সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: বারাণসীর কনকদুর্গার আদলে সোনার দুর্গা থাকে ব্যাংকের লকারে। কিন্তু সেই দুর্গার দেড় মন রুপো দিয়ে তৈরি প্রায় কুড়ি লক্ষ টাকার চালচিত্র রয়েছে রাজপরিবারের অন্দরমহলেই। তাই মায়ের সেই চালচিত্রের নিরাপত্তায় থাকা বার্মিংহামের চুয়াত্তর বছরের পুরনো বন্দুককে এই ভোটের বাজারে জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে ছাড় দিল প্রশাসন তথা নির্বাচন কমিশন। যে বন্দুকের গুলিতে শিকার হয়েছে চিতল হরিণ, সম্বর হরিণ থেকে চিতা বাঘও!
পুরুলিয়ার জয়পুরের তৎকালীন রাজা জয়সিংহের রাজদরবার থেকে ১৯৭০ সাল নাগাদ ওই সোনার দুর্গা চুরির চেষ্টা করে দুষ্কৃতীরা। অষ্টধাতুর তৈরি রাধিকার মূর্তিকে সোনার দুর্গা ভেবে নিয়ে চলে যায় তারা। মরচে পড়া ভাঙা বাক্সের ভেতরে ওই দুর্গা থাকায় তা রক্ষা পায়। তারপর থেকেই পুলিশ প্রশাসনের নির্দেশে ওই দুর্গাকে রাখা হয় ব্যাংকের লকারে। ফি বছর পুজোর সময় পুলিশ স্কটে মা দুর্গাকে নিয়ে আসা হয়। তারপর পুলিশ প্রহরাতেই চলে জয়পুর রাজপরিবারের দুর্গাপুজো। তাই অতীতের ঘটনাকে মাথায় রেখে ওই সোনার দুর্গার চালচিত্র রক্ষার্থে ওই বন্দুককে ভোটের আগে জমা নিতে চায়নি প্রশাসন।
স্রেফ মায়ের চালচ্চিত্রের জন্য লোকসভা নির্বাচনের সময় এভাবে রাজপরিবারের বন্দুকে ছাড় রাজ্যে কার্যত নজিরবিহীন। তবে পুরুলিয়ার জেলাশাসক তথা জেলা নির্বাচনী আধিকারিক রাহুল মজুমদার বলেন, “ওই রাজপরিবারের তরফে ডিস্ট্রিক্ট স্ক্রিনিং কমিটির কাছে আবেদন জমা পড়েছিল। সেই আবেদনের ভিত্তিতে ওই কমিটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে।”
[ আরও পড়ুন: ময়দানে মোদি-মমতা, বুধবার থেকে বাংলায় নির্বাচনী প্রচারের ঝড় ]
গ্রেট ব্রিটেনের তৈরি স্লেফ লোডিং ফাইভ শট বারো বোরের বিদেশি এই একনলা বন্দুক এরাজ্যে এখন আর সেভাবে চোখে পড়ে না। দেশের স্বাধীনতার আগে ইংল্যান্ডের বার্মিংহাম থেকে এই বন্দুক কিনেছিল ওই রাজপরিবার। ওই রাজপরিবারের সদস্য বীরেন্দ্রনারায়ন সিং দেও-র নামে এই বিদেশী বন্দুকের লাইসেন্স ছিল। ১৯৯৫ সাল নাগাদ সেই লাইসেন্স পরিবর্তিত হয় তাঁর ছেলে শংকরনারায়ণ সিং দেও-র নামে। কিছুদিন আগে ওই রাজপরিবারের সদস্য বীরেন্দ্রনারায়ন সিং দেও মারা যান। ফলে ওই বিদেশী বন্দুকের মালিক এখন শংকরনারায়ন সিং দেওই। আজও তিনি সন্ধ্যার পর বন্দুক হাতে বর্তমান রাজবাড়ির পাশে টহল দেন। অন্দরমহলেই যে আছে মা উমার রুপোর চালচ্চিত্র। তাই নিয়ম করে চলে তাঁর টহলদারি।
এই রাজপরিবারের সোনার দুর্গার ইতিহাস যেমন পরতে-পরতে সোনায় মোড়া। ঠিক তেমনই এই বন্দুকের ইতিহাসও নানা উপাখ্যানে স্মৃতি বিজড়িত। এই বন্দুক দিয়ে যে ওড়িশার কালাহান্ডির জঙ্গলে এই রাজপরিবারের সদস্যরা অতীতে অর্থাৎ বন্যপ্রাণ সংরক্ষণ আইনের আগে চিতা বাঘ, চিতল হরিণ, সম্বর হরিণের শিকার করেছিলেন। ফলে ফি দিন সন্ধ্যার আগে ঠাকুরদালানে টহল দেওয়ার আগে এই বন্দুক পরিষ্কার করেন রাজপরিবারের বর্তমান সদস্য তথা এই বন্দুকের মালিক শংকরনারায়ণ। আর এই কাজে তাঁকে সাহায্য করেন তাঁর স্ত্রীও। সন্ধ্যার পর ওই ঠাকুরদালানে টহল দেওয়ার পরই একান্ত আলপচারিতায় প্রৌঢ় শংকরনারায়ণ বলছিলেন, “মেড ইন গ্রেট ব্রিটেনের এই বন্দুক বার্মিংহাম থেকে কেনা। স্লেফ লোডিং ফাইভ শট এই বন্দুক এখন আর সেভাবে দেখা যায় না। অন্তত এরাজ্যে মিলবে না। বর্তমানে এই বন্দুকের দাম প্রায় চার লক্ষ টাকা। আমাদের পরিবারের নিরাপত্তায় এই বন্দুক কেনা হয়। এবার সেই বন্দুক লোকসভা ভোটের জন্য থানায় জমা করার নোটিস আসায় আমরা হতবাক হয়ে যায়। প্রথমে জয়পুর থানা তারপর জেলাশাসকের কাছে সরাসরি আবেদন করলে বন্দুক জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে ছাড় মেলে।”
ছবি- অমিত সিং দেও
[ আরও পড়ুন: চা শ্রমিক থেকে বিজেপির সম্ভাবনাময় প্রার্থী, চমকপ্রদ উত্থানে নজর কাড়ছেন জন বারলা ]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.