বিপ্লব দত্ত, কৃষ্ণনগর: বার্ধক্যজনিত নানা রোগের ভুগছেন৷ রক্তে শর্করার মাত্রাও নিম্মমুখী৷ ৬৯ বছরের এক বৃদ্ধাকে হাসপাতালে ভরতি করেছিলেন বাড়ির লোকেরা৷ কিন্তু, চিকিৎসার বদলে জুটল নির্মম অত্যাচার! রাতভর ওই বৃদ্ধাকে হাত-পা বেঁধে আয়ারা হাসপাতালের মেঝেতে ফেলে রাখেন বলে অভিযোগ৷ পরিবারের লোকেদের দাবি, যন্ত্রণার কাতরালেও, রোগীর দিকে ফিরেও তাকাননি কর্তব্যরত নার্স ও ডাক্তাররা৷ অমানবিক ঘটনাটি ঘটেছে নদিয়ার রানাঘাট মহকুমা হাসপাতালে৷ এদিকে আবার দু’দিন ধরে হাসপাতালে আসছেন না সুপার৷ তাই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগও জানাতে পারেননি রোগীর পরিবারের লোকেরা৷
[ট্রেনের ধাক্কায় যুবকের মৃত্যু, প্রতিবাদে মেচেদা স্টেশনে রেল অবরোধ স্থানীয়দের]
ওই বৃদ্ধার নাম রাধা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ বাড়ি রানাঘাট শহরের পাইকপাড়ায়৷ বার্ধক্যজনিত সমস্যা তো ছিলই, রক্তে শর্করার পরিমাণ কমে গিয়েছিল৷ সোমবার সকালে রাধাদেবীকে রানাঘাট মহকুমা হাসপাতালে ভরতি করেন তাঁর ছেলে পা্র্থ বন্দ্যোপাধ্যায়৷ সেদিন রাতে হাসপাতালেই ছিলেন তিনি৷ মঙ্গলবার সকাল বৃদ্ধা মাকে দেখভালের জন্য হাসপাতালেরই এক আয়াকে নিয়োগ করেন পার্থ৷ বিকেলে হাসপাতালে গিয়ে রাধাদেবীকে দেখেও এসেছিলেন৷ পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ, ‘মা কেমন আছেন, তা নিয়ে চিন্তায় ছিলাম৷ বুধবার ভোর সাড়ে ছ’টা নাগাদ হাসপাতালে যাই আমি ও আমার স্ত্রী৷ দেখি, মেঝেতে দু’টি বেডের মাঝে শুয়ে আছে মা৷ ব্যান্ডেজের দড়ি দিয়ে হাত ও বা বাঁধা৷ আর যে আয়াকে দায়িত্ব দিয়েছিলাম, সে তখন অন্য রোগীদের দেখভাল করছে৷’ তাঁর দাবি, রাতভর যন্ত্রণার কাতরালেও, ওই বৃদ্ধার হাত-পায়ের বাঁধন খুলে দেওয়া হয়নি৷ এমনকী, যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে যখন তিনি চিৎকার করছেন, তখন ওই বৃদ্ধাকে আয়া মারধর করেছে বলে অভিযোগ৷ রোগীর দিকে ফিরেও তাকাননি রানাঘাট মহকুমা হাসপাতালে কর্তব্যরত নার্স ও চিকিৎসকরাও৷
এ রাজ্যে সরকারি হাসপাতালে খাতাকলমে আয়া নিষিদ্ধ৷ কিন্তু, রোগীদের দেখভালের জন্য এখনও আয়াদের উপরই ভরসা করেন পরিবারে লোকেরা৷ স্বাভাবিকভাবেই তাঁদের এই কাণ্ড দেখে ক্ষোভে ফেটে পড়েন রাধা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিবারের লোকেরা৷ পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, আয়ারা বলেছে, রাতে ওই বৃদ্ধা নাকি তাঁদের অত্যন্ত বিরক্ত করছিলেন৷ তাই বাধ্য হয়েই তাঁকে বেঁধে রাখা হয়৷ এমনকী, রাধা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ছুটি করিয়ে হাসপাতাল থেকে নিয়ে চলে যেতেও বলা হয়৷ রানাঘাট মহকুমা হাসপাতালের সুপারের কাছে অভিযোগ জানাতে গিয়েছিলেন পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায়৷ কিন্তু, গত দু’দিন ধরে হাসপাতালে আসছেন না সুপার৷ তবে অভিযোগটি অবশ্য গ্রহণ করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ৷ ফোনে যোগাযোগ করা হলেও, এই ঘটনা নিয়ে কিছু বলতে চাননি সুপার৷ এখন বৃদ্ধা শাশুড়িকে দেখভালের জন্য হাসপাতালে থাকছেন পুত্রবধূ সোমা বন্দ্যোপাধ্যায়৷
ছবি: সুজিত মণ্ডল
[মুশকিল আসান যোগাভ্যাস, প্রাক্তন কর্মীদের সাহসিকতায় বন্ধ চুরি-চামারি ]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.