গয়না খুইয়ে থানায় অর্চনা মাঝি।
সন্দীপ মজুমদার, উলুবেড়িয়া: ভাইপোর কাছে যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন। তবে গন্তব্যে পৌঁছানোর আগে রাস্তার মাঝে প্রৌঢ়ার সর্বস্ব লুটের ঘটনা ঘটল উলুবেড়িয়ায়। কেপমারির কায়দায় প্রৌঢ়ার সোনার গয়না হাতিয়ে নিয়ে চম্পট দিল দুষ্কৃতীরা। খোয়া যাওয়া গয়নার আনুমানিক বাজার মূল্য ৯০ হাজার টাকা। শনিবার চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটেছে উলুবেড়িয়ার গরুহাটার কাছে।
জানা গিয়েছে, খোয়া যাওয়া গয়নাগুলি ছিল উলুবেড়িয়ার কালীনগরের বাসিন্দা অর্চনা মাঝির গায়ে। শনিবার সকালে তিনি ভাইপো রণজিৎ কাঁড়ারের কাছে যাওয়ার মনস্থ করেন। সেইমতো বেলা সাড়ে দশটা নাগাদ ভাইপোর বাড়ির উদ্দেশে রওনা হয়ে যান। রণজিৎ বাউড়িয়া এলাকার বুড়িখালিতে থাকেন। এদিন স্থানীয় গরুহাটার কাছে অটো ধরার জন্য দাঁড়িয়েছিলেন ওই প্রৌঢ়া। সেই সময় এক যুবক তাঁকে একটি টাকার বান্ডিল দেখিয়ে জানান, তিনি এটি কুড়িয়ে পেয়েছেন। টাকার বান্ডিলটি অর্চনাদেবীর কি না তিনি জানতেও চান। অর্চনাদেবী না বলতেই পাশের গলিতে ঢুকে যান ওই যুবক। এর মিনিট দুয়েকের মধ্যেই ওই গলি থেকেই এক মধ্যবয়স্ক ব্যক্তি বেরিয়ে আসেন। সোজাসুজি প্রৌঢ়ার কাছে এসে বলেন, তাঁর টাকার বান্ডিল চুরি গিয়েছে। এক যুবক সেই বান্ডিলটি চুরি করে পালিয়েছে। অর্চনাদেবীর পুরনো কথা মনে পড়ে যায়। তিনি জানান, কিছুক্ষণ আগেই এক যুবক তাঁকে টাকার বান্ডিল দেখিয়ে পাশের গলিতে চলে গিয়েছেন। প্রৌঢ়ার মুখের কথা খসতে না খসতেই পাশের গলিতে অদৃশ্য হন ওই ব্যক্তি।
এদিকে দীর্ঘক্ষণ অটো না আসায় রীতিমতো বিরক্ত অর্চনাদেবী দেখেন সেই ব্যক্তি ফিরে এসেছেন। সঙ্গে করে এনেছেন সেই যুবককে। প্রায় যেচে পড়েই তাঁকে জানানো হয় হারানো টাকার বান্ডিল ফিরে পাওয়া গিয়েছে। ফের যাতে না হারায় তাই বান্ডিলটি তাঁর কাছে গচ্ছিত রাখতে চান ওই ব্যক্তি। শোনামাত্রই না করে দিয়েছিলেন প্রৌঢ়া। তবে প্রৌঢ়ার না শুনতে নারাজ দুজন তাঁকে একপ্রকার জোর করেই পাশের গলিতে নিয়ে যান। এদিকে গরুহাটার প্রধান রাস্তায় লোক চলাচল করলেও গলিতে তেমন একটা ভিড় নেই। সেখানে পৌঁছানোর পর কথায় কথায় প্রৌঢ়ার হাতের দিকে নজর যায় ওই ব্যক্তির। তিনি প্রায় আঁতকে উঠে বলেন, নকল গয়না পড়ে আছেন। হকচকিয়ে যান অর্চনাদেবী। নিজেরই হাতের দিকে তাকিয়ে থাকেন। প্র্রৌঢ়া যে দোটানায় পড়েছেন তা বুঝতে বাকি ছিল না ওই দুজনের। সঙ্গে সঙ্গেই তারা ফন্দি আঁটে। নকল গয়না পরা শরীরের জন্য ক্ষতিকর বুঝিয়ে তাঁর হাত থেকে সোনার চার গাছা চুড়ি, গলার হার, কানের দুল ও আংটি খুলে নেয়। হতবাক প্রৌঢ়াকে অবাক করে দিয়ে তারা বলতে থাকে, এসব নকল গয়না পরার দরকার নেই ব্যাগে রেখে দিন। বলে নিজেরাই তাঁর ব্যাগে ঢুকিয়ে দেয়। কয়েক মুহূর্তেই মধ্যেই গলিতে নিজেকে ছাড়া আর কাউকেই দেখতে পাননি অর্চনাদেবী। কেমন সন্দেহ হওয়ায় ব্যাগ খোলেন। দেখেন, সেখানে গয়না দূরে থাক, একটি টাকাও নেই। বদলে টুকরো কাগজের একটি বান্ডিল রয়েছে। বুঝতে পারেন, ভুলিয়ে ভালিয়ে তাঁর গয়না ছিনতাই করে পালিয়েছে দুই দুর্বৃত্ত। এরপর ভাইপোর বাড়ি যাওয়া স্থগিত রেখে উলুবেড়িয়া থানায় গিয়ে অভিযোগ দায়ের করেন।
পুলিশ জানিয়েছে, প্রৌঢ়ার গায়ে ৯০ হাজার টাকার গয়না ছিল। ছিনতাইকারীরা তাঁকে একা পেয়েই ফাঁদ পাতে। তারপর নানা কথায় ভুলিয়ে তাঁকে ধাঁধাগ্রস্ত করে ফেলে। প্রৌঢ়া যখন বুঝেই উঠতে পারছেন না কাকে ছেড়ে কার কথা শুনবেন, তখনই গয়না হাতিয়ে নিয়ে ভাল মানুষটি সেজে দু’জনে উধাও হয়। কেপমারির অভিযোগ দায়ের হয়েছে। গোটা ঘটনাটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.