রাজকুমার, আলিপুরদুয়ার: স্বামী ও পাঁচ সন্তানকে নিয়ে ভরা সংসার ছিল। কিন্তু স্বামীর মৃত্যুর ছেলেমেয়েরা আর তাঁকে দেখেন না। চরম অবহেলা, অনাদরে দিন কাটছে ষাটোর্ধ্ব এক মহিলার। এমনকী, রোজ খাবারও জোটে না তাঁর। এমনই হৃদয়বিদারক ঘটনার সাক্ষী আলিপুরদুয়ার।
স্বামী সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে চাকরি করতেন। বছর দশেক আগে প্রয়াত হন তিনি। আলিপুরদুয়ার শহর লাগোয়া দক্ষিণ জিতপুর এলাকায় স্বামীর বাড়িতেই থাকেন মিলন পণ্ডিত। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছে, ওই দম্পতির তিন মেয়ে ও দুই ছেলে। মেয়েদের সকলেরই ভাল ঘরে বিয়ে হয়েছে। বড়ছেলে মানসিক ভারসাম্যহীন, দীর্ঘদিনই বাড়িছাড়া তিনি। আর ছোট ছেলে স্ত্রীকে নিয়ে থাকেন হাসিমারায়। পাড়া-প্রতিবেশীদের দাবি, যতদিন স্বামী বেঁচে ছিলেন, ততদিন মিলনদেবীর সংসারে কোনও অভাব ছিল না। কিন্তু মেয়েরা তো দূর অস্ত, বাবার মৃত্যুর পর মা-কে আর দেখেন না ওই বৃদ্ধার ছোট ছেলেও। পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে, পাড়া-প্রতিবেশী না দিলে খাবার জোটে না।
অযত্নে, অবহেলায় ইদানিং আবার কিছুটা মানসিক ভারসাম্যও হারিয়েছেন মিলনদেবী। প্রতিবেশীরা বলছেন, খিদের জ্বালায় প্রতিদিন সকালে প্রায় অর্ধনগ্ন হয়ে চিৎকার করতে থাকেন। তাঁরা চান, ছেলেমেয়ে যদি একান্তই দেখতে রাজি না হন, তাহলে ওই অসহায় বৃদ্ধাকে উদ্ধার করে হোমে রাখার বন্দোবস্ত করুক প্রশাসন।
কিন্তু স্বামী তো সরকারি চাকরি করতেন। মিলনদেবী কি স্বামীর পেনশনটাও পান না? প্রতিবেশীদের বক্তব্য, পেনশন তোলার দিন নিয়ম করে হাসিমারা থেকে আলিপুরদুয়ার শহরে চলে আসেন ওই বৃদ্ধার ছোট ছেলে ও বউমা। নতুন পাটভাঙা শাড়ি পরিয়ে মিলন পণ্ডিতকে ব্যাংকে নিয়ে যান তাঁরা। ওই বৃদ্ধার পেনশনের টাকায় হোটেলে খাওয়াদাওয়া করে ফের হাসিমারায় ফিরে যান ছেলে-বউমা। শুধু তাই নয়, মিলনদেবীর পেনশনের টাকাও তাঁর ছেলেই নিয়ে নেয় বলেও অভিযোগ। যদিও ছেলে জ্যোতিষ পণ্ডিতের দাবি, ‘মা-কে হোমে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কিন্তু এতদিন ঠিকানা খুঁজে পাচ্ছিলাম না।’
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.