Advertisement
Advertisement
TMC

তৃণমূল নেতাকে ‘গাধা’ বলায় ‘জুতোপেটা’! বৃদ্ধার মৃত্যু বর্ধমানে

পঞ্চায়েত সদস্যকে ফাঁসানো হয়েছে বলে পালটা দাবি তৃণমূলের।

Elderly woman died as TMC leader allegedly beat her in Bardhaman

প্রতীকী ছবি

Published by: Paramita Paul
  • Posted:July 1, 2024 10:32 pm
  • Updated:July 1, 2024 10:32 pm  

ধীমান রায়, কাটোয়া: সদ্য ১৮ পূর্ণ করা তরুণী প্রেম করে এক যুবকের হাত ধরে পালিয়ে গিয়েছেন পাশের গ্রামে। তরুণীর পরিবারের লোকজন ওই যুবকের বাড়িতে গিয়ে তাঁকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু যুবকের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়ে পড়েন এলাকার পঞ্চায়েত সদস্য। ‘প্রভাবশালী’ ওই পঞ্চায়েত সদস্য তরুণীর বাবা,মাকে রীতিমতো হুমকি দিয়ে হঠিয়ে দেন। তাঁর ওই আচরণ দেখে থাকতে পারেননি তরুণীর দিদিমা। তিনি মুখ ফসকে বলে ফেলেছিলেন ‘গাধা কোথাকার, তোমার বাড়ির মেয়ে হলে এটা কি করতে পারতে?” আর এলাকার নেতাকে ‘গাধা’ বলার অপরাধে পায়ের জুতো খুলে পেটানোর অভিযোগ উঠেছে পূর্ব বর্ধমান জেলার কেতুগ্রামের সীতাহাটি পঞ্চায়েতের এক তৃণমূল সদস্যের বিরুদ্ধে। মারের পরেই প্রহৃত বৃদ্ধার মৃত্যু হয়।

এই ঘটনায় পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ দায়েরের পর অভিযুক্ত পঞ্চায়েত সদস্যকে গ্রেপ্তার করল পুলিশ। পুলিশ জানায়, ধৃতের নাম বিশ্বজিৎ আচার্য। কেতুগ্রামের নৈহাটি গ্রামে তাঁর বাড়ি। রবিবার রাতে বাড়ি থেকেই তাঁকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। সোমবার ধৃতকে কাটোয়া মহকুমা আদালতে তোলা হলে তাকে ১৪ দিনের জন্য জেল হেফাজতের নির্দেশ দেওয়া হয়।

Advertisement

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কেতুগ্রাম ২ ব্লকের সীতাহাটি পঞ্চায়েতের এনায়েতপুর এবং নৈহাটি পাশাপাশি গ্রাম। এনায়েতপুর গ্রামের বাসিন্দা গৃহবধূ ইতি দাস এই ঘটনার অভিযোগকারী। ইতিদেবীর স্বামী দীপকবাবু প্রান্তিক কৃষক। তাঁদের দুই মেয়ের মধ্যে বড় মেয়ে পূজা একবছর উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়। ছোট মেয়ে ক্লাস ওয়ানের ছাত্রী। ইতিদেবী জানিয়েছেন, রবিবার দুপুর একটা নাগাদ পূজা বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়ে যায়। এর পর বাড়ির লোকজন খোঁজাখুঁজি করতে থাকেন। তার পর ইতিদেবী খবর পান তাঁর মেয়ে পাশের নৈহাটি গ্রামের বাসিন্দা অর্জুন দেবনাথের ছেলে অভি দেবনাথের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে তাঁদের বাড়িতেই চলে গিয়েছে। ইতি দাস বলেন,”এর পর আমি, আমার স্বামী, ভাসুর,প্রতিবেশী এক মহিলা, ছোট মেয়ে, সবাই মিলে অর্জুন দেবনাথের বাড়িতে যাই। ওখানে গিয়ে বুঝতে পারি পূজা ওদের বাড়িতেই রয়েছে। কিন্তু অর্জুন ও তাঁর বাবা আমার মেয়ের সঙ্গে কিছুতেই কথা বলতে দিতে চাইছিল না। তখন ওই গ্রামের পঞ্চায়েত সদস্য বিশ্বজিৎ আচার্য চলে আসে। সেও আমাদের হুমকি দিয়ে বলে বাড়ি চলে যেতে। মেয়ের সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হবে না।”

[আরও পড়ুন: ‘এক আকেলা সব পর ভারি পরা’, মোদিকে বিঁধে লোকসভায় ঝাঁজালো কামব্যাক মহুয়ার]

ইতিদেবী জানিয়েছেন, স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য ওই পরিবারের পাশে দাঁড়িয়ে যাওয়ার পর আর নৈহাটি গ্রামের কেউ মুখ খোলেনি। তাই তারা বাড়ি চলে আসছিলেন। টোটোয় চড়ে একটু এগিয়ে আসার সময় পথেই দেখা ইতিদেবীর মা বিন্দুবালা মজুমদারের সঙ্গে। ঘটনাক্রমে রবিবার বিকেলে হুগলির জিরাটে নিজের বাড়ি থেকে মেয়ের বাড়িতে আসছিলেন বিন্দুবালা দেবী। ইতি দাসের কথায়, “মা আমার কাছে ঘটনার কথা শুনে আমাদের বলেন,’চল তো আমি একবার ওদের বাড়ি যাই।’ মায়ের কথায় আমরা আবার যাই। তখনও বিশ্বজিৎ আচার্য আমাদের সামনে এসে গালিগালাজ করতে থাকে। তার ওই রূপ দেখে মা বলে ফেলেন,”গাধা কোথাকার, তোমার বাড়ির মেয়ে হলে কী করতে? একথা বলার পরেই বিশ্বজিৎ আচার্য মাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে পায়ের জুতো খুলে বুকে সজোরে আঘাত করে। মা আর উঠতে পারেননি। তার পর মৃত্যু হয়।”

জানা গিয়েছে বিন্দুবালা দেবী(৬২)কে তড়িঘড়ি উদ্ধার করে কাটোয়া হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। এর পর রাতেই বিশ্বজিৎ আচার্য, অর্জুন দেবনাথ এবং অভি দেবনাথের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেন ইতিদেবী। রাতেই বিশ্বজিৎ আচার্যকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। বাকি দুজন অবশ্য পলাতক বলে জানা গিয়েছে। এই ঘটনা ঘিরে রাজনৈতিক মহলেও চাঞ্চল্য ছড়ায়। যদিও কেতুগ্রাম ২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি বিকাশ বিশ্বাস বলেন, “শুনেছি ওই বৃদ্ধার হার্টের সমস্যা ছিল। ঝগড়াঝাঁটির পর হৃদরোগে মৃত্যু হয়েছে। আমাদের পঞ্চায়েত সদস্যকে ফাঁসানো হয়েছে।”

[আরও পড়ুন: ন্যায় সংহিতায় বাড়ল পুলিশি হেফাজতের মেয়াদ? কী বলছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement