এল, গাড়ি চালকের মায়ের পা ভেঙে গিয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে গাড়ির চাবি ফেলে কুলতলির ঝড়বিধস্ত গ্রামে ওই চালক চলে গিয়েছে।
বিদ্যুৎ ভবনে ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত পরিকাঠামো উদ্ধার নিয়ে শনিবার দুপুরে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক হয়। সেখানে মূল আলোচ্য বিষয় ছিল মালপত্রের পাশাপাশি এই শ্রমিকের জোগান। কারণ, গাছ কাটা ও সরানোর পাশাপাশি ২২০ ভোল্টের তার কাঁধে করে নিয়ে গিয়ে মেরামতে দক্ষ মিস্ত্রিদের হাতে দেওয়ার জন্য প্রয়োজন হয় ওই অদক্ষ শ্রমিকদের। মূলত এই অদক্ষ শ্রমিকরা আসে কুলতলি, বাসন্তী-গোসাবা এবং হিঙ্গলগঞ্জ ও বনগাঁ-বসিরহাট থেকে। কিন্তু সেই শ্রমিক জোগানের এলাকাই ঝড়ে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত। বস্তুত তাই কলকাতা বা জেলার বিদ্যুৎ মেরামত ফেলে তাঁরা নিজেদের ঘর সামলাতেই চলে গিয়েছেন। শ্রমিক সংকটে যে গাছ কাটা ও লাইন জোড়ার কাজ মন্থর হয়ে গিয়েছে, তা এদিন স্বীকার করেন বিদ্যুৎমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। অদক্ষ শ্রমিকদের একটা অংশ আবার সংখ্যালঘু হওয়ায় কাল থেকে ঈদের ছুটি হওয়ায় এখনই ফিরবে না। তাই জেলায় বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে সময় লাগবে। ইঞ্জিনিয়াররা অভিযোগ করেছেন, “কাজ করতে গেলে অনেক এলাকায় ক্ষুব্ধ জনতা শ্রমিক ও কর্মীদের মারধর করছে। টেনে অন্য পাড়ায় নিয়ে যাচ্ছে। বুঝতে চাইছেন না, শুধু ২২০ লাইন মেরামত করলেই হবে না, ৩৩ KV ও ১১ KV সাব স্টেশনও মেরামত করতে হবে। এমন সাব স্টেশন মেরামত না করা পর্যন্ত জেলায় জেলায় বিদ্যুৎ পরিষেবা স্বাভাবিক হবে না।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.